সাকিবের ঝড়ো ইনিংসে বরিশালের রানের পাহাড়
বিপিএলের নবম আসরে প্রথম দিনের প্রথম ম্যাচ ছিল লো-স্কোরিং। পরের ম্যাচ আবার হয়েছে হাই স্কোরিং। দ্বিতীয় দিনও হয়েছে তাই। প্রথম ম্যাচ লো-স্কোরিং হওয়ার পর দ্বিতীয় ম্যাচ হয়েছে যথারীতি বড় সংগ্রহ। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে মাশরাফির সিলেট স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে ব্যাট করতে নেমে সাকিবের ফরচুন বরিশাল করেছে ৭ উইকেটে ১৯৪ রান।
এবারের বিপিএলে এটি এখন পর্যন্ত দলগত এটাই সর্বোচ্চ। আগের দিন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বিপক্ষে রংপুর রাইডার্স ৫ উইকেটে করেছিল ১৭৬ রান।
বরিশালকে রানের চূড়ায় নিয়ে যান সাকিব আল হাসান। ম্যাচের আগের দিন প্রথমবারের মতো অনুশীলন করে বিপিএল খেলতে নেমে সাকিব নিজের জাত চেনান আরেকবার। ২৬ বলে তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। পরে খেলেন ৩২ বলে ৬৭ রানের ইনিংস। এবারের আসরে প্রথম হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বিপক্ষে রংপুর রাইডোর্সের রনি তালুকদার। তিনি ১৯ বলে করেছিলেন হাফ সেঞ্চুরি। পরে ৩১ বলে খেলেছিলেন ৬৭ রানের ইনিংস। সাকিব ১ বল বেশি খেলে ৩২ বলে খেলে রনির সমান করেন ৬৭ রনে ইনিংস। ৬৬ রানে মোহাম্মদ আমিরের বলে তিনি একবার জীবনও পান। পরে আউট হন মাশরাফির বলে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে মোহাম্মদ আমিরের হাতে।
বরিশালের ব্যাটসম্যানদের এমন আগ্রাসী ব্যটিংয়ের সামনে পড়ে আগের দিন বল হাতে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে দাপট দেখানো সিলেটের বোলাররা ছিলেন রীতিমতো অসহায়। ৪ ওভারে ১৪ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হওয়া রেজাউর রহমান রাজা আজ ৪ ওভার ৩২ রান দিয়ে উইকেট নেন মাত্র ১টি। ৩৮ রান দিয়ে ২ উইকেট নেয়া মাশরাফি আজ ৩ উইকেট নিলেও রান দেন ৪৮। সবচেয়ে কম রান দেন ইমাদ ওয়ানিম ৬ ওভারে ২৭। উইকেট নেন ১টি।
এনামুল হক বিজয় ও চাতুরাঙ্গা ডি সিলভা উদ্বোধনী জুটিতে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন বরিশালকে। ৮ ওভারে সংগ্রহ করেন ৭৩ রান। ব্যাটিং পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে রান আসে বিনা উইকেটে ৫৪। এই ৬ ওভারে রান সংগ্রহ হয় যথাক্রমে ১৫ (বোলার মাশরাফি), ২ (মোহাম্মদ আমির), ৮ (ইমাদ ওয়াসিম), ৬ (মোহাম্মদ আমির), ১৩ (ইমাদ ওয়াসিম) ও ৫ (রেজাউর রহমান রাজা)।
বরিশালের রান সংগ্রহের গতি বজায় ছিল ব্যাটিং পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পরও। থিসারা ডি সিলভার করা সপ্তম ওভারেও রান আসে ১১। দুই ব্যাটসম্যানের রানের গতি আটকাতে অবশেষে মাশরাফিই এগিয়ে আসেন। প্রথম ওভারে বেধড়ক মার খাওয়ার পর দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসেই এনামুল হক বিজয়কে আউট করেন।
ডিপ মিড উইকেটে তার ক্যাচ ধরেন কলিন অ্যাকারম্যান। এনামুল ২১ বলে ১ ছক্কা ও ২ চারে ২৯ রান করেন। পরের ওভারে ফিরে যান চাতুরঙ্গা ডি সিলভা। ইমাদের করা তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই তিনি উইকেটের পেছনে মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ দেন। তার ২৫ বলে ৩৬ রানের ইনিংস ছিল ২ ছক্কা ও ৪ বাউন্ডারি।
২ ওভারে ব্যবধানে দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে দেওয়ার পর বরিশালের রান সংগ্রহে কিন্তু ভাটা পড়েনি। সাকিব এসে শুরু থেকেই ছিলেন আক্রমণাত্বক। কলিন অ্যাকারম্যান বল হাতে নেওয়ার পরই সাকিবের তোপে পড়েন। ২ ছক্কায় সাকিব তুলে নেন ১৬ রান। ১১ ওভারে পৌঁছে যায় একশতে (১০২/২)।
সাকিবের মারমুখি ব্যাটিং দেখে কিছুটা নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকা ইফতেখার আহমেদও আক্রমণাত্বক হয়ে উঠেন। মাশরাফি তৃতীয় স্পেলে বল করতে আসার পর ইফতেখার চড়াও হন তার উপর। ওভারের দ্বিতীয় বলে ছক্কা হাঁকানোর পর পরের বলেও ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে এক্সটা কাভারে রেজাউর রহমান রাজার হাতে ধরা পড়েন। ১০ বলে ১টি করে চার ও ছক্কা মেরে ১৪ রান করেন তিনি।
রান সংগ্ররে যে আগ্রাসী মনোভাব দেখান বরিশালের ব্যাটসম্যানরা, সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে মাহমুদউল্লাহ এসেও আগ্রাসী হয়ে উঠেন। মাশরাফির সেই ওভারের ৩ বল খেলে ১ ছক্কায় ৯ রান আদায় করে নেন। একটি করে চার ও ছক্কা মেরে তিনি ১১ বলে ১৯ রান করে থিাসারা বলে ছক্কা মারতে গিয়ে ডিপ পয়েন্টে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ধরা পড়েন। জুটিতে ৩.১ ওভারে রান আসে ৩০। ওভার প্রতি ৯.২৬ করে সংগ্রহ করে ১৫ ওভার শেষে বরিশালের রান ছিল ৪ উইকেটে ১৩৯।
শেষ ৫ ওভারে তারা সংগ্রহ করে ৫৫ রান। তবে প্রথম ২ ওভারে তারা সংগ্রহ করেছিল ৩৪ রান। শেষ ৩ ওভার টেক দেওয়াতে রান দুইশ অতিক্রম করতে পারেনি। বরিশাল এ সময় রান সংগ্রহ করে যথাক্রমে ১৬ ওভারে ১৩ (রেজাউর রহমান রাজা), ১৭ ওভারে ২১ (থিসারা)। এ সময় সাকিব ২৬ বলে ৩ ছক্কা ও ৫ বাউন্ডারিতে তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। ১৮ ওভারে ৩ (রেজাউর), ১৯ ওভারে ৯ (মোহাম্মদ আমির) ও ২০ ওভারে ১১ (মাশরাফি) রান আসে।
এমপি/এমএমএ/