পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ডের রোমাঞ্চকর ড্র

ক্রমশই ছোট হচ্ছে ক্রিকেট ম্যাচের পরিধি। নামতে নামতে টি-টেনে নেমে গেছে ব্যাট-বলের লড়াই। আধুনিক ক্রিকেটে ছোট পরিধির ম্যাচ যতই উত্তেজনা ছড়াক, হারিয়ে যাবে না পাঁচদিনের টেস্টের রোমাঞ্চ- এমনটা আরও একবার প্রমাণিত হলো করাচিতে। প্রমাণ করল পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড।
করাচি ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে যদিও ড্র করেছে দুই দল, তবে উপহার দিয়েছে রোমাঞ্চকর এক লড়াই। বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের হারের শঙ্কায় শেষ হয়েছিল চতুর্থ দিনের খেলা। অথচ টেস্টের পঞ্চম ও শেষ দিনে তারাই জয়ের স্বপ্ন দেখছিল সরফরাজ আহমেদের সেঞ্চুরিতে।
দিনের শেষভাগে সরফরাজ আউট হতেই আবার জয়ের পাল্লা ঝুঁকে পড়ে নিউজিল্যান্ডের দিকে। স্বাগতিকদের নবম ব্যাটার হিসেবে ৮৬.৩ ওভারে আউট হন সরফরাজ। তখনো দিনের ৪.৩ ওভারের খেলা বাকি ছিল। জয়ের জন্য ২৭ বলে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ৩৫ রান, নিউজিল্যান্ডের এক উইকেট।
কঠিন পরিস্থিতিতেও ডিফেন্সিং ক্রিকেটে ঝুঁকে পড়েননি নাসিম শাহ এবং আবরার আহমেদ। দশম উইকেটে দুজনের ২১ বলের জুটিতে দলের খাতায় যোগ হয় আরও ১৭ রান। শেষ ওভারে তাদের প্রয়োজন ছিল ১৫ রান। কিন্তু শেষ ৬ বলের রোমাঞ্চ মিলিয়ে যায় অন্ধকারে।
আলোক স্বল্পতার কারণে এক ওভার বাকি থাকতেই টেস্টের সমাপ্তি টানেন আম্পায়াররা। এই সিদ্ধান্তে সায়ও দেন দুই অধিনায়ক- বাবর আজম ও টিম সাউদি। তাতে শুধু দ্বিতীয় টেস্ট নয়, গোটা সিরিজটাই অমীমাংসিত থেকে গেল। কেননা, প্রথম ম্যাচ ড্র করেছিল দুই দল।
স্বাভাবিক সিরিজ ড্র কিউইদের জন্য হতাশার। পাকিস্তানের জন্য জয় সমতুল্য। জয়ের আশায় ম্যাচের চতুর্থ দিনে স্বাগতিকদের ৩১৯ রানের চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছিল কিউইরা। রান তাড়ায় কোনো রান না পেলেও গতকাল দুই উইকেট খুইয়ে বসে পাকিস্তান। এমনকি শেষ দিনে তাদের সংগ্রহ ৮০ রান হতেই সাজঘরে ফেরে আরও তিন ব্যাটার।
ইমাম উল হককে (১২) দিনের শুরুতে বিদায় করেন ইশ সোধি। অধিনায়ক বাবর উইকেটে টিকেন ৫১ মিনিট। ব্রেসওয়েলের শিকার হওয়ার আগে ৪১ বল খেলে ২৭ রান করেন তিনি। বাবরকে আউট করার পর নিজের পরের ওভারেই শান মাসুদকে প্যাভিলিয়েন পাঠান ব্রেসওয়েল।
নিশ্চিত পরাজয়ের মুখে পড়া দলকে টেনে তুলেন সরফরাজ ও সৌদ শাকিল। দুজনের ২৬০ বলের জুটিতে কেবল ম্যাচ বাঁচানো লড়াই করেনি পাকিস্তান, তাদের ১২৩ রানের প্রতিরোধে জয়ের জন্যও গা ঝাড়া দিয়ে উঠে স্বাগতিকরা। অন্যদিকে এই জুটি ভেঙেও খুব বেশি স্বস্তি ফিরে পায়নি কিউই বোলাররা।
দলীয় ২০৩ এবং ব্যক্তিগত ৩২ রানে ব্রেসওয়েলের শিকার হন শাকিল। এরপর আঘা সালমানকে সঙ্গে নিয়ে দলকে সঠিক পথেই রাখেন সরফরাজ। সপ্তম উইকেট জুটিতে আরও ত্বরান্বিত হয় পাকিস্তানের রান তোলার গতি। ৮৩ বলে আসে ৭০ রান। এরই মধ্যে টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নেন সরফরাজ।
সরফরাজ ও সালমানের গতি রোধ করেন ম্যাট হেনরি। কিউই পেসার বোল্ড করেন ৩০ রান করা সালমানকে। খানিকবাদেই হাসান আলিকে (৫) আউট করেন সাউদি। এরপর সরফরাজকে মাঠছাড়া করে সফরকারী শিবিরে স্বস্তি ফেরান ব্রেসওয়েল। ১৭৬ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ১১৮ রানের ইনিংস খেলেন পাকিস্তানি ব্যাটার।
ম্যাচের শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে রেখেছিলেন নাসিম ও আবরার। আশা জেগেছিল নিউজিল্যান্ড শিবিরেও। কিন্তু রোমাঞ্চ ছড়ানো দিনে শেষতক সব আশাই মিলিয়ে গেল অন্ধকারে।
এসজি
