মাশরাফির দৃষ্টিতে বিপিএল হ-য-ব-র-ল
আগের দিন বুধবার (৪ জানুয়ারি) সাকিব আল হাসান বিপিএলকে বলেছিলেন ‘যা-তা’। আর আজ বৃহস্পতিবার সাকিবের সেই কথার জের ধরে মাশরাফি বিন মুর্তজা বললেন, ‘হ-য-ব-র-ল’।
শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) বিপিএলের নবম আসরের প্রথম দিনই মাঠে নামবে মাশরাফির নতুন দল সিলেট স্ট্রাইকার্স। উদ্বোধনী ম্যাচ খেলবে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে। কিন্তু সেই ম্যাচ নিয়ে মাশরাফিকে প্রশ্ন কমই করা হয়েছে। অধিকাংশ প্রশ্নই ছিল বিপিএল নিয়ে। বিশেষ করে সাকিবের বিস্ফোরক কথার। মাশরাফির জবাব ছিল সাকিবের কথার প্রত্যক্ষ সমর্থন।
তিনি বলেন, ‘পরিবেশ (বিপিএল) দেখলে আপনার তা-ই মনে হবে। কারণ এক মাঠে ৬-৭ দল অনুশীলন করছে। খালি চোখে যে কেউ এসে দেখে যে, একই মাঠে সবকিছু হচ্ছে, অনুশীলন হচ্ছে। এটা হ-য-ব-র-ল ব্যাপার, এটা বলতে পারে। কিন্তু দিন শেষে খেলার মাঠে খেলা কিন্তু খেলা মতোই হয়। একটা টুর্নামেন্টের সৌন্দর্য আছে, শুরুর দিকে একটা হাইপ তোলার ব্যাপার আছে, এ জিনিসটা হয় তো আমরা শুরু থেকেই পারিনি, এটা সত্য।’
সাকিব বলেছিলেন বিপিএলের চেয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ (ডিপিএল) অনেক ভালো হয়। মাশরাফিও সায় দিলেন তাতে। তিনি বলেন, ‘ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকে। আমরা ক্যারিয়ারের একদম ছোট থেকে দেখে এসেছি, ঢাকা লিগকে খেলোয়াড়রা অনেক গুরুত্ব দেয়। বিপিএল তো একটা অর্গানাইজেশনের তো, অর্গানাইজ করার ব্যাপার থেকে। ক্যালেন্ডার ইয়ারটা করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ক্যালেন্ডারে কখন শুরু হবে, এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যতগুলো পয়েন্ট বললেন, এর ভেতরে খেলোয়াড় আসা-যাওয়া (অ্যাভেইলেবল), ক্যালেন্ডার ইয়ার সেট করলে হয় কী, ভিন্ন দেশের খেলোয়াড়রা জানে কোথায় পাওনা বেশি থাকলে, তাদের সুইটেবল হবে। এখন পিএসএল, ইউএই, দক্ষিণ আফ্রিকান লিগের সঙ্গে একসঙ্গে হয়ে যায়, এটা একটা ঝামেলা।’
দুটি দলের জার্সি সরবরাহ না করা প্রসঙ্গে মাশরাফি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘জার্সি বললেন, জার্সি লোগো যেটা, সেটা। বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জটা আরেকটা জায়গায় আছে, সেটা হচ্ছে স্পন্সরশিপ এবং মালিকানা। এই একটা জায়গায় বিশাল শূন্যস্থান থেকে যায়। আরেকটা জিনিস অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো বেনেফিট পায় বোর্ড থেকে। প্রোফিট ভাগাভাগির একটা বেনেফিটিং হয়, সেটা যেহেতু হয় না, তখন আসলে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ থাকে যে, স্পন্সরশিপ থেকে সেই অর্থটা বের করে আনা। এখানে একটা শূন্যস্থান থেকেই যায়। আরেকটু অর্গানাইজ করতে পারলে ভালোই হয়। কিন্তু সত্যি বলতে, বাংলাদেশে ওই পরিমাণ মার্কেট ভ্যালুও নেই। এ ধরনের টুর্নামেন্টের জন্য যে পরিমাণ মার্কেট ভ্যালু থাকার প্রয়োজন, ওই ভ্যালুও নেই। আমার কাছে মনে হয় যে, এক পর্যায়ে জোর করে আসা হয় বা আনা হয়। মার্কেট ভ্যালু থাকলে হয়তো আসার ব্যাপার থাকত।’
বিপিএলের মার্কেট ভ্যালু নিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘আমি তো এটা বললাম, কাজ না করলে তো বোঝা যাবে না। এটা তো দীর্ঘসময়ের একটা কাজের ব্যাপার। মার্কেট ভ্যালু কতটুকু, আপনার দলের কাছে স্পন্সরশিপ কতটুকু আসতে চাচ্ছে, এগুলো তো দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। একটা দল যখন জানে যে, আমি এই দলটার মালিক, আমি পরবর্তী ১০ বছর-৭ বছর এটার মালিক। তখন সে দুই বছর লস করতে পারে। ঠিক আছে, আমি আমার দলকে নিয়ে কাজ করব, মার্কেটে প্রমোট করব, ডিসিপ্লিন ওয়েতে, তখন কিন্তু তার যে ২ বছরে প্রোফিটে সে চলে যাবে। এটা তো ফ্র্যাঞ্চাইজিদের জন্য ব্যবসা। বিজনেসে যদি আপনি প্রোফিট না করেন ঠিক আছে, লস হয়ে গেলে তো সমস্যা। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো এজন্য দীর্ঘসময় স্থায়ী হতে পারছে না। তবে যদি এটি প্রোপার অর্গানাইজ করে করা হয়, যেটা সাকিব বলেছে, আমার কাছেও মনে হয়, অন্তত ৭, ৫ বা ১০ বছর যেটার যে মালিক, তাদের সঙ্গে টিম করা। নির্দিষ্ট তারিখে করা। তখন কিন্তু অনেক কিছু পরিবর্তন করা সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘আইপিএলে গ্যালারির টাকায় হোম ফিফটি-ফিফটি করে। এরকম অনেক কিছু বিষয় আছে। এগুলো করলে হয় তো আরেকটু জমজমাট হতো। কিন্তু এই টুর্নামেন্টটা গুরুত্বপূর্ণ।’
মাশরাফি পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘এতকিছু সাকিব বলেছে, আমিও কিছু না কিছু বললাম। এই যে পরবর্তী বছর যদি ছয় মাস আগে পরিকল্পনা করে, যেহেতু ৩ বছরে জন্য দলগুলো দিয়েছে। এটা ভালো দিক হয়েছে। অন্তত ৩ বছরের জন্য নিয়েছে। দলগুলো এখন ক্লিয়ার, দলগুলোকে সমর্থন করতে হবে। কোন উপায়ে সমর্থন করবে, দলগুলো কী চায়, তারা কী চায়, বিপিএল গভর্নিং বডির সঙ্গে কমলে কিন্তু সমাধান হয়। টুর্নামেন্টের ৩ মাসে একটা নিলাম, তারপর টুর্নামেন্টের আগে মাঠে অনুশীলন করে এভাবে পরিবর্তন হবে না।’
এমপি/এসজি