পন্টিং-লারার রেকর্ড ভেঙে পাকিস্তানকে টানছেন বাবর

দায়িত্ব হারিয়েছেন রমিজ রাজা। পাল্টে গেছে মোহাম্মদ ওয়াসিমের নির্বাচক প্যানেল। পরবর্তী টার্গেট ছিলেন বাবর আজম, যার নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল পাকিস্তানের বাজে পারফরম্যান্সের কারণে। কঠিন সময়ে ব্যাট হাতে সব সমালোচনার জবাব দিলেন অধিনায়ক।
সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করাচি টেস্টের প্রথম দিনে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে রিকিং পন্টিং ও ব্রায়ান লারার রেকর্ড ভেঙেছেন বাবর। একই সঙ্গে দলকে টেনে তুলেছেন খাদের কিনারা থেকে। দিনশেষে ১৬১ রানে অপরাজিত তিনি এবং পাকিস্তানের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ৩১৭ রান।
বাবর বরাবরই ব্যাটিংয়ে সেরা ছন্দে রয়েছেন। কিন্তু তার নেতৃত্বে পাকিস্তান দল পাচ্ছে না জয়। সবশেষ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ধবলধোলাইয়ের লজ্জা পেয়েছে দেশটি। সেটাও নিজেদের মাটিতে। এরপরই পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যান রমিজ রাজাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
জাতীয় দল গড়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় শহীদ আফ্রিদিকে প্রধান করে গড়ে তোলা অন্তর্বতীকালীন নির্বাচক প্যানেলকে। নতুন দায়িত্ব পেয়ে শুরুতেই বড় ঝুঁকি নেন আফ্রিদি। মোহাম্মদ রিজওয়ানকে বসিয়ে একাদশ সাজান সরফরাজ আহমেদকে রেখে। তবে প্রথম বাজিটা জিতে গেছেন নির্বাচক প্যানেলের প্রধান।
করাচির ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথমটির প্রথম দিনে পাকিস্তানের শুরুটা ছিল দুঃস্বপ্নের মতো। কিউই বোলারদের তোপের মুখে ১৫ ওভারে ৪৮ রান করতেই ৩ উইকেট খুইয়ে বসে স্বাগতিকরা। অ্যাজাজ প্যাটেলের স্পিনে ব্যক্তিগত ৭ রানে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়েন আবদুল্লাহ শফিক। এরপর আরেক স্পিনার ব্রেসওয়েলের আঘাত। তার স্পিনে শান মাসুদকেও (৩) স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন টম ব্লান্ডেল। তাতে হয়েছে বিরল এক রেকর্ড। ছেলেদের ১৪৫ বছরের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে এই প্রথম কোনো ম্যাচের প্রথম দুই ডিসমিসাল হলো স্টাম্পিংয়ে।
ঐতিহাসিক শুরুর পর স্বাগতিকদের তৃতীয় উইকেটের পতনও ঘটান ব্রেসওয়েল। তার দ্বিতীয় শিকার হন ২৪ রান করা ইমাম উল হক। দুই কিউই ঘূর্ণিবাজের পর সাময়িক প্রতিরোধ গড়ে তুলেন বাবর এবং সৌদ শাকিল। এই যুগলের ৬৮ রানের জুটি ভাঙেন টিম সাউদি। নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক প্যাভিলিয়নে পাঠান শাকিলকে (২২)। এরপর সফরকারী বোলারদের উপর ছড়ি ঘোরান বাবর ও সরফরাজ। প্রায় ৪ বছর পর লাল বলের ক্রিকেটে ফিরে দুর্দান্ত খেলেছেন সরফরাজ। যদিও দিনশেষে সেঞ্চুরি না পাওয়ার আক্ষেপে পুড়তে হয়েছে তাকে।
অ্যাজাজ প্যাটেলের স্পিনে ৮৬ রানে আউট হয়েছেন সরফরাজ। ততক্ষণে পাকিস্তানের সংগ্রহ ছাড়িয়ে যায় ৩০০। কোনো সংকোচ ছাড়াই বলা যায়, বাবর-সরফরাজের ১৯৬ রানের জুটিতে ম্যাচে ঘুরে দাঁড়িয়েছে স্বাগতিকরা। অন্যদিকে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় তুলেছেন বাবর।
এদিন টেস্টে নবম এবং ক্রিকেটের তিন ফরম্যাট মিলিয়ে বছরের অষ্টম সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন বাবর। চলতি বছরে ২৫তম পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেললেন পাকিস্তান অধিনায়ক। তাতেই ভেঙেছে ১৭ বছর আগে গড়া পন্টিংয়ের রেকর্ড। ২০০৫ সালে এক বর্ষপুঞ্জিতে ২৪টি পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস খেলেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক। বছরের অষ্টম সেঞ্চুরিতে উইন্ডিজ কিংবদন্তি ব্রায়ান লারা, অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ স্মিথ, শ্রীলঙ্কার জয়াবর্ধনে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রায়েম স্মিথকে পেছনে ফেলে এক বর্ষপুঞ্জিতে সর্বাধিক আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির তালিকায় নাম লিখিয়েছেন বাবর। সেখানে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন পাকিস্তান অধিনায়ক।
স্বদেশি ব্যাটিং লিজেন্ড মোহাম্মদ ইউসুফের একটি রেকর্ডও ভেঙেছেন বাবর। এক বর্ষপুঞ্জিতে সর্বাধিক রান করা ক্রিকেটার এখন তিনি, যা এতদিন ছিল ইউসুফের দখলে। ২০০৬ সালে ২ হাজার ৪৩৫ রান করেছিলেন সাবেক এই পাকিস্তানি ব্যাটার। করাচিতে সেঞ্চুরি হাঁকানোর পর এই রানও টপকে গেছেন বাবর।
২০২২ সালে টি-টোয়েন্টিতে ৭৩৫ এবং ওয়ানডেতে ৬৭৯ রান করেছেন পাকিস্তান অধিনায়ক। টেস্টে তার রান ছাড়িয়ে গেছে হাজার। আগামীকাল (২৭ ডিসেম্বর) আঘা সালমানকে (৩) সঙ্গে নিয়ে নিজের রানের ঝুলি এবং দলের পুঁজি ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তুলতে নামবেন বাবর।
এসজি
