জয়ে শুরু হারে শেষ, টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ

২০২২ সাল বাংলাদেশ দারুণভাবে শুরু করেছিল। বছরের প্রথম দিনই তারা টেস্ট খেলতে নেমেছিল। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলা শুরু হয়েছিল মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে। আগের ১৫ টেস্টে বাংলাদেশের কোনো জয় ছিল না। তিনটি টেস্ট ড্র করতে পেরেছিল। আবার টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের মানও বেশি ভালো নয়। সেখানে বিশ্বকে চমকে দিয়ে বাংলাদেশ ৮ উইকেটে টেস্ট জিতে নিয়েছিল। কিন্তু এই সাফল্য বাংলাদেশ পরে আর ধরে রাখতে পারেনি। একে একে খেলেছিল ৯টি টেস্ট। জিততে পারেনি একটিও।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটি মাত্র টেস্ট ড্র করতে পেরেছিল। বছরের শেষ টেস্ট খেলেছিল ভারতের বিপক্ষে। সেখানে বাংলাদেশ বছরের শুরুটা ফিরিয়ে আনার রাস্তা প্রায় তৈরিই করে ফেলেছিল। কিন্তু জয়ের কিনারায় গিয়ে বাংলাদেশ হেরে যায় ৩ উইকেটে। ১৪৪ রানের টার্গেট নিয়ে খেলতে নেমে ভারতের ৭ উইকেট বাংলাদেশ তুলে নিয়েছিল ৭৪ রানে। এরপর আর শেষ ৩ উইকেট তুলে নিতে পারেনি। রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও শ্রেয়াস আইয়ার বাংলাদেশের জয়ের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে নিজেদের নিশ্চিত হার বাঁচিয়ে জয় নিয়ে ফিরেন।
২০২২ সালে বাংলাদেশ ১০টি টেস্ট ছাড়াও ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে ১৫টি। টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার সংখ্যা ছিল ২১টি। ওয়ানডেতে জয় পেয়েছে ১০টি। হেরেছে ৫টিতে। টি-টোয়েন্টি ২১টি ম্যাচ খেলে জয় মাত্র ৬টিতে। একটি হয়েছে পরিত্যক্ত। বাকি সবগুলোতে হার।
নিউ জিল্যান্ডকে হারিয়ে জয় দিয়ে টেস্ট শুরু করার পর বাংলাদেশ পরের টেস্টেই ফিরে যায় নিজেদের চিরচেনা রূপে। ক্রাইস্টচার্চে পরের টেস্টেই নিউ জিল্যান্ডের কাছে হার মেনেছিল ইনিংস ও ১১৭ রানে। এরপর তারা একে একে দুই টেস্টের সিরিজ খেলে দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, উইন্ডিজ ও ভারতের বিপক্ষে।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দুইটি টেস্ট হেরেছিল যথাক্রমে ২২০ ও ৩৩২ রানে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে চট্টগ্রাম টেস্ট ড্র করার পর ঢাকা টেস্ট হেরে যায় ১০ উইকেটে। এরপর যায় উইন্ডিজ সফরে। সেখানে দুই টেস্ট হারে ৭ ও ১০ উইকেটে। এরপর ভারতের বিপক্ষে ঘরের মাঠে খেলে বছরের শেষ দুই টেস্টে। প্রথমটিতে ১৮৮ রানে হারলেও পরের টেস্টে জয়ের কাছাকাছি গিয়ে হেরে যায় ৩ উইকেটে।
ওয়ানডেতে ‘পচা শামুকে পা কাটা’
তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটে বাংলাদেশ একমাত্র ওয়ানডেতেই মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পেরেছে। সেই সাফল্য তারা এ বছরও ধরে রেখেছে। ৫টি সিরিজ খেলে ৪টিতেই জয় পেয়েছে। একমাত্র যে সিরিজ তারা হেরেছে তাকে বলা যায় ‘পচা শামুকে পা কাটা’র মতোই। আফগানিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, উইন্ডিজ আর ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জিতলেও জিম্বাবুয়ের কাছে হেরে গিয়েছিল।
প্রতিটি সিরিজিই ছিল তিন ম্যাচের। একমাত্র উইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল। বাকি তিনটি জিতেছিল ২-১ ব্যবধানে। জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছিল ১-২ ব্যবধানে। এটি ছিল উড়ন্ত বাংলাদেশের বিশাল এক ছন্দপতন। তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথম দুটিতেই হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। অথচ এই সিরিজ হারের আগে বাংলাদেশ উইন্ডিজ ও দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে গিয়ে সিরিজ জিতে এসেছিল। উইন্ডিজে এর আগেও বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজ জিতলেও দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ছিল প্রথম সিরিজ জয়। আফগানিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয় ছিল ঘরের মাঠে।
টি-টোয়েন্টিতে ফিরে পাওয়ার মিশন
২০২২ সালে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ কিছুটা হলেও নিজেদের ফিরে পেয়েছে। এই ফিরে পাওয়া ছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে।
২০২১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের যে ভরাডুবি হয়েছিল, তাই যেন এ বছর তারা অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে কিছুটা ফিরে পায়। প্রথম ৪ ম্যাচের দুটিতে জয় পেয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি হয়ে উঠেছিল অলিখিত সেমি ফাইনাল। কিন্তু পাকিস্তানের সঙ্গে আর পেরে উঠেনি। হেরেছিল ৫ উইকেটে। এর আগে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে মাত্র ৯ রানে ম্যাচ জেতার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরেছিল ১০৪ রানের বিশাল ব্যবধানে। তৃতীয় ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টানটান উত্তেজনার পর ম্যাচ জিতেছিল ৩ রানে। চতুর্থ ম্যাচে আম্পায়ারদের পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণের শিকার হয়ে ভারতের কাছে হেরেছিল ৫ রানে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশ এই ফরম্যাটে খুবই বাজে সময় পার করছিল। টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপে তারা সুপার ফোরেই উঠতে পারেনি। বাংলাদেশের গ্রুপে ছিল আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। এশিয়া কাপের এরকম বাজে ফলাফল বিসিবি কর্তাদের নাড়িয়ে দেয়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে নিউ জিল্যান্ডে পাকিস্তানের অংশগ্রহণে খেলে তিনজাতির আসর। খেলা হয়েছিল ডাবল লিগ পদ্ধতিতে। বাংলাদেশ কোনো ম্যাচ জিততে না পারলেও নিজেদের ফিরে পাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিল। তার আগে সংযুক্ত আরব আমিরাত গিয়ে খেলে দুই ম্যাচের সিরিজ। প্রথম ম্যাচে জিতেছিল মাত্র ৭ রানে। পরের ম্যাচে জয় পয় ৩২ রানে।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের এরকম পরিবর্তনের পেছনে কাজ করেন স্বল্পমেয়াদে শুধুমাত্র টি-টোয়েন্টি দলের জন্য কোচের দায়িত্ব পাওয়া ভারতের শ্রীধরন শ্রীরাম। তিনি কিছুটা হলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মেন্টালিটির পরিবর্তন আনতে পেরেছিলেন। তার সঙ্গে বিসিবির চুক্তি ছিল অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ পর্যন্ত। বিশ্বকাপ শেষ হলে তিনি চলে যান।
শ্রীধরন দায়িত্ব নেওয়ার আগে বাংলাদেশ উইন্ডিজ ও জিম্বাবুয়ের কাছে তিন ম্যাচের সিরিজ হেরেছিল ২-১ ব্যবধানে। আফগানিস্তানের সঙ্গে তিন ম্যাচের সিরিজ ১-১ ড্র হয়েছিল। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচটি হয়েছিল পরিত্যক্ত।
এমপি/এসজি
