ফিল্ডিংয়ের ব্যর্থতা দূর করতে চান সাকিব

টেস্ট ক্রিকেটে সাধারণত দর্শক খুব একটা হয় না। মিরপুরে বাংলাদেশ-ভারত টেস্টেও দর্শক খুব একটা উপস্থিত ছিলেন না। কিন্তু আজ (২৫ ডিসেম্বর) সকাল হতে না হতেই মিরপুরে দর্শকদের ঢল। এর কারণ আর কিছুই না। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় দেখা। আগের দিনই জয়ের ক্ষেত্র তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আজ ছিল সেটাকে আনুষ্ঠানিক রূপ দেওয়া। ভারতের মতো দলের বিপক্ষে এরকম একটি জয় কি মাঠে বসে না দেখে পারা যায়?
বড়দিনের সরকারি ছুটি থাকায় টিভি সেটের সামনেও অনেকে বসে পড়েন। সবার এই চাওয়া-পাওয়া ক্রমেই একে বিন্দুতে মিলতে থাকে। পটাপট পড়তে থাকে ভারতের উইকেট। চোখের পলকে নেই একটি, দুইটি করে তিনটি। আগের দিনের ৪টির সঙ্গে যোগ হয়ে ভারতের নেই ৭টি উইকেট। অবশিষ্ট আছে ৩টি উইকেট। জয়ের জন্য তখনো প্রয়োজন ৭১ রানের। সেই রান কমে যখন ৬৬ তে নেমে আসে, তখনই মিরাজের বলে শর্ট লেগে অশ্বিনের একটি সহজ ক্যাচ হাতছাড়া করেন মুমিনুল। অশ্বিনের রান তখন মাত্র ১। যেখানে দাঁড়িয়ে মুমিনুল ক্যাচ ধরতে পারেননি, একই জায়গায় দাঁড়িয়ে তার চেয়ে কঠিন ক্যাচ তিনি ধরেছিলেন আগের দিন একই বোলারের বলে কোহলির। মুমিনুলের কাছ থেকে জীবন পেয়ে শেষ পর্যন্ত এই অশ্বিনই গড়ে দেন ব্যবধান। যা খেলা শেষে খুবই বড় হয়ে উঠেছে।
ক্যাচ হাতছাড়া করা বাংলাদেশের জন্য নতুন কিছু নয়। এই টেস্টের দুই ইনিংসে বাংলাদেশের ফিল্ডাররা অনেক ক্যাচ হাতছাড়া করেছেন। এ নিয়ে রীতিমতো হতাশ অধিনায়ক সাকিব। খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘একটু তো হতাশাজনক। কারণ এগুলোই হয়তো অনেক বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। ওদের হয়তো প্রথম ইনিংসে রান ৩১৪ না হয়ে ২৫০ হতে পারত। দ্বিতীয় ইনিংসেও অবশ্যই সুযোগ ছিল। এসব ক্রিকেটের অংশ। তবে হতাশানজক যে অন্য দলগুলো এসব মিস করে না, আমরা যেগুলো করি।’
যা হবার হয়ে গেছে। সাকিব চান এর থেকে বের হয়ে আসতে, ভুলগুলো শুধরাতে। যাতে করে আগামীতে আর এরকম ভুল না হয়। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয়, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আমরা ভালো ফিল্ডিং করেছি। বেশ ভালো করেছি। ওয়ানডে সিরিজেও (ভারতের বিপক্ষে) ভালো করেছি। টেস্ট ম্যাচে আমরা ওইভাবে ভালো করতে পারিনি। হতে পারে মনোযোগের ঘাটতি। কে জানে, হতে পারে ফিটনেসের ঘাটতি বা অন্য কিছুও হতে পারে। তবে এসব খুঁজে বের করতে হবে যে কীভাবে আমরা আরও বড় সময় ধরে মনোযোগ ধরে রাখতে পারি এবং ভুলগুলো না করি।’
বাংলাদেশ যেমন একটি ম্যাচে প্রতিপক্ষকে অনেক বেশি এরকম সুযোগ দিয়ে থাকে, বাংলাদেশ আবার সেরকম সুযোগ প্রতিপক্ষের কাছ থেকে পায় কম। এ নিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, অন্য কোনো দলই এতগুলো সুযোগ দিত না, যতটা সুযোগ আমরা দেই। অনেকক্ষেত্র আছে, খুবই নিয়মিত জিনিসগুলো আমরা মিস করে ফেলি, যেটা অন্য দেশগুলো করে না। এই জায়গায় উন্নতি করতে পারলে অন্য জায়গাগুলোতে আমাদের খুব বেশি পার্থক্য নেই, স্কিলের জায়গায় ব্যাটিং ও বোলিংয়ের দিক থেকে। কারণ আমরা রান খুব কম করছি না। এই জিনিসগুলোই (ক্যাচ মিস) আমাদের জন্য পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে। আমাদের বোলারদের হয়তো ১৩-১৪টি সুযোগ তৈরি করতে হয় ১০ উইকেট নিতে, অন্যদের ক্ষেত্রে যেটা হয়তো অনেক সময় ৯টা সুযোগ তৈরি করলেই ১০টা হয়ে যায়।’
যেরকম টার্নিং উইকেট ছিল, তাতে করে ভারত উপমহাদেশের দেশ হওয়ায় টেস্ট জিতেছে বলে সকিব মনে করেন না। তিনি বলেন, ‘না, সেটা মনে হয়নি। ওরা দুজন খুব ভালো ব্যাট করেছে। আমাদের স্পিনারদের খুব ভালো সামলেছে। তবে সুযোগ ছিল আমাদের। যখন আমরা চাপ তৈরি করেছিলাম, সুযোগ এসেছিল। একটু এদিক-ওদিক হলেই হয়তো হতে পারত। আর কিছু বলার নেই। যেটা আমি বললাম যে, ওভারঅল টেস্ট ম্যাচে খুব ভালো হয়েছে (পারফরম্যান্স) এবং এটা দর্শকের জন্যও আশাব্যঞ্জক যে তারা এখন থেকে ভাবা শুরু করবে, যেকোনো দেশের সঙ্গেই আমরা খেলি, আমাদের ভালো করার সুযোগ আছে।’
এমপি/এসজি
