আশা জাগিয়েও পারল না বাংলাদেশ

জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ভারতের ৬ উইকেট। ভারতের প্রয়োজন ১০০ রানের। উইকেটের বিবেচনায় দিনের শুরুতেই ৭ ওভারের মাঝে ২৯ রানে ভারতের ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশ জয়ের মঞ্চ একপ্রকার তৈরি করেই ফেলেছিল। কিন্তু সেই তৈরি করা মঞ্চ গুঁড়িয়ে দেন শ্রেয়াস আইয়ার ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন। দুজনেই জুটি বেঁধেছিলেন যখন, তখন ভারতের প্রয়োজন ছিল ৭১ রানের। কী আশ্চর্য! টার্ন করা উইকেটে যেখানে ব্যাটসম্যানরা খেলতেই পারছিলেন না, সেখানে এই দুই ব্যাটসম্যান আর কোনো উইকেটেরই পতন হতে দেননি। বাংলাদেশের মুখের খাবার কেড়ে নিয়ে নিজেরা মেতে ওঠেন জয়ের উল্লাসে। ভারত জিতে ৩ উইকেটে।
১৪৪ রানের পুঁজি নিয়ে ভারতের মতো শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনের বিপক্ষে জয়ের আশা করাই যায় না। সেখানে বাংলাদেশ জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে শেষ মুহূর্তে হেরেছে। ভারতের বিপক্ষে ১৩ টেস্টে বাংলাদেশের এটি ছিল সবচেয়ে লড়াকু খেলা। তারপরও এই টেস্ট হয়তো বাংলাদেশ জিততেও পারত যদি ক্যাচ মিসের যে চিরাচরিত দৃশ্য বাংলাদেশের ফিল্ডিংয়ে দেখা যায়, সেটি থেকে বের হয়ে আসতে পারত।
ভারতকে জিতিয়েছেন অশ্বিন ও শ্রেয়াস জুটি। বিশেষ করে অশ্বিন। ৬২ বলে এক ছক্কা ও চার বাউন্ডারিতে ৪২ রানে অপরাজিত থাকা অশ্বিন এক রানের জীবন পেয়েছিলেন মিরাজের বলে শর্ট লেগে মমিনুলের হাতে। একই জায়গায় দাঁড়িয়ে তৃতীয় দিন মমিনুল কোহলির ক্যাচ ধরে ছিলেন এই মিরাজের বলেই। কোহলির ক্যাচ ছিল কিছুটা কঠিন। বল নিচু হয়ে এসেছিল। সে তুলনায় অশ্বিনের বল ছিল কিছুটা উপরে। বলা যায় সরাসরি মুমিনুলের হাতে গিয়েছিল। কিন্তু মুমিনুল হাতে জমাতে পারেননি। তার মাশুল পরে চরমভাবে দিতে হয় বাংলাদেশ দলকে। সেসময় দলের রান ছিল ৭ উইকেটে ৭৯ অশ্বিন আউট হয়ে গেলে রান হতো ৮ উইকেটে ৭৯। জয় থেকে ভারত তখনো দূরে ৬৬ রানে। একমাত্র প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যান ছিলেন শ্রেয়াস আইয়ার। এরকম অবস্থায় ভারতের জন্য ম্যাচ বের করে নিয়ে যাওয়া সত্যিকার অর্থেই কঠিন হয়ে উঠত। কিন্তু জীবন পেয়ে অশ্বিন দলকে আর কোনো টেনশনে রাখেননি। শ্রেয়াসকে নিয়ে বাংলাদেশের সমস্ত বোলিং আক্রমণ বিশ্বস্ততার সঙ্গে মোকাবিলা করে দলকে হারের কিনারা থেকে জয়ের বন্ধরে পৌঁছে দেন। দুজনের দুটিতে যে অবিচ্ছিন্ন ৭১ রান আসে, সেখানে অশ্বিনের ৪২ রান ছাড়া শ্রেয়াসের অবদান ছিল ২৯ রানের। বল খেলেন ৪৮টি। বাউন্ডারি ছিল চারটি।
এই দুইজন জুটি বাঁধার আগে ভারতের আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন, বিবর্ণ। দেখতে পাচ্ছিল বাংলাদেশের কাছে প্রথম হার। তৃতীয় দিন শেষে উইকেটের যে অবস্থা ছিল আর ম্যাচের যে চিত্র, তাতে করে জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৬ উইকেটের, ভারতের প্রয়োজন ছিল ১০০ রানের। উইকেটের বিবেচনায় পাল্লাটা কিন্তু বাংলাদেশের দিকে একটু হেলে ছিল। চতুর্থ দিনের খেলা শুরু হতে না হতেই ৭ ওভারের মাঝে ২৯ রানে বাংলাদেশ তুলে নিয়েছিল ভারতের ৩ উইকেট। আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান আকসার প্যাটেল ও জয়দেব উনাদ কাটের সঙ্গে মারমুখী ব্যাটসম্যান রিশাভ পান্হ ছিলেন শিকার।
জিততে হলে রান করতে হবে উইকেটে পড়ে থাকলে চলবে না- এই মন্ত্র নিয়ে ভারত চতুর্থ দিনের সকাল শুরু করেছিল। ২৪ ওভারের ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ১০০ রান যেন তারই সাক্ষ্য দিচ্ছে।
মিরাজের প্রথম ওভারেই ভারত তুলে নিয়েছিল ৯ রান। আক্রমণটা শুরু করেছিলেন উনাদকাট। পরের ওভারে তাকে থামিয়ে দেন সাকিব এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে। নিজেকে বাঁচাতে রিভিউ নিয়েছিলেন উনাদ। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ১৩ রান করে তিনি ফিরে যাওয়ার পর মারমুখী ব্যাটসমম্যান হিসেবে পরিচিত রিশাভ পান্হ উইকেটে আসেন। কিন্তু তাকে মারমুখী হওয়ার সুযোগ দেননি মেহেদি হাসান মিরাজ। ৯ রানে তাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন। রিশাভ আউট হওয়ার পর বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় শিকার করে তাদের জয়ের পথে ক্রমেই অশনি সংকেত হয়ে দেখা দিতে থাকা আকসার প্যাটেলকে। ৩৪ রানে মেজাজ থাকে বোকা বানান বোল্ড করে। প্যাটেলের ৬৯ বলের ইনিংসে ছিল চারটি বাউন্ডারি। প্যাটেলকে আউট করে মিরাজ ক্যারিয়ারে নবমবারের মতো ইনিংসে নেন পাঁচ উইকেট।
শুরুরে এই সাফল্য বাংলাদেশের আকাশে জয়ের আভা ক্রমে ফুটে উঠতে থাকে। যা পরে নিভে যায় অশ্বিন ও শ্রেয়াসের ব্যাটে। মিরাজ ৬৩ রানে নেন ৫ উইকেট। সাকিবের ২ উইকেট ছিল ৫০ রানে। ম্যাচ সেরা হয়েছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন আর সিরিজ সেরা চেতেশ্বর পুজারা।
এমপি/এসএন
