মুমিনুলের বীরোচিত প্রত্যাবর্তন

একটা সময় বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান ছিলেন মুমিনুল হক। টানা ১১ টেস্ট হাফ সেঞ্চুরি করে তিনি বিশ্বের অনেক সেরা সেরা ব্যাটসম্যানদের পেছনে ফেলে দিয়েছিলেন। সময়ের পক্রিমায় এক সময় তার হাতে উঠে অধিনায়কের আর্ম ব্যান্ডও।
টেস্ট ক্রিকেটে এমনিতেই বাংলাদেশের অবস্থা খুব একটা ভালো না। সেখানে মুমিনুলও খুব একটা পরিবর্তন আনতে পারেননি। কিন্তু এই ব্যর্থতার মাঝেও তার ব্যাট ঠিকই হেসেছে। কিন্তু সেই হাসি মাখা ব্যাটে এক সময় নেমে আসে আধার। রান খরায় পেয়ে বসে মুমিনুলকে। সেই খরা এমনই যে কিছুতেই রানের দেখা পাচ্ছিলেন না। একে সময় তার সেরা একাদশে জায়গা পাওয়াই কঠিন হয়ে উঠে।
অভিযোগ উঠে তিনি দলে আছেন অধিনায়ক হিসেবে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন। দলও ব্যর্থ, তিনিও ব্যর্থ। অবশেষে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ঘরের মাঠে সিরিজের পর তাকে সরে দাঁড়াতে হয়। সেই সঙ্গে দলে জায়গাও হারান। বাদ পড়ার আগে সর্সশেষ ৯ ইনিংসেই তিনি দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পারেননি। তার এই ৯টি ইনিংস ছিল যথাক্রমে ০, ২,৬,৫,২ ৯.৫.০.০.৪।
আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে তার যে রান খরা তা সংক্রামিত হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটেও প্রভাব ফেলে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে জাতীয় লিগে তিনি একটি মাত্র ইনিংসে রান পেয়েছিল। ঢাকা বিভাগের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ২ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৫ রান করেছিলেন।
এ ছাড়া, রংপুর বিভাগের বিপক্ষে ১৩ ও ২২ করেছিলেন। প্রথম শ্রেণির আরেক আসর বিসিএলে তিনি ছিলেন একেবারেই ব্যর্থ। পূর্বাঞ্চলের বিপক্ষে শূন্য, দক্ষিণাঞ্চলের বিপকক্ষে ২৯ উত্তরাঞ্চলের বিপক্ষে শূন্য রান করেছিলেন। এ ছাড়া, ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষে দুইটি চার দিনের ম্যাচেও তার ব্যাট হাসেনি। রান করেছিলেন যথাক্রমে ৪ ও ১৭ এবং ১৫ ও ৬।
এই বিবেচনায় তার জাতীয় দলে ডাকই পাওয়ার কথা ছিল না। চট্টগ্রাম টেস্টের তিনে নামানো হয়েছিল ইয়াসির আলীকে। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল কাউকে না পেয়ে নামানো। কিন্তু দুই ইনিংসেই তিনি সুবিধা করতে পারেননি । অগত্যা ফিরে যাওয়া হয়েছিল মমিনুলের কাছে। যে অবস্থায় মুমিনুলের কাছে ফিরে যাওয়া হয়েছিল, তাতে করে তার উপর আস্থা রাখার কথা নয়। সেই মুমিনুলের ব্যাটেই কোনরকম মান বাঁচিয়েছে বাংলাদেশ।
আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে মুমিনুল ৯ ইনিংস পর দুই অঙ্কের পেলেও হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন ১১ ইনিংস পর। সর্বশেষ হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন এ বছরই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে। ঐতিহাসিক জয়ের ম্যাচে মুমিনুল প্রথম ইনিংসে করেছিলেন ৮৮ রান। আর্ন্তজাতিক ও ঘরোয়া সব মিলিয়ে তার এই হাফ সেঞ্চুরি ছিল ২২ ইনিংস পর।
দলের ব্যর্থতার মাঝেও নিজের কামব্যাক ম্যাচে মুমিনুলের এমন ইনিংসকে দলের ব্যাটিং কোচ জিমি সিডন্স বলেছেন ‘ফ্যান্টাসটিক’। খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমাদের তিন নম্বর পজিশনটা ছিল উদ্বেগের। সে আজ দারুণ খেলেছে। পজেটিভ চিন্তা ভাবনা ছিল। বাজে বলের অপেক্ষায় ছিল। তার ভাবনায় ছিল সে আজ রান করতে যাচ্ছে। আপনি যখন এভাবে চিন্তা ভাবনা করবেন,তখন আপনার আরও ভালো সুযোগ আসবে।’
চট্টগ্রাম মুমিনুলের ‘লাকি’ গ্রাউন্ড। ১১ সেঞ্চুরির সাতটিই এসেছে চট্টগ্রামে। সেই চট্টগ্রামে মুমিনুলকে কেন খেলানো হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন ছুটে গিয়েছিল সিডন্সের দিকে।
জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা নির্বাচকদের (হবে টিম ম্যানেজমেন্ট) সিদ্ধান্ত। কিন্তু বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে চার ইনিংসে মুমিনুল ১০ রানের বেশি করেননি। চট্টগ্রামে আমাদের কয়েকটি বিষয়ে কাজ করতে হয়েছিল। ব্যর্থতাগুলো ভুলে যাওয়ার জন্য কিছুটা সময় দিয়েছিলাম। আবার খেলার জন্য যাতে প্রস্তুত হতে পারে। আমাদের এ পরিকল্পনা দারুণভাবে কাজ করেছে।’
এমপি/এমএমএ/
