শচিনের পর মেসি
জগতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে এমন কিছৃ লোকের আবির্ভাব ঘটে যারা নিজেদের কীর্তি দিয়ে অনেক চূড়ায় নিয়ে যান। চলে যান ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এরা গড গিফটেড। এমন কোনো সাফল্য থাকে না, যা তারা নিজেদের ঝুলিতে ভরেননি। কিন্তু তারপরও সেখানে থেকে যাায় কিছু অপূর্ণতা।
যে অপূর্ণতা তাদের অর্জিত সব সাফল্যেকে ম্লান করে দেয়। তবে যেহেতু তারা গড গিফটেড, সৃষ্টি কর্তা তাদের কোনো অপূর্ণতাই বাকি রাখেন না। সেখানেও পূর্ণতা এনে দেন। মেসিকে দুই হাতে ভরে দেয়ার পরও যেমন বিশ্বকাপ ট্রফি ছিল না। এবার কাতারে মেসির শেষ বিশ্বকাপ সেটিও পেয়ে গেছেন মেসি। মেসির মতনই আরকেজন ছিলেন ক্রিকেটের শচিন টেন্ডুলকার।
তিনিও ক্যারিয়ারে একের পর এক অনেক কীর্তি গড়েছিলেন। কিন্তু কখনো ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতা হয়নি। অবশেষে শচিনও সেই বিশ্বকাপ জিতেছিলেন নিজের শেষ বিশ্বকাপে ২০১১ সালে। ২০১২ সালে তিনি ক্রিকেটকে বিদায় জানান।
মেসি পঞ্চম বিশ্বকাপে এসে জিতেছেন বিশ্বকাপ। শচিন জিতেছিলেন ষষ্ঠ বিশ্বকাপে। মেসি প্রথম বিশ্বকাপ খেলেন ২০০৬ সালে জামার্নিতে। দলকে তিনি কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে যেতে পেরেছিলেন। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপেও মেসির গন্তব্য ছিল কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত।
২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে মেসি দলকে ফাইনাল পর্যন্ত নিয়ে ডেতে পেরেছিলেন। কিন্তু কাপ জেতা আর হয়নি। জার্মানির কাছে ১-০ গোলে হেরে মেসির অপেক্ষা বেড়ে গিয়েছিল। ২০১৮ সালে রাশিয়ায় পরের আসর ছিল মেসির জন্য চরম হতাশজনক। শেষ ষোল থেকে বেজেছিল বিদায় ঘণ্টা। অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন মেসির সেটিই ছিল শেষ বিশ্বকাপ।
কাপ জিততে না পারার কষ্ট থেকে মেসি জাতীয় দল থেকেই অবমন নিয়ে ফেলেছিলেন। পরে সবার চাওয়াকে সম্মান জানিয়ে তিনি নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আবার ফিরে আসেন ময়দানে। তখন পর্যন্ত মেসির বিশ্বকাপের পাশাপাশি কোপা আমেরিকাও জিততে পারেননি। অবসর ভেঙে ফিরে আসার পর মেসি যেন পন করেছিলেন এই দুইটিও স্পর্শ করবেন। পরে তিনি তাই করে দেখিয়েছেন। ২০২১ সালে ব্রাজিলকে হারিয়ে জিতেন কোপা আমেরিকা। বাকি থাকে শুধুই বিশ্বকাপ।
সৌদি আরবের কাছে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে হেরে যাওয়াতে ফুটবলের এই খুদে যাদকুরের শেষ বিশ্বকাপে শিরোপা জেতাটা বিশাল এক শঙ্কার মাঝে পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু এই হারই বদলে দিয়েছিল মেসিদের। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়েনি। একে একে সকল বাধা পেরিয়ে অবশেষে মেসির হাতে উঠেছে কাপ।
শচিন টেন্ডুলকারের আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু হয় ১৯৮৯ সালে। ছয়বার খেলে তিনি দুইবার ফাইনাল খেলতে পেরেছিলেন। ২০০৩ ও ২০১১ সালে। শিরোপা জিতেছিলেন ২০১১ সালে।
শচিন প্রথম বিশ্বকাপ খেলেন ১৯৯২ সালে। অনুষ্ঠিত হয়েছিল নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াতে অনুষ্ঠিত। লিগ পর্বের খেলায় ভারত সেরা চারে থাকতে না পারাতে সেমিতেই উঠতে পারেনি। তাদের অবস্থান হয়েছিল সাতে।। ১৯৯৬ সালে আসর বসেছিল ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কায়। ভারত সেমিতে উঠে হেরে গিয়েছিল শ্রীলঙ্কার কাছে। ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আসরেও শচিনকে হতাশ হতে হয়েছিল। সেমিতেই উঠতে পারেনি ভারত।
সুপার সিক্সে তাদের অবস্থান হয়েছিল সবার নিচে। শচিন প্রথম ফাইনাল খেলেন ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত আসরে। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ১২৫ রানে হেরে শচিনের আর কাপ জেতা হয়নি। ২০০৭ সালে উইন্ডজ বিশ্বকাপে ভারত নিজেদের প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশের কাছে হেরে যায়। পরে তারা গ্রুপ পর্বই পার হেতে পারেনি। এর পরের আসের বসে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ও ভারতে। শচিনের শেষ বিশ্বকাপ।
আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটে সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি শচিন টেস্ট ও ওয়ানডে দু্ই ফরম্যাটেই সর্বোচ্চ রান ও সবচেয়ে সেঞ্চুরির মালিক। এ রকম আরও অনেক রেকর্ড আছে। তাকে বলা হতো রেকর্ডের বরপুত্র। তিনি কি বিশ্বকাপ না জেতার নোনা স্বাদ নিয়িই ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন? কিন্তু বিধাতা হয়তো তা চাননি। তাইতো শচিন তার শেষ বিশ্বকাপে এসে শিরোপার স্বাদ পান।
ফাইনাল খেলা শুধু ভারতে নয়, শচিনের নিজ এলাকা মুম্বাইতে বসেছিল ফাইনাল খেলার আসর। প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলঙ্কা। ছয় উইকেটে ম্যাচ জিতে ভারত হয় চ্যাম্পিয়ন। খেলা শেষে শচিনকে কাঁধে নিয়ে সতীর্থরা উল্লাস করতে থাকেন। এবার যেমন মেসিকে নিয়ে তার সতীর্থতরা করেছেন।
এমপি/এমএমএ/