বিশ্বকাপ ফুটবলে আর্জেন্টিনার যত ফাইনাল
বিশ্বকাপ ফুটবলের ২২তম আসরের পর্দা নামবে আজ রবিবার। কাতার বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে শিরোপা জেতার ময়দানী লড়াইয়ে মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্স। আর্জেন্টিনার এটি ষষ্ট এবং ফ্রান্সের চতুর্থ ফাইনাল। আর্জেন্টিনা আগের পাঁচটির দুটিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ফ্রান্সও চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দুইবার। আজ যে দল জিতবে তাদেরই হবে তৃতীয় শিরোপা। ব্রাজিল পাঁচবার, জার্মানি ও ইতালি চারবার করে শিরোপা জেতার পর আজকের জয়ী দল উঠে আসবে তিনে।
বিশ্বকাপ ফুটবলের প্রথম আসরেই ফাইনাল খেলে ছিল আর্জেন্টিনা ১৯৩০ সালে। উরুগুয়েতে বসেছিল সেই আসর। ১৩ দলের আসরে ফাইনালে অপর প্রতিপক্ষ ছিল স্বাগতিক উরুগুয়ে। ৪-২ গোলে হেরে আর্জেন্টিনা হয়েছিল রানার্সআপ।
প্রথম গোল আর্জেন্টিনা হজম করলেও এক পর্যায়ে এগিয়ে গিয়েছিল ২-১ গোলে। পরে একে একে হজম করে তিন গোল। আর্জেন্টিনার হয়ে গোল করেছিলেন পিউসেলে ও স্টাবিলে। উরুগুয়ের চার গোলদাতা ছিলেন ডুরাডু, সিয়া ইনারতে ও কেস্ট্রো।
প্রথম আসরে ফাইনাল খেলা আর্জেন্টিনাকে দ্বিতীয়বার ফাইনাল খেলার জন্য অপেক্ষা করতে হয় ৩৮ বছর। এবার আসর বসেছিল নিজেদের মাটিতে। ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ছিল আধুনিক ফুটবলের ধারক নেদারল্যান্ডস। নির্ধারিত সময়ের খেলা ১-১ গোলে ড্র থাকার পর অতিরিক্ত সময়ের দুই গোলে আর্জেন্টিনা ৩-১ গোলে ম্যাচ জিতে প্রথমবারের মতো শিরোপা জয়ী দলের তালিকায় নাম লিখেয়েছিল। ৩৮ মিনিটে ক্যাম্পাসের গোলে এগিয়ে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। ৮২তম মিনিটে সেই গোল পরিশোধ করেন নান্নিঙ্গা। পরে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে ।১০৫ মিনিটে ক্যাম্পাস আবারো গোল করে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর ১১৫ মিনিটে বার্তোনির গোলে শিরোপা জয় নিশ্চিত হয় আর্জেন্টিনার।
দ্বিতীয়বার ফাইনাল খেলতে আর্জেন্টিনাকে ৩৮ বছর অপেক্ষা করতে হলেও তৃতীয়বার ফাইনাল খেলতে খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি। আট বছরের মাথায় তারা খেলে ফাইনাল। ফুটবল বিশ্বের নতুন জাদুকর ম্যারাডোনা ছিলেন তার কারিগর। তার একক নৈপুণ্যে আর্জেন্টিনা শুধু ফাইনালেই উঠেনি শিরোপাও করে নেয় নিজেদের। পশ্চিম জার্মানির সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর আর্জেন্টিনা ম্যাচ জিতেছিল ৩-২ গোলে। এক পর্যায়ে আর্জেন্টিনা ২-০ গোলে এগিয়ে থাকার পরও খেলা সমতায় নিয়ে আসে জার্মানি। ২৩ মিনিটে ব্রাউন ও ৫৬ মিনিটে ভালডানোর গোলে এগিয়ে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু সাত মিনিটের ব্যবধানে গোল দুটি পরিশোধ করে জার্মানি। গোল করেন রোমানিগে ও ভয়লার। কিন্তু ৩ মিনিট পরই ৮৪ মিনিটে বুরচাগা যে গোল করেন তাতেই দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা উঠে আর্জেন্টিনার ঘরে।
ফুটবলের যাদুকর ম্যারাডোনার নৈপুণ্যে ১৯৯০ সালে পরের আসরেও ফাইনাল খেলে আর্জেন্টিনা ।প্রতিপক্ষ ছিল সেই পশ্চিম জার্মানি। এবার আর তারা পারেনি জার্মানির সঙ্গে। গোল শূন্য ভাবে যখন খেলা শেষের দিকে গড়াচ্ছিল তখনই ৮৫তম মিনিটে রেফারির বিতর্কিত পেনাল্টি থেকে ব্রেহেমেহ গোল করে। সেই গোল আর আর্জেন্টিনার পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি।
এরপর ফাইনাল খেলার জন্য আবারো আর্জেন্টিনার লম্বা বিরতি। ২৪ বছরের অপেক্ষা। ২০১৪ সালে আসর বসেছিল ব্রাজিলে। ম্যারাডোনার যোগ্য উত্তরসূরী ফুটবলের খুঁদে জাদুকর মেসির নৈপুণ্যে আর্জেন্টিনা উঠে যায় ফাইনালে। প্রতিপক্ষ আবারও সেই জার্মানি। এবার জার্মানির কাছে হার মানে মেসির আর্জেন্টিনা। নির্ধারিত সময় খেলা ছিল গোলশূন্য। তারপর খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। আর তখনই ম্যাচের বন্ধ্যাত্ব দূর হয় ১১৩ মিনিটে গোয়েটজের গোলে।
এক আসর পর আর্জেন্টিনা আবার ফাইনালে। এই পর্যায়ে আসতে আবারও ভূমিকা রেখেছেন ফুটবলের সেই খুঁদে জাদুকর মেসি। এবার তাদের প্রতিপক্ষ ফ্রান্স। সেই সঙ্গে মেসিরও শেষ বিশ্বকাপ। ম্যারাডোনার হাত ধরে আর্জেন্টিনা কাপ জিতলেও তার সেই সৌভাগ্য এখনো হয়নি। এখন অপেক্ষার পালা। মেসির হাতে শিরোপা উঠবে, কি উঠবে না?
এমপি/এসআইএইচ