সেঞ্চুরির প্রত্যাশা ছিল না জাকিরের!
টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের অবস্থা খুবই নাজুক। এমনই নাজুক যে দৈব্যক্রমে কোনো দেশের বিপক্ষে একটি টেস্ট জিতলে পরের টেস্ট গিয়ে আবার নাকানি-চুবানি খায়। ওয়ানডে ক্রিকেটে যেখানে বাংলাদেশ বাহাদুরি দেখায়, টেস্ট ক্রিকেটে সেখানে আবার নতজানু অবস্থা। সেই বাংলাদেশকে ভারতের মতো দল টার্গেট দিয়েছে ৫১২ রান অতিক্রম করার। এমন বিশাল টার্গেট অতিক্রম করে জয়ের নজির বিশ্বে নেই। জিততে হলে বাংলাদেশকে করতে হবে বিশ্ব রেকর্ড। কিন্তু বাংলাদেশ কেন, বিশ্বের যে কোনও শক্তিশালী দেশের পক্ষেই তা করা এক কথায় অসম্ভব। তারপরও তিন কাঠির খেলায় শেষ বলে কোনও কথা নেই। হয়নি বলে যে হবে না তা কিন্তু নয়। যে কোনও কিছু ঘটতেও পারে। বিশ্ব রেকর্ডতো এভাবেই হয়। তাই বলে বাংলদেশ দল যে অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে তাদের পক্ষে এই সময়ে তা সম্ভব নয়। তাই এমন টার্গেটের পেছনে ছুটে দেখার বিষয় হয়ে উঠে বাংলদেশ কতদূর যতে পারে। হারের ব্যবধান কতটা কমিয়ে আনতে পারে। সেখানে বাংলাদেশ তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলে ব্যাট করতে নেমে পঞ্চম দিন পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে পেরেছে। চতুর্থ দিন পুরোটা ব্যাট করে ছয় উইকেট হারিয়ে রান যোগ করেছে ২৩০। আগের দিনের রান ছিল বিনা উইকেটে ৪২। বাংলাদেশের সংগ্রহ ছয় উইকেটে ২৭২।
এই যে বাংলাদেশ পঞ্চম দিন ম্যাচকে টেনে নিয়ে যেতে পেরেছে তার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব অভিষেক টেস্ট খেলতে নামা ওপেনার জাকির হাসানের। তার ২২৪ বলে ১৩ চার আর এক ছক্কায় সাজানো ছিল পাক্কা ১০০ রানের ইনিংসটি। অভিষেকেই সেঞ্চুরি করতে পেরে বেজায় খুশি জাকির। ‘আলহামদুল্লিাহ’ বলে শুকরিয়া আদায় করেছেন। দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি বলেন, ‘আলহামুদল্লিাহ। সেঞ্চুরি করতে পেরে ভালো লাগছে।’
একজন ব্যাটসম্যানের চির আরাধ্য সেঞ্চুরি করা। অভিষেক ম্যাচে সেই স্বপ্নটি আরও বেশি করে ফুলে-ফেঁপে উঠে। কিন্তু জাকির সে রকম কিছু আশা করেননি। তিনি বলেন, ‘প্রত্যাশা (সেঞ্চুরির) ছিল না। চেষ্টা ছিল যতক্ষন ব্যাটিং করা যায়। দুই দিন আছে। আমাদের সামনে বিগ একটা টার্গেট।’
ভারতের বিপক্ষে জাকির অভিষেকে যে সেঞ্চুরি করেছেন, সেখানে সুযোগ পাওয়ার পেছনে রয়েছে ভারতীয় দলই। বাংলাদেশ সফরে আসা তাদের ‘এ’ দলের বিপক্ষে কক্সবাজারে জাকির খেলেছিলেন ১৭৩ রানের দৃষ্টিনন্দন ইংনিংস। এমনিতেই ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি নিয়মিত পারফর্মার। সেখানে আবার ভারতের ‘এ’ দলের বিপক্ষে এমন সেঞ্চুরি। যে সেঞ্চুরি আবার দলকে বাঁচিয়েছিল হারের হাত থেকে। এমন সেঞ্চুরি করার পর নির্বাচকরা তাকে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ডাকতে আর বিলম্ব করতে হয়নি। এ নিয়ে জাকির বলেন, ‘ভারতের বিপক্ষে ওই ইনিংসের জন্য তো কনফিডেন্স ছিলই মনের ভেতরে। প্রসেস অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করেছি। ঐটাই ব্যাক অব দ্য মাইন্ডে ছিল যে আমাকে ওই প্রসেসটা ঠিক রেখে খেলতে হবে, সেটাই করেছি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যে মাইন্ডে খেলেছি এখানেও সেই একইভাবে খেলেছি। আমি চিন্তা করতে চাইনি অনেক বড় বা টেস্ট ম্যাচ। চেষ্টা করেছি যতটা যতটা সহজ থাকা যায়। ৯০ ঘরে থাকার সময় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে যেমন মনোযোগ দিয়ে খেলি আজ সেভাবে রাখার চেষ্টা করেছি।’
সেঞ্চুরি করার পর জাকিরের অভিন্দনের জোয়ারে ভাসছেন। মাঠেই পেয়েছেন সময়ের সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলির অভিবাদন। তিনি জাকিরের কাছে গিয়ে তাকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ‘ সংবাদ সম্মেলনে এ নিয়ে তিনি বলেন. ‘উনি (কোহলি) আমাকে কনগ্রেস জানান। আমি থ্যা্ঙ্কস জানাই। ‘পরে সংবাদ সম্মেলনে আসার পথে মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা ‘দ্যা ওয়াল’ খ্যাত ভারতীয় দলের কোচ রাহুল দ্রাবিড়ও এগিয়ে এসে তাকে অভিন্দনে ভাসান। জাকির বলেন, ‘স্যার (দ্রাবিড়) বলেছেন যে, ‘খুব ভালো ব্যাটিং করেছ।’
এমপি/এএস