ব্যাটিং বিপর্যয়ে ফলোঅনের মুখে বাংলাদেশ
ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলেই বাংলাদেশ যে উইকেট হারিয়েছিল, সেই উইকেট পতন রোধ করতে পারেনি পরের ব্যাটসম্যানরাও। চা বিরতির আগে ১০ ওভার খেলে উইকেট পড়েছিল দুটি। শেষ সেশনে উইকেট পড়েছে ছয়টি। পড়েছে ফলোঅনের মুখে। ভারতকে ৪০৪ রানে অলআউট করে দেওয়ার পর দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪৪ ওভারে আট উইকেটে ১৩৩ রান। ফলোঅন এড়াতে হলে বাংলাদেশকে করতে হবে আরও ৭১ রান। উইকেটে আছেন মিরাজ ১৬ ও এবাদত ১৩ রানে।
দ্বিতীয় দিন উইকেট পড়েছে ১৪টি। ভারতের চারটি বাংলাদেশের আটটি। উইকেট দখলে প্রাধান্য ছিল দুই দলের স্পিনারদের। ভারতের চার উইকেটের তিনটি নিয়েছেন বাংলাদেশের স্পিনাররা। বাংলাদেশের পতন হওয়া আট উইকেটের চারটি ছিল স্পিনারের। উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যেরকম অস্বস্তি বোধ করছেন, দ্বিতীয় ইনিংসে তা কাটিয়ে উঠতে না পারলে তৃতীয় দিনেই খেলার যবনিকা ঘটতে পারে! সাকিবদের ললাটে লেখা হয়ে যাবে ইনিংস ব্যবধানে আরেকটি বড় হার।
ভারতের ইনিংস ৪০৪ রানে শেষ হওয়ার পথে বাংলাদেশের দুই স্পিনার তাজুল ইসলাম ও মেহেদি হাসান মিরাজ বেশ দাপট দেখিয়েছিলেন। দুজনে চারটি করে উইকেট ভাগাভাগি করে নিয়েছিলেন। বাকি দুটি ছিল দুই পেসার খালেদ ও এবাদতের। বাংলাদেশের ইনিংসে ছিল ভারতের পেস ও স্পিনের সম্মিলিত আক্রমণ। বাঁহাতি স্পিনার কুলদীপ যাদব একাই নেন চার উইকেট। দুই পেসার মোহাম্মদ সিরাজ তিনটি ও উমেশ যাদব নেন একটি উইকেট। ভারতের পেস ও স্পিন আক্রমণ মোকাবিলা করা সম্ভব হয়নি সাকিব বাহিনীর। শামিল হন উইকেটে আসা-যাওয়ার মিছিলে। যেভাবে উইকেট পতন শুরু হয়েছিল, তাতে করে বাংলাদেশের অলআউট হওয়ারই সম্ভাবনা জেগে উঠেছিল। কিন্তু নবম উইকেট জুটিতে মিরাজ ও এবাদত প্রতিরোধ গড়ে তুললে বাংলাদেশ অলআউট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায়। দুই জনে ৯ ওভার খেলে মিরাজ ১৬ ও এবাদত ১৩ রান করে অপরাজিত।
ভারতের ব্যাটিং বিপর্যয়ের পরও তিনটি হাফ সেঞ্চুরি দলকে মজবুত অবস্থা নিয়ে গিয়েছিল। তিনটি হাফ সেঞ্চুরি দুইটি ছিল সেঞ্চুরি কাছাকাছি। পুজারা ৯০ ও শ্রেয়াস ৮৬ রান করেছিলেন। ৫৮ রান করেছিলেন অশ্বিন। বাংলাদেশের ইনিংসে সর্বোচ্চ রান ছিল মুশফিকুর রহিমের ২৮। এ ছাড়া লিটন দাস ২৪ ও জাকির হাসান ২০ রান করেন।
বাংলাদেশের পতন শুরু হয় ইনিংসের প্রথম বলেই। ফর্মে ফেরার জন্য লড়াই করতে থাকা নাজমুল হাসান শান্তকে উইকেটের পেছনে রিসাভ পন্থের ক্যাচে পরিণত করেন মোহাম্মদ সিরাজ। টেস্ট ক্রিকেটে ইনিংসের প্রথম বলেই আউট হওয়া নাজমুল হোসেন শান্ত হলেন বাংলাদেশের পঞ্চম ব্যাটসম্যান। এর আগে হান্নান সরকার তিনবার, জাভেদ ওমর বেলুন গুল্লো দুইবার এবং নাফিস ইকবাল ও তামিম ইকবাল একবার করে ইনিংসের প্রথম বলে আউট হয়েছিলেন। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো তিনে ব্যাট করতে নামা ইয়াসির আলীও খুব বেশি সময় টিকতে পারেননি ।ব্যক্তিগত চার রানে তাকেও সাজ ঘরে দেখিয়ে দেন উমেশ যাদব। এই বিপর্যয়ে লিটন দাস অভিষিক্ত জাকিরকে নিয়ে কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু খুব বেশি দূর যেতে পারেননি। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৩৪ রান যোগ হয়ে আসার পর মোহাম্মদ সিরাজের একটি ইনসুইং বলে লিটনের স্ট্যাম্প উপরে যায়। ভয়ঙ্কর হয়ে উঠা মোহাম্মদ সিরাজ একটু পর জাকিরকেও সাজ ঘর চিনিয়ে দেন। উইকেটের পিছনে তার ক্যাচ নেন রিসাভ পন্হ।
দুই পেসার মিলে বাংলাদেশের টপ অর্ডারের চার ব্যাটসম্যানকে আউট করার পর শুরু হয় ভারতের স্পিন ভেল্কি এবং সেই ভেল্কি একাই দেখান কুলদীপ যাদব পরের চার উইকেট নিয়ে। অধিনায়ক সাকিব এসেও অস্বস্তিতে ছিলেন। ব্যক্তিগত তিন রানে কুলদীপের বলে স্লিপে কোহলির হাতে ক্যাচ দিয়ে তিনি ফিরে আসেন। দলের রান তখন ৫ উইকেটে ৭৫। মুশফিক-নুরুল হাসান আবার চেষ্টা করেন এই বিপর্যয়ের কাটিয়ে উঠতে। সর্বশেষ উইন্ডিজ সফরে দুই টেস্টেই দুর্দান্ত ব্যাটিং করা নূরুল হাসান সোহান এবারও সে রকম শুরু করেছিলেন। কিন্তু ব্যক্তিগত ১৬ রানে তাকেও ফিরিয়ে দেন কুলদীপ যাদব। শর্ট লেগে তার ক্যাচ নেন শুভমান গিল। মুশফিকুর রহিম ধৈর্য ধরে তখনও উইকেটে টিকে থাকায় এবং ওয়ানডে সিরিজের সেরা খেলোয়াড় ব্যাট হাতে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখানো মিরাজ ক্রিজে আসায় কিছুটা আশার আলো তখনও ছিল। কিন্তু নুরুল হাসান সোহান আউট হওয়ার পাঁচ রান পরে মুশফিকুর রহিমকেও কুলদীপ আউট করে দিলে সব আশা শেষ হয়ে যায়। তখনো দিনের ৯ ওভার খেলা অবশিষ্ট থাকায় বাংলাদেশের অলআউট হওয়ার শঙ্কা জেগে উঠেছিল। কিন্তু সেই শঙ্কা সত্য প্রমাণ হতে দেননি সেই মিরাজই। এবাদতকে নিয়ে তিনি বাকি ৯ ওভার নির্বিঘ্নে পার করে দেন। অবিচ্ছিন্ন থেকে রান যোগ করেন ৩১। কুলদীপ ৩৩ রানে নেন চার উইকেট। মোহাম্মদ সিরাজ তিন উইকেট নিতে খরচ করেন মাত্র ১৩ রান। উমেশ যাদবের এক উইকেটে নিতে রান খরচ হয়েছে ৩৩।
এমপি/আরএ/