হার এড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামবে বাংলাদেশ
বিশ্ব ক্রিকেট ভারত এক লোভনীয় নাম। যেকোনো দেশই ভারতের বিপক্ষে খেলার জন্য অপেক্ষায় থাকে। বাংলাদেশের জন্যতো আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো।
ভারতের বিপক্ষে ঘরের মাঠে ২০০০ সালে অভিষেক টেস্ট খেলার পরও ভারতের মাটিতে বাংলাদশকে প্রথম টেস্ট খেলার জন্য ১৬ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। সেই ভারত এখন বাংলাদেশে। সমস্ত ধ্যান-জ্ঞান খেলাকেই নিয়ে থাকার কথা।
কিন্তু বিশ্বকাপ ফুটবল তা কেড়ে নিয়েছে। যে কারণে চট্টগ্রামে প্রথম টেস্টকে সামনে রেখে কোচ রাসেল ডমিঙ্গোকে বলতে হয়েছে সাকিবরা যেন রাত জেগে আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়ার সেমি ফাইনাল খেলা না দেখেন। যদি কেউ দেখে সেটা ‘স্টুপিড’ হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তার এ কথাই বুঝা যাচ্ছে ক্রিকেটারদের পূর্ণ মনোনিবেশ নেই টেস্ট সিরিজ নিয়ে। তারপরও কিন্তু টেস্ট মাঠে গড়াবে। চট্টগ্রামে কাল (বুধবার) সকাল সাদে নয়টায় মাঠে গড়াবে প্রথম টেস্ট।
দুই দেশের এটি হবে ১২তম মোকাবিলা। আগের ১১ বারে নয় বারই জয়ী দলের নাম ভারত। প্রতিটি জয় ভারত পেয়েছিল সহজেই। ইনিংস ব্যবধানে জয় ছিল পাঁচটি। নয় উইকেটে জয় একটি। বাকি তিনটি রানের ব্যবধানে। প্রতিটিই ছিল শতরানের উপরে। বাকি দুইটি টেস্ট ড্র হয়েছিল। এই দুইটি ড্র হওয়ার পেছনে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ছিল না কোনো অবদান। ক্রিকেটের আজন্ম শক্র বৃষ্টি এসে বাড়িয়ে দিয়েছিল সহায়তার হাত।
ভারতের বিপক্ষে এই সামারিই বলে দেয় সাদা পোষাকে লাল বলের ক্রিকেটে বাংলাদেশের দুর্বলতা কতটা গভীরে। এই দুর্বলতার কারণেই ওয়ানডে সিরিজ জেতার পরও বাংলাদেশ টেস্ট জেতার কথা ভাবনায় রাখেনি। যতটা সম্ভব ভালো খেলা। লড়াই করে হার এড়ানো। স্বচ্ছ কাঁচের মতো কোচ ডমিঙ্গোর কথায় ফুঠে উঠেছে তা, ‘আমাদের জয়ের কথা ভাবার আগে হার এড়ানোর কথা ভাবতে হবে। কারণ টেস্টে এখনো প্রতিপক্ষ আমাদের বিপক্ষে সহজেই জয় পায়।
বাংলাদেশ বছর শুরু করেছিল জয় দিয়েই। তারপরও কোচ ডমিঙ্গো এ কথা বলেছেন। কারণ, টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ এ রকম জয় মাঝে মাঝে। কিন্তু পরের টেস্টে গিয়েই আবার মাটিতে নেমে আসে। হার মানে চির চেনা বড় ব্যবধানে! মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউজিল্যান্ডকে আট উইকেটে হারানোর পরও পরের টেস্ট বাংলাদেশ হেরেছিল ইনিংস ও ১১৭ রানে। এরপর চলতি বছর বাংলাদেশ খেলেছে আরও ছয়টি টেস্ট। পাঁচটিতেই হেরেছে বড় ব্যবধানে। একটি মাত্র টেস্ট ড্র করতে পেরেছিল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।
ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট বাংলাদেশ খেলেছিল তাদের মাটিতে। ইন্দোরে প্রথম টেস্ট ছিল গতবারের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট। হেরেছিল ইনিংস ও ১৩০ রানে। কলকাতার ইডেন গার্ডেনে পরের টেস্ট ছিল টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পাশাপাশি গোলাপি বলে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট।
এই টেস্ট দেখতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বয়ং মাঠে উপস্থিত ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও ছিলেন মাঠে। কিন্তু বাংলাদেশ এবারও হার মেনেছিল ইনিংস ব্যবধানে। টেস্ট শেষ হয়েছিল মাত্র তিনদিনে। এবারও দু্ই টেস্টের সিরিজ বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ।
গতবারের রানার্সআপ ভারতের ফাইনালে যাওয়ার প্রশ্নে খুবই গুরুত্বপূর্ন তাদের কাছে এই সিরিজ। ১২ ম্যাচে ৭৫ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলে তাদের অবস্থান চারে। শতভাগ জয় নিয়ে তারা চাইবে ফাইনালে যাওয়ার পথে নিজেদের এগিয়ে রাখতে। বাংলাদেশের জন্য হারানোর কিছু নেই। টেস্ট ক্রিকেটে হঠাৎ করে ভালো ‘তথ্য’ যদি নিয়ে হাজির হতে পারে, তাহলে হয়তো কিছুটা একটা হতে পারে। ১০ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলে সবার নিচে থাকা অবস্থানের উন্নতিও ঘটতে পারে। কারণ বর্তমান চ্যাম্পিয়ন নিউ জিল্যান্ড নয় ম্যাচে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে আছে বাংলাদেশের ঠিক উপরে।
প্রথম টেস্টে বাংলাদেশ পূর্ণ শক্তির দল নিয়ে নামতে পারছে না। ইনজুরির কারণে নেই নিয়মিত ওপেনার তামিম ইকবাল। তার পরিবর্তে অভিষেক হওয়ার সম্ভাবনা আছে ঘরোয়া ক্রিকেটে নজর কাড়া নৈপুণ্য দেখানো জাকির হাসানের। অভিষেক হলে তিনি হবেন বাংলাদেশের ১০১তম টেস্ট ক্রিকেটার। মাহমুদুল হাসার জয়ের সঙ্গে তিনি করবেন ওপেন। দলে নেই তাসকিনও। কারণ, তারও ইনজুরি। অধিনায়ক সাকিবকে নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল। শেষ মুহূর্তে তা কেটে গেছে। তিনি খেলবেন। টস করবেন। ইনজুরির কারণে সাকিবের না খেলা হলে সে ক্ষেত্রে টস করতেন লিটন দাস। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান মুমিনুল হকের একটা সুযোগ হতে পারে আবার সেরা একাদশে। যদিও তিনি ভালো ফর্মে নেই। তিনি খেললে নাজমুল হোসেন শান্তকে সরে দাঁড়াতে হতে পারে। আবার এমনও হতে পারে নুরুল হাসান সোহানকে সেরা একাদশে না রাখা। কারণ, সর্বশেষ উইন্ডিজ সফরে পবি্র হজ করতে যাওয়ার কারণে মুশফিকুর রহিম ছুটিতে থাকায় তার পরিবর্তে কিপিং করেছিলেন নুরুল হাসান সোহান। এবার মুশফিকুর রহিম আছেন দলে। বাংলাদেশ খেলবে দুই পেসার ও তিন স্পিনার নিয়ে। দুই পেসার হলেন এবাদত হোসেন ও সৈয়দ খালেদ আহমেদ। সাকিবের সঙ্গে অপর দুই স্পিনার হলেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম।
এমপি/এমএমএ/