ভারতকে ফের হোয়াইটওয়াশ করা হলো না বাংলাদেশের
আকাশ থেকে যেন মাটিতে নেমে আসল বাংলাদেশ। ফিরিয়ে আনল ২০১৫ সাল। প্রথম দুই ম্যাচ জিতে তৃতীয় ম্যাচে ভারতকে হোয়াইটওয়াশ করার স্বপ্ন দেখেছিল বাংলাদেশ। সেখানে উল্টো হেরেছিল ৭৭ রানে। ২০২২ সালেও বাংলাদেশে প্রথম দুই ম্যাচ জিতে আবারও ভারতকে হোয়াইটওয়াশ করার স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু এবারও হয়নি। এবারের অভিজ্ঞতা আরও বেশি লবণাক্ত। বাংলাদেশ হেরেছে ২২৭ রানে।
ভারতের ৮ উইকেট করা ৪০৯ রানের পাহাড় টপকাতে গিয়ে বাংলাদেশ মুখ থুবড়ে পড়ে ৩৪ ওভারে মাত্র ১৮২ রানে অলআউট হয়ে। ২২৭ রানের ব্যবধানে ভারতের কাছে হার বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হার। আগের হার ছিল ২০০৩ সালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে টিভিএস কাপ টুর্নামেন্টে ২০০ রানে।
প্রথম দুই ম্যাচ বাংলাদেশ স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কেটে জিতেছিল। একটি ছিল নিশ্চিত হার। পরেরটি ব্যাটিং ব্যর্থতার বলয় থেকে বের হয়ে এসে। পরপর দুই ম্যাচে এরকম জয়ে বাংলাদেশের পালে হাওয়া লেগেছিল ভারতকে হোয়াইটওয়াশ করার। ইনজুরির কারণে ভারতীয় দলে আবার ছিলেন না নিয়মিত অধিনায়ক রোহিত শর্মা। রোহিতকে হারিয়ে ভারতের ব্যাটিং লাইন কিছুটা হলেও দুর্বল ছিল। তার পরিবর্তে নতুন করে আবার কাউকে ডাকাও হয়নি। দলে যা আছে তাই দিয়ে করা হবে পূরণ। অনুকূলে টসও জিতে বাংলাদেশ। যা ছিল সিরিজে টানা তৃতীয়। টস জিতে মনের মতো সিদ্ধান্তও নেন অধিনায়ক লিটন দাস। সবকিছুই ছিল বাংলাদেশের অনুকূলে। কিন্তু খেলাটাই শুধু বাংলাদেশ নিজেদের অনুকূলে আনতে পারেনি। ভারতকে হোয়াইটওয়াশ করতে নেমে নিজেরাই লন্ডভন্ড হয়ে যায়।
বাংলাদেশকে আসলে লন্ডভন্ড করে দেন রোহিতের পরিবর্তে খেলতে নামা ওপেনার ইশান কিশান। তার বিশ্বরেকর্ড গড়া দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরিই বাংলাদেশের স্বপ্ন বঙ্গোপসাগরে ডুবে যায়। ইশানের মাত্র ১৩১ বলে ২৪ বাউন্ডারি আর ১০ ওভার বাউন্ডারিতে করা ২১০ রানই বাংলাদেশের সবাই মিলে করতে পারেননি। ফলশ্রুতিতে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও যায় তার হাতে। সিরিজ সেরা হয়েছেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
যে উইকেটে ভারতের ব্যাটসম্যানরা রানের ফুল ফুটিয়েছেন, সেই উইকেটেই বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা হাবুডুবু খেয়েছেন। প্রথম দুই ম্যাচ জিতলেও বাংলাদেশ ব্যাটিং ব্যর্থতায় পড়েছিল। দুইবারই ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন মিরাজ। সঙ্গী হিসেবে একবার পেয়েছিলেন মোস্তাফিজকে, পরেরবার মাহমুদউল্লাহকে। কিন্তু এবার আর কাউকে বিপর্যয়ে হাল ধরতে পায়নি বাংলাদেশ। যে কারণে শেষ ৫ উইকেট হারায় মাত্র ৩৯ রানে।
ভারত যখন আগে ব্যাট করে ইশানের ২০৯ রানের সঙ্গে ৪৪ ম্যাচ পর সেঞ্চুরি পাওয়া বিরাট কোহলির ১১৩ রানে ৮ উইকেটে ৪০৯ রানের পাহাড় গড়ে তুলেছিল, তখনই ম্যাচের চিত্রনাট্য এক প্রকার লেখা হয়ে গিয়েছিল। বাকি ছিল দেখার বিষয় বাংলাদেশ হারের ব্যবধান কতটা কমিয়ে আনতে পারে। সেখানে তারা তা পারেনি।
বাংলাদেশেন ব্যাটসম্যানদের এই না পারার কারণ ছিল বলা যায় অনেকটা উইকেটের চরিত্র পরিবর্তন হওয়া। ইশান ও কোহালি সাবলীল ব্যাটিং করে রান করতে থাকলেও ৩৫ ওভার পর তাদের সেই বিচরণ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা আসে। এসময় ওভারপ্রতি রান ছিল ৮.৪২৮ করে। এরপর দুইজনেই আউট হয়ে যায়। উইকেটও পড়তে থাকে দ্রুত। শেষ ১৫ ওভারে তারা ইশান-কোহলিসহ উইকেট হারায় ৭টি। রান সংগ্রহও কমে আসে। শেষ ১৫ ওভারে রান যোগ হয় ১১৪। ওভারপ্রতি ৭.৬ করে। যে কারণে যেখানে আরও বেশি হওয়ার কথা ছিল তা থেমে যায় ৪০৯ রানে। উইকেটের চরিত্রের এই পরিবর্তনই প্রভাব ফেলে বাংলাদেশের ইনিংসে।
বাংলাদেশের শুরুটা ছিল মারমুখী। ৪ ওভারেই রান চলে আসে ৩৩। কিন্তু এরপরই প্রথমে এনামুল, পরে লিটন দাস আউট হয়ে গেলে শুরু হয় বাংলাদেশের আসা-যাওয়ার মিছিল। সেই মিছিলের মাঝে দাঁড়িয়ে সাকিব ৪৩, ইয়াসির আলী ২৫, মাহমুদউল্লাহ ২০ রান করেন। ১৪৯ রানে যখন বাংলাদেশের নবম উইকেট পড়ে, তখন ভারতের সামনে রানের ব্যবধানে সবচেয়ে বড় জয়ের হাতছানি। তাদের আগের সর্বোচ্চ জয় ছিল বারমুডার বিপক্ষে ২০০৭ সালে ২৫৭ রানে। কিন্তু বাংলাদেশকে সেই লজ্জা থেকে রক্ষা করেন শেষ উইকেট জুটিতে তাসকিন ও মোস্তাফিজ ৩৩ রান যোগ করলে। মোস্তাফিজ ২ বাউন্ডারিতে ১৩ রান করে আউট হলেও তাসকিন ১৬ বলে ২ বিশাল ছক্কায় ১৭ রান করে অপরাজিত থাকেন। শার্দুল ঠাকুর ৩০ রানে নেন ৩ উইকেট। অক্ষর প্যাটেল ২২ ও ওমরান মালিক ৪৩ রানে নেন ২টি করে উইকেট।
এমপি/এসজি