বাংলাদেশের বিপক্ষে ইশানের বিশ্বরেকর্ড
একেই বলে সুযোগ কাজে লাগানো। কিংবা বলা যায় কারও পৌষ মাস কারও সর্বনাশ। ইনজুরির কারণে অধিনায়ক রোহিত শর্মা দেশে ফিরে যাওয়ায় বাংলাদেশের বিপক্ষে চট্টগ্রামে শেষ ওয়ানডেতে খেলার সুযোগ পান ইশান কিশান। সেই সুযোগকে কীভাবে কাজে লাগাতে হয় তা তিনি দেখালেন বিশ্বরেকর্ড করে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে।
২৪ বছর বয়সী মুম্বাইয়ের এই ওপেনার ভারতীয় দলে জায়গা করে নিলেও এখনো নিয়মিত হতে পারেননি। ২০২১ সালে কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচে করেছিলেন ৫৯ রান। তারপরও ব্যাটসম্যানদের খনিতে ভরা ভারতীয় দলে তিনি নিজেকে নিয়মিত করে তুলতে পারেননি। ছিলেন আসা-যাওয়ার মধ্যে। বাংলাদেশের বিপক্ষে চট্টগ্রামে আজ মাঠে নামার আগে তিনি ৯টি ম্যাচ খেলে ৩টিতে হাঁকিয়ে ছিলেন হাফ সেঞ্চুরি। যার একটি ছিল ৯৩ রানের। রোহিত শর্মা ইনজুরিতে না পড়লে তাকে হয়তো না খেলেই দেশে ফিরে যেতে হতো। কারণ তিনি এখনো সুযোগ পাননি টেস্ট দলে। তবে টি-টোয়েন্টি দলে তিনি আবার খেলে থাকেন।
রোহিত শর্মার অনুপস্থিতিতে সুযোগ পেয়ে সেটিকে ভালোভাবে কাজে লাগিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়া ইনিংস খেলার পরও ইশানের কিন্তু নিশ্চয়তা নেই যে ভারতীয় দলে তিনি নিয়মিত হতে পারবেন।
আজ তিনি যে ইনিংস খেলেছেন তা ছিল দলের বাজে শুরুর পর। প্রথম দুই ম্যাচ হেরে সিরিজ খোয়ানো ভারতের সামনে ছিল হোয়াইটওয়াশ এড়ানো। সেখানে যদি দলীয় ১৫ রানে ওপেনার শেখর ধাওয়ানকে হারাতে হয় তখন তো মনে ভীতিটা একটু হলেও জেগে উঠে। কিন্তু সেই ভীতিকে আর গাঢ় হতে দেননি ইশান। সঙ্গী হিসেবে পেয়ে গিয়েছিলেন অভিজ্ঞ বিরাট কোহলিকে।
ইশানের এক ইনিংসই ভারতের অবস্থা যেমন পাল্টে দেই, তেমনি রেকর্ড বইয়ের পাতাও ওলট-পালট করে দেয়। মাত্র ১২৬ বলে করেছেন ওয়ানডে ক্রিকেটের দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরি। এই সেঞ্চুরি বয়সের হিসেবেও যেমন তিনি সবার চেয়ে কম তেমনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ক্যারিয়ারের বয়সের বিবেচনায়ও।
ইশানের এ ডাবল সেঞ্চুরি ছিল ওয়ানডে ক্রিকেটে নবম। এই ৯টির ৬টিরই মালিক আবার ভারতীয়রা। অধিনায়ক রোহিত শর্মারই একা তিনটি। তার তিনটি ইনিংস হলো ২৬৪, ২০৯ ও অপরাজিত ২০৮। এর মাঝে ২৬৪ রান আবার ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ। বাকি তিনটি ইশান ছাড়া শচিন টেন্ডুলকার ও বীরেন্দ্র শেবাগের। শেবাগ ২১৯ ও টেন্ডুলকার অপরাজিত ২০০ রান করেছিলেন। ভারতের বাইরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল (২১৫) ছাড়া ডাবল সেঞ্চুরি করা অপর দুইজন হলেন নিউজিল্যান্ডের মার্টিন গাপটিল ও পাকিস্তানের ফখর জামান। গাপটিলের অপরাজিত ২৩৭ রান আবার ব্যক্তিগত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। ফখর জামানের ইনিংসটি ছিল অপরাজিত ২১০ রানের।
ইশান যে ডাবল সেঞ্চুরি করতে গিয়ে বিশ্বরেকর্ড করে ফেলবেন তা কিন্তু তার সেঞ্চুরি করা দেখে বোঝা যায়নি। তিনি সেঞ্চুরি করেছিলেন ৮৫ বলে। সেখান থেকে ডাবল সেঞ্চুরিতে যেতে বল খেলেন মাত্র ৪১টি। সেঞ্চুরি করার সময় ১৪টি চার ও দুটি ছক্কা ছিল। কিন্তু সেঞ্চুরি থেকে ডাবল সেঞ্চুরিতে পৌঁছাতে চার মারেন ৯টি ও ছক্কা ছিল ৭টি। ডাবল সেঞ্চুরি করার পর তিনি আরও আগ্রাসী হয়ে উঠছিলেন। কিন্তু এসময় তাকে আর খুব বেশি বাড়তে দেননি তাসকিন। ২১০ রানে সাঙ্গ হয় তার ইনিংস। ১৩১ বলে সাজানো ইনিংসে ছিল ২৪টি বাউন্ডারি ও ১০টি ওভার বাউন্ডারি।
বিশ্বরেকর্ড গড়ে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করতে ইশান বাংলাদেশকে বেছে নেওয়ার পর কোহলিকে নিয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে যেকোনো জুটিতেও করেছেন আরেকটি নতুন রেকর্ড। তাদের ২৯০ রানের জুটি পেছনে পড়ে গেছে হাসিম আমলা ও কুইন্টন ডি ককের করা ২৮২ রানের জুটির।
এমপি/এসজি