রোহিতের ক্যাচ মিসের পরও মিরাজের বিশ্বাস ছিল জেতার
ভারতের বিপক্ষে দুটি জেতা ম্যাচেই কাকতালীয়ভাবে বেশ কিছু সামঞ্জস্য মিলে গেছে। দুটি ম্যাচই বাংলাদেশ জিতেছে নাজুক অবস্থা থেকে। এসব জায়গা থেকে ম্যাচ জেতা সব সময় হয় না। বাংলাদেশ পরপর দুই ম্যাচে তা করে দেখিয়েছে। আবার দুটি ম্যাচের শেষ দৃশ্যেও বেশ মিল আছে। প্রথম ম্যাচে শেষ উইকেট জুটিতে মোস্তাফিজকে নিয়ে মিরাজ যখন ৫১ রানের আকাশছোঁয়া টার্গেটের পেছনে ছুটছেন, তখন তিনি দলীয় ১৫৫ ও ব্যক্তিগত ১৫ রানে জীবন পেয়েছিলেন উইকেটকিপার লুকেশ রাহুলের হাতে সহজ ক্যাচ ফসকে যাওয়ায়। ভারতকে তার মাশুল দিতে হয়েছিল এক রানে ম্যাচ হেরে। মিরাজ অপরাজিত ছিলেন ৩৮ রানে।
এবার এ কাজটি করেন বাংলাদেশের ফিল্ডাররা। বাংলাদেশের জেতা ম্যাচ ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মার আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের কারণে হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম। ৪৯তম ওভারে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে টার্গেট করে বেধড়ক পেটাচ্ছেন রোহিত। এই ওভারেই দুবার জীবন পান রোহিত। একবার এবাদত হোসেন, আরেকবার এনামুল হক বিজয় ক্যাচ মিস করেন। এবাদতের ক্যাচ কিছুটা কঠিন হলেও এনামুলের হাতে সরাসরি ক্যাচ গিয়েছিল। ভারত ম্যাচ জিতলে এই ক্যাচ ফেলার দায়টা তখন খুব বড় করে সামনে চলে আসত।
তবে মিরাজ পারলেও রোহিত পারেননি। জীবন পেয়ে তিনি শেষ বল পর্যন্ত দলের জয়ের সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। ছক্কা মারতে পারলেই মিরাজকে পাল্টা জবাব দেওয়া হয়ে যেত। কিন্তু মিরাজের বিশ্বাস ছিল রোহিত দুবার জীবন পাওয়ার পরও ম্যাচ জেতার। তিনি বলেন, ‘ক্রিকেটে ক্যাচ মিস হবেই। যে কেউ ক্যাচ মিস করতেই পারে। তারপরও আমাদের বিশ্বাস ছিল যে ম্যাচ জিততে পারব। শুধু একটা উইকেটের ব্যাপার ছিল। রোহিত আউট হয়ে গেলে কেবল বোলাররা ছিল। ওরা তো এতটা মারতে পারবে না। আমাদের বিশ্বাসটা ছিল যে উইকেট একটা পড়বেই।’
ফিল্ডিং করার সময় বাংলাদেশের ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ওপেনার এনামুল হক বিজয়ের ক্যাচ ধরতে গিয়ে রোহিত শর্মার বাম হাতের হাড় নড়ে যায়। যে কারণে তিনি আর ইনিংস উদ্বোধন করতে পারেননি। ভারতের ইনিংসে একটির পর একটি উইকেট পড়ছে কিন্তু রোহিত শর্মা আর আসছেন না। তবে দলের প্রয়োজন হলে তিনি যে ব্যাটিং করতে নামবেন সে ব্যাপারে বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা মনে মনে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন। শেষ পর্যন্ত তিনি নামের ৯ নম্বরে। আঘাতপ্রাপ্ত আঙুলে সেলাই। নেন ব্যথানাশক ইনজেকশন। তারপর তিনি ব্যাট হাতে নেন।
মিরাজ বলেন, ‘আমাদের মানসিক প্রস্তুতি ছিল যে রোহিত ব্যাটিং করতে পারে এবং সে যদি আসে, আমাদের বোলারদের পরিকল্পনা ছিল কীভাবে বল করব। অবশই সে ভালো খেলেছে। যেভাবে খেলেছে সে, ওদের জন্য ইতিবাচক ছিল।’ ৬৯ রনে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ বাংলাদেশের ২৭১ রানের ইনিংস নির্মাণ করেন। নিজেরা সপ্তম উইকেট জুটিতে যোগ করেন ভারতের বিপক্ষে যেকোনো জুটিতে সর্বোচ্চ ১৪৮ রান। নিজেদের জুটি নিয়ে মিরাজ বলেন, ‘রিয়াদ (মাহমুদউল্লাহ) ভাইয়ের সঙ্গে একটা কথাই হয়েছিল। আমরা ঠিক করিনি যে এত রান করতে হবে। আমরা শুধু বল টু বল খেলার চেষ্টা করেছি। পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করেছি। মাঝেমধ্যে রিয়াদ ভাই আমাকে বোঝাচ্ছিলেন, মাঝেমধ্যে আমি তাকে বোঝাচ্ছিলাম।’
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ অনেক সিনিয়র ক্রিকেটার হওয়ার পরও মিরাজের কথা শুনাতে নিজেকে অনেক সম্মানিত বোধ করেছেন তিনি। মিরাজ বলেন, ‘রিয়াদ ভাই সিনিয়র হয়ে আমাকে শ্রদ্ধা করেছেন, আমার কথা শুনেছেন। এটা আমার কাছে ভালো লেগেছে। রিয়াদ ভাই মাঝেমধ্যে যখন একটু চিন্তায় পড়ে যাচ্ছিলেন যে আক্রমণ করি, তখন আমি তাকে বোঝাচ্ছিলাম যে, এই পরিস্থিতিতে আক্রমণ না করে আমরা যদি আরেকটু দেখে শুনে খেলে এগিয়ে নিতে পারি তাহলে ভালো হবে। এই আলোচনাগুলো কাজে লেগেছে।’
মিরাজ-মাহমুদউল্লাহর জুটি ১৪৮ রানে থামে মাহমুদউল্লাহ ৭৭ রান করে আউট হলে। তখনো বাংলাদেশের ইনিংসের ওভার বাকি ৩.৫টি। দলের রান ২১৭। তাকে সঙ্গ দেওয়ার মতো নেই কোনো প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যান। সেসময় মিরাজের চিন্তা ছিল যতটা সম্ভব দলের রান বাড়িয়ে নেওয়া। ২৪০-২৫০ রান করা। তিনি বলেন, ‘(মাহমুদউল্লাহ আউট হওয়ার পর) আমার একটাই পরিকল্পনা ছিল ৫০ ওভার ব্যাট করব। রিয়াদ ভাই যখন আউট হয়ে গেলেন, তখন ভেবেছি রানটা যদি ২৪০-২৫০ পর্যন্ত নিতে পারি, তাহলে ভালো হবে। ২৩০ রানের খেলা একরকম, ২৫০ হলে আরেক রকম। ওখানে নাসুম ভাই অসাধারণ ব্যাট করেছে। উনি যে ২৫-৩০ রান (হবে ১৮ রান) করেছেন, দলের জন্য তা অনেক সহায়তা করেছে। বিশেষ করে রান যেখানে হতো ২৫০, সেখানে ২৭০ হয়েছে। এই কৃতিত্ব অবশ্যই নাসুম ভাইয়ের। তিনি ওখানে দ্রুত রান করেছেন। তার এই ছোট অবদান দলের জন্য জরুরি ছিল।’
এমপি/এসজি