ভারত বধ: মোস্তাফিজের পর নায়ক মিরাজ
ভারত সবচেয়ে জনপ্রিয় ও শক্তিশালী দল। আবার বিত্তের দিক দিয়েও বিশ্বে এক নম্বর। বাংলাদেশের টেস্ট প্রাপ্তিতে রয়েছে ভারতের অনেক সহযোগিতা। আবার টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর এই ভারতের বিপক্ষেই ২০১০ সালের ১০ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ খেলেছিল অভিষেক টেস্ট। কিন্তু সেই ভারতই আবার বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছে। বাংলাদেশকে তাদের দেশে আমন্ত্রণ জানাতে ছিল রাজ্যের অনীহা।
টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর মধ্যে সবার শেষে ভারতে গিয়ে টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। তাও ২০১৬ সালে একটি মাত্র টেস্ট। সেজন্য বাংলাদেশকে অনেক দেন দরবারও করতে হয়েছিল। সেই ভারতের বিপক্ষে পরপর দুবার ওয়ানডে সিরিজ জেতার পর বাংলাদেশকে নিয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গির হয়তো পরিবর্তন আসতে পারে।
ভারতের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হবে কি না তা সময় সাপেক্ষ। কিন্তু সেই রাস্তা তৈরি করে দিয়েছেন এবার মেহেদি হাসান মিরাজ। বলা যায় তার কাছেই পরপর দুই ম্যাচে হেরেছে ভারত। এই একই কাজ করেছিলেন ২০১৫ সালে মোস্তাফিজুর রহমান।
মিরাজের ভারত বধে ছিল ৫ বছরের অভিজ্ঞতা। মোস্তাফিজের ভারত বধ ছিল তার যাত্রা লগ্নে। দুইজনের কীর্তির প্রেক্ষাপট কিন্তু ভিন্ন। ভারতের বিপক্ষে অভিষেকের আগে মোস্তাফিজের অভিজ্ঞতা ছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে খেলার। এখানেই তিনি পেয়েছিলেন প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ। সেই স্বাদ নিয়েই তিনি ভারতের বিপক্ষে নিজের অভিষেক ম্যাচে একাই ৬ উইকেট নিয়ে কোহলি-রোহিত-রায়না-ধাওয়ান-ধোনির বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইন গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন। পরের ম্যাচেও তিনি একই কাজ করেন ৫ উইকেট নিয়ে। তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো সিরিজ জিতেছিল। দুটি ম্যাচেই মোস্তাফিজ হয়েছিলেন ম্যাচ সেরা। শেষ ম্যাচে তিনি পেয়েছিলেন ২ উইকেট। এই ম্যাচ অবশ্য বাংলাদেশ জিততে পারেনি। কিন্তু মোস্তাফিজ হয়েছিলেন সিরিজ সেরা।
অন্যদিকে মিরাজের সাফল্যের রাস্তা ছিল কাঁটা বিছানো। দুটি ম্যাচই ছিল প্রতিকূলতায় ভরা। নিশ্চিত হারের মুখে। প্রথম ম্যাচে শেষ উইকেট জুটিতে অবিচ্ছিন্ন থেকে ৫১ রান করে। নিজে অপরাজিত থাকেন ৩৮ রানে। দ্বিতীয় ম্যাচে ৬৯ রানে ৬ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর সপ্তম উইকেট জুটিতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নিয়ে ১৪৮ রান যোগ করেন। পরে নিজে করেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। ইনিংসের শেষ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করে তিনি অপরাজিত থাকেন। দুই ম্যাচেই মিরাজকে ভারতীয় বোলাররা আউট করতে পারেননি। ম্যাচ সেরার পুরস্কার দুবারই উঠেছে তার হাতে। শেষ ম্যাচে ২০১৫ সালের মতো বাংলাদেশ হারবে নাকি ভারতকে প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করবে, মিরাজ ভালো করার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারবেন কি না, তা বলা না গেলেও তিনি যে সিরিজ সেরা হবেন তা অগ্রিম বলেই দেওয়া যায়।
ভারতের বিপক্ষে এমন অর্জনে মহাখুশি মিরাজ। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তার কণ্ঠা ঝরেছে সেই খুশিরই ঝর্ণাধারা। তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমার জন্য এটা বড় একটা পাওয়া। ভারত অনেক ভালো দল। এখন বিশ্বের সেরা দলগুলোর একটি ওরা। আমার কাছে মনে হয়, এরকম বড় দলের সঙ্গে পারফর্ম করলে নিজের কাছে অনেক ভালো লাগে। সবচেয়ে বড় কথা, ভারতের সঙ্গে আমরা দ্বিতীয়বার সিরিজ জিতেছি। আমার ব্যক্তিগতভাবে ওরকম চাওয়া ছিল না যে ভালো করতেই হবে। স্বাভাবিকই ছিলাম। আল্লাহর অশেষ রহমতে হয়ে গেছে। পরিস্থিতির যা দাবি, ওরকম খেলেছি। ভাগ্য পক্ষে এসেছে।’
সেঞ্চুরি যে করতে পারবেন তা কিন্তু মিরাজ নিজেও ভাবেননি। আর না ভাবারই কথা। কারণ মাহমুদউল্লাহ আউট হওয়ার সময় মিরাজের রান ছিল ৬৬। ওভার বাকি ছিল ৩.৫টি। এই ২৩ বলের ১২ বল খেলে মিরাজ সেঞ্চুরির জন্য প্রয়োজনীয় ৩৪ রান সংগ্রহ করেন।
মিরাজ সেঞ্চুরি করলেও শেষ ওভারে গিয়েও তার সেঞ্চুরি নিশ্চিত ছিল না। তখন তার রান ছিল ৮৫। বোলার ছিলেন শার্দুল ঠাকুর। প্রথম বল থেকে নাসুম লেগ বাই এক রান নেন। পরের বলে মিরাজ ফাইন লেগ দিয়ে ছক্কা হাঁকান। তৃতীয় বলে কোনো রান নিতে পারেননি। তখনো মিরাজের সেঞ্চুরি অনেক দূরে। কিন্তু চতুর্থ বলে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা মারলে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জেগে উঠে। পঞ্চম বলে দুই রান নিয়ে পৌঁছে যান ৯৯ রানে। ইনিংসের শেষ বল। মিরাজের কি সেঞ্চুরি হবে? তিনি কি এক রান নিতে পারবেন? নাকি দুই রান বা বাউন্ডারি, অথবা ওভারে বাউন্ডারি নাকি আউট হয়ে যাবেন। এমন নানামুখী চিন্তার মধ্যে শার্দুল ঠাকুরের করা ফুলটস বলকে তিনি সাফলিং করে এক রান নিয়ে ব্যাট উঁচিয়ে ধরেন। সেঞ্চরি করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘না, এটা কখনোই ভাবিনি যে সেঞ্চুরি হবে। তবে দলের জন্য খেলেছি। ফ্লো ছিল। আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহ ছিল, হয়ে গেছে।’
এমপি/এসজি