ব্যাঙ্গালোরের হার ফিরিয়ে দিল বাংলাদেশ
বিশ্ব ক্রিকেটে এক সময় পাক-ভারত ম্যাচ অন্য রকম উত্তেজনা বিরাজ করতো।মাঠ ছেড়ে মাঠের বাইরে ছড়িয়ে পড়তো সেই উত্তেজনার ঢেউ। এখন আর সেই উত্তেজনা নেই। কারণ দুই দলের দেখাই হয় কদাচিৎ। এখন সেখানে জায়গা করে নিয়েছে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ।
বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ মানেই উত্তেচনায় টুইটুম্বর। সেখানে আবার যোগ হয় বিতর্কিত আম্পায়ারিং। যা যায় আবার বাংলাদেশের বিপক্ষে। এই তো গত মাসে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ভেজা মাঠে বাংলাদেশকে খেলতে বাধ্য করে আম্পায়াররা। যা নিয়ে তুমুল সমালোচনা হয়েছিল পরে। অথচ যে পরিস্থিতি মাঠে নামানো হয়েছে বাংলাদেশকে,তাতেখেলা না হলে বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশই জয়ী হতো। আবার মাঠ পুরোপুরি খেলার উপযোগ করে ম্যাচ শুরু হলে বাংলাদেশের টার্গেট আরও কমে আসতো। সে ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ম্যাচ জয়ী হতো।
বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচ মানেই যে অন্য রকম উত্তেজনা, তার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত দেখা গেছে মিরপুরে রবিবারে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে। পেন্ডুলামের মতো দুলেছে ম্যাচ। প্রথমে বাংলাদেশের দিকে, পরে ভারেতর দিকে। এ ররপর যে কোনও দলের হয়ে উঠে ম্যাচ। শেষ পর্যন্ত বিজয়ের হাসি নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। রেখে যায় উত্তেজনার নতুন পারদ।
ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ বেশ শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হয়ে উঠাতে এখন জয় আসে নিয়মিত।যে কারণে এ সব জয়ের পর ক্রিকেটারদের মাঝে আর সেই রকম বাড়তি উচ্ছ্বাস দেখা যায় না। কিন্তু রবিবার ভারতকে হারানোর পর ক্রিকেটারদের মাঝে সে কি উচ্ছ্বাসের বহিঃপ্রকাশ। ড্রেসিং রুম বের হয়ে এসে সাকিব-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহরা আনন্দে শামিল হন। বিজয়ের দুই নায়ক মিরাজ-মোস্তাফিজকে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন আর বাহবা জানান।
মিরাজ-মোস্তাফিজের শেষ জুটি আর ৫১ রানের প্রয়োজন হওয়াতে জয় সূচক রান আসার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত ছিল না। ৫১ রানের সময় বাংলাদেশ হেরে গেলে আফসোস থাকত কম। কিন্তু জয়ের কাছাকাছি এসে হারলে আফসোসের শেষ থাকতোনা। কারণ, ভারতের বিপক্ষে এ রকম নিশ্চিত জেতা ম্যাচ হাত ছাড়া হওয়ার বেশ কয়েকটি নজির আছে বাংলাদেশের। তার একটি এবার ফিরিয়ে দিল বাংলাদেশ। কারণ, ১৮৬ রানের টার্গেট অতিক্রম করতে নেমে ১৩৬ রানে ৯ উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশের হার ছিল এক প্রকার নিশ্চিত। সেখান থেকে মিরাজের অবিশ্বাস্য ব্যাটিং আর মোস্তাফিজের সমপোযোগি সাহচর্য ভারতের মুখের খাবার কেড়ে আনা হয়। বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারত এবারই প্রথম এ রকম নোনা স্বাদ পেয়েছে।
রবিবারের ম্যাচের দৃশপট অনেকটা ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে ব্যাঙ্গালোরে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটির কথাই অনেকেই স্মরণ করে দেয়। সেই ম্যাচকে অনেকটা মিরপুরের ম্যাচের কার্বনকপিই বলা যায়। মাশরাফির নেতৃত্বে ভারতকে সাত উইকেটে ১৪৬ রানে আটকে রেখে বাংলাদেশ পৌছে গিয়েছিল জয়ের বন্দরে। চার উইকেট হাতে নিয়ে শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১১ রানের। ক্রিজে মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ। হার্দিক পান্ডিয়ার ওভারের প্রথম তিন বলেই নয় রান নিয়ে ম্যাচকে পুরো নিজেদের পকেটে ডুকিয়ে নেয়। তিন বলে দুই রান। জয়টা সময়ের ব্যাপারে। ভারতের দর্শকরা মাঠ ছাড়তে শুরু করেন। গ্যালারি অনেকটা ফাঁকা হয়ে যায়। জয়ের প্রহর গুনতে থাকে বাংলাদেশ শিবির। আর তখনই প্রথমে মুশফিক,পরে মাহমুদউল্লাহ করে বসেন ভুল । দুই জনেই বিগ শট খেলতে গিয়ে দুই জনেই পরপর দুই বলে আউট হয়ে যান। শেষ বলে সেই দুই রানই থেকে যায়। কিন্তু এবার রান আউট হয়ে যান মোস্তাফিজ। বাংলাদেশ হেরে যায় এক রানে।
এবার ১৩৬ রানে নয় উইকেট পড়ে যাওয়ার পর বাংলাদেশের দর্শকরাও গ্যালারি ছাড়তে শুরু করেন। ভারতের জয় সময়ের ব্যাপার। সেখান থেকে মেহেদি হাসান মিরাজ মোস্তাফিজকে নিয়ে অবিশ্বসা্য ব্যাটিং করে ভারতের মুখের খাবার কেড়ে নেন।
ভারতের কাছে বারবার হেরে যাওয়ার পর একটি ফিরিয়ে দিলে বাংলাদেশ? সামনে আছে কলম্বোতে এশিয়া কাপ ও নিদহাস ট্রফির ফাইনাল। আছে এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অ্যাডিলেডে গ্রুপ পর্বের ম্যাচ।
এমপি/এমএমএ/