এবার আর ভুল করেনি বাংলাদেশ
ভারতের বিপক্ষে তীরে এসে তৈরি ডুবানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জুড়ি নেই। একবার দুবার নয়, বেশ কয়েকবারই এরকম ঘটনা ঘটেছে। ২০১৬ সালে ব্যাঙ্গালোরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিশ্চিত জয় হাতছাড়া হয়েছিল বাংলাদেশের। ২০১৮ সালে শ্রীলংকার কলম্বোতে নিদহাস ট্রফির ফাইনালেও বাংলাদেশের জেতা ম্যাচ ছুটে গিয়েছিল দীনেশ কার্তিকের অবিশ্বাস ব্যাটিংয়ে। অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আ্যডিলেডের ঘটনা সবারই জানা। ২০১৮ সালে ওয়ানডে এশিয়া কাপের ফাইনালেও বাংলাদেশ জেতার ম্যাচ হাত ছাড়া করেছিল। এবার আর সে ভুল করেনি । জয়ের মালা পরেই তরী নিয়ে তীরে নোঙর করেছে।
মিরাজের যে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং এবার বাংলাদেশকে জয়ের মালা পরিয়েছে সেই মালা কিন্তু গলেতে নাও পরা হতে পারতো। এবারও ম্যাচ হাতছাড়া হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। ভারতকে ১৮৬ রানে অলআউট করে দিয়ে এক পর্যায়ে বাংলাদেশের রান ছিল চার উইকেটে ১২৮। উইকেট এবং ওভার দুটি বিবেচনায় বাংলাদেশ ছিল ভালো অবস্থানে। জয়টা ছিল সময়ের ব্যাপার। কিন্তু সেখান থেকে হঠাৎ করে ম্যাচের চিত্রনাট্য ঘুরে যায়। মাত্র আট রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ হারের প্রহর গুনতে থাকে। ক্রীজে শেষ জুটি। জয়ের জন্য করতে হবে ৫১ রান। এক কথায় অসম্ভব। কিন্তু সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করেন মিরাজ বলা যায় তার কারণেই এবার বাংলাদেশ ভারতের মুখের খাবার কেড়ে নিয়েছে।
অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটে মিরাজ ব্যাটিং অলরাউন্ডার হলেও জাতীয় দলে আসার পর তিনি হয়ে উঠেন বোলিং অলরাউন্ডার। তার ব্যাট সেভাবে কথা বলছিল না। আর সঙ্গী হিসেবে থাকা মোস্তাফিজের কাছে সবচেয়ে কঠিন কাজ ব্যাটিং করা। সেই মোস্তাফিজই অসম্ভব দৃঢ়তায় মিরাজকে যোগ্য সাহচার্য দিয়ে বাংলাদেশের জয়ের কাব্য রচনায় বিরাট ভূমিকা রাখেন। জুটিতে তারা ৫১ রান যোগ করে অবিচ্ছিন্ন থাকেন।
বাংলাদেশের এমন জয়ে মিরাজের সবচেয়ে বড় হয়ে কাজ করেছে বিশ্বাস। ১৩৬ রানে ৯ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরও মিরাজের বিশ্বাস ছিল তিনি পারবেন।সে কথাই তিনি জানিয়েছেন খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে।
তিনি বলেন, ' সত্যি বলতে আমার বিশ্বাস ছিল। অনেকে শুনলে হয়তো বলবে পাগল। তবে আমি বিশ্বাস করেছিলাম। আমার বিশ্বাস খুব ভাল ছিল। আমার কাছে একবারও মনে হয়নি যে ম্যাচটা হারবো। শুধু একটা কথা বারবার বলছিলাম আমার মনে যেটা চলছিল আমি পারব। বারবার নিজেকে বলেছি আমি পারবো, আমি পারবো।'
বাংলাদেশের জয়ের আশা শেষ হয়ে গিয়েছিল স্বীকৃত শেষ ব্যাটসম্যান আফিফ হোসেন আউট হয়ে গেলে। আত্মবিশ্বাসী মিরাজ তখন শেষ তিন ব্যাটসম্যান হাসান মাহমুদ এবাদত ও মোস্তাফিজকে নিয়ে একটা পরিকল্পনা মনে মনে করে ফেলেন। পরিকল্পনা ছিল ইবাদতকে নিয়ে ১৫ রান হাসানকে নিয়ে ২০ রান, মোস্তাফিজকে নিয়ে শেষ উইকেট ১৫-২০ রান যা লাগে। কিন্তু আফিফ আউট হওয়ার পর দুই রানের ব্যবধানে এই দুই ব্যাটসম্যান আউট হয়ে গেলে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। মিরাজের কাছে পরিস্থিতি তখন হয়ে উঠে 'ডু অর ডাই'। সেই পরিস্থিতির কথা বর্ণনা করে মিরাজ বলেন, ' শেষ উইকেট যখন ছিল,তখন তো ডু অর ডাই ।মানে হারানোর কিছু নেই। তখন তো ঝুঁকি নিতেই হবে। মোস্তাফিজের কথা খুব ভালো লেগেছে। ওর কথা কানে বাজছিল। তখন নিজের মধ্যে নিজের বিশ্বাস তৈরি হয়েছে আমি নিজের ভাবনায় পরিষ্কার ছিলাম যে কি করব। যখন ৫০ রানের মতো লাগতো তখন আমি ঝুঁকি নিয়েছি। তা লেগে গেছে। ১৪ রান বা ১০ রানের সময় একটু বেশি রোমাঞ্চিত ছিলাম। এত কাছে এসে যদি হেরে যাই। এর আগে এমন হয়েছে আমাদের সাথে। মোস্তাফিজ তখন বলেছেউপর দিয়ে খেলার দরকার নেই।'
এই মোস্তাফিজই মিরাজকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলার পথে ভালো সহযোগিতা করেছেন। মোস্তাফিজের সঙ্গে কথোপকথন উল্লেখ করে মিরাজ বলেন, 'মোস্তাফিজ খুব ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। ও খুব আত্মবিশ্বাসী ছিল। যা আমার খুব ভালো লেগেছে। ও আমাকে বারবার বলছিল, আমাকে নিয়ে টেনশন করার কিছু নেই। আমি ঠিকই দিচ্ছি। আমি আউট হবো না। গায়ে লাগলেও সমস্যা নেই। ওর আত্মবিশ্বাস দেখে আমারও আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়েছে।'
মিরাজ এবারই কিন্তু প্রথম বাংলাদেশের নিশ্চিত হেরে যাওয়া ম্যাচকে জয়ে রূপান্তর করেননি। এর আগে গত বছর মার্চে আফগানিস্তানের বিপক্ষেও বাংলাদেশ নিশ্চিত হারের মুখে পড়েছিল আফগানিস্তানের ২১৬ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ ৪৫ রানে হারিয়েছিল ছয় উইকেট। এরপর আসিফ হোসেনের সঙ্গে জুটি বেঁধে জয়ী করে মাঠ ছাড়েন অবিচ্ছিন্ন ১৭৪ রান যোগ করে। মিরাজ অপরাজিত ছিলেন ৮১ রানে। ওয়ানডে ম্যাচে সেটি তার সেরা ইনিংস। কিন্তু মিরাজ এগিয়ে রেখেছেন ভারতের বিপক্ষে ৩৮ রানের ইংনিসটাকেই। তিনি বলেন,' দুটি ইনিংসই অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল । তবে এটি বেশি স্পেশাল শেষ উইকেটে ৫১ রান লাগতো। এখানে ব্যাটিং করা কঠিন ছিল। ব্যাটসম্যানরা কনফিউসড হয়ে যাচ্ছিল।'
এমপি/এএস