লিটন ভাবনার রাজ্যে শুধুই ‘জয়’
রঙিন ক্রিকেটের দুনিয়া বাংলাদেশ-ভারত দ্বৈরথ ইদানিং মাঠ থেকে মাঠের বাইরেও উত্তেজনা ছড়ায়। এইতো মাত্র কিছু দিন আগে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ম্যাচও এর থেকে বাদ যায়নি। ভেজা মাঠে বাংলাদেশকে খেলতে বাধ্য করা নিয়ে বিশ্বকাপে বেশ কিছু দিন আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে ছিল।
দুই দেশের এ রকম উত্তেজনার রসদ শুরু হয় ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকে। সেবার অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে অনুষ্ঠিত কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশ একইভাবে বিদর্কিত আম্পায়ারিংয়ের শিকার হয়েং হেরেছিল। আগামীকাল রবিবার শুরু হচ্ছে দুই দেশের তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। বিশ্বকাপের ডামঢোলে সেই উত্তেজনায় দাঁড়ি পড়লেও তামিম ইকবালের ইনজুরিতে অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া লিটন দাস রোমাঞ্চিত।
তিনি বলেন, ‘আমরা এটা নিয়ে অনেক রোমাঞ্চিত। ভারত ভালো দল। তাদের খ্যাতি এবং ফর্ম সবই আছে। আমরা ইদানীং তাদের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলি। তারা আর আমাদের আন্ডারডগ ভাববে না। এটাই বড় ব্যাপার ।’
দুই দল এখন পর্যন্ত ৩৬বার মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে ভারতের জয়ের পাল্লা বেশ ভারী। তারা জিতেছে ৩০ বার। বাংলাদেশের জয় ৫ বার। অপর ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়েছে। সর্বশেষে ৫ বারের মোকাবেলাতে বাংলাদেশের নেই কোনো জয়। যদিও ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ বেশ শক্তিশালী। কিন্তু সর্বশেষ জিম্বাবুয়ে সফরে তাদের সেই শক্তিতে আঘাত হেনেছে জিম্বাবুয়ে। আবার ভারত যেখানে এসেছে পূর্ণ শক্তির দল নিয়ে, সেখানে বাংলাদেশ দলে নেই নিয়মিত অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও দুরন্ত ফর্মে থাকা তাসকিন আহমেদ। এই দুই জনকে হারিয়ে বাংলাদেশের শক্তি হারিয়েছে অনেক। লিটন দাস তাদেরকে মিস করলেও ঘরের মাঠে সুবিধা আর দর্শকদের সমর্থন নিয়ে ভারতকে মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত।
তিনি বলেন, ‘ভারত সবসময় ভালো দল। এটাও মানতে হবে, ঘরের মাঠে আমরাও অনেক ভালো দল। এই ফরম্যাট এমন। ঘরে খেললে অনেক ভালো খেলি। অবশ্যই দুই মূল খেলোয়াড়কে মিস করব। তবে যারা আছে ওরাও ভালো করার সামর্থ্য রাখে। দর্শক সবসময় আমাদের পক্ষে থাকে।’ মিরপুরের উইকেট সম্বন্ধে ভারতের ধারণা না থাকাটাকে তিনি দেখছেন নিজেদের জন্য প্লাস পয়েন্ট হিসেবে।
তিনি বলেন, ‘জানি না মিরপুরের উইকেট কেমন আচরণ করবে। তবে তারা এই উইকেট সম্পর্কে খুব একটা জানে না। এটা আমাদের জন্য প্লাস পয়েন্ট।’
২০১৫ সালে ভারতকে প্রথমবারের মতো সিরিজ হারানোর মূল নায়ক ছিলেন মোস্তফিজ। তিনি একাই গুড়িয়ে দিয়েছিলেন ভারতের বিশ্ব সেরা ব্যাটিং লাইনকে। অভিষেকেই নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। পরের ম্যাচে ৬ উইকেট। শেষ ম্যাচে ২ উইকেট। সেই মোস্তাফিজের ধার এখন আর আগের মতো নেই। এ নিয়ে লিটন বলেন, ‘ওটা ছিল ২০১৫, এটা ২০২২। অনেকদূর পার হয়ে গেছে। প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু লক্ষ্য থাকে। শুধু মুস্তাফিজ না, দলের সব বোলারই এখন ওয়েল সেটেল্ড।’
বিরাট কোহলি ফিরেছেন ফর্মে। যা বাংলাদেশের বোলারদের জন্য ভাবনার কারণ। কিন্তু লিটন দাস মনে করেন শুধু কোহলিই নন, ভারতের পুরো ব্যাটিং লাইনই শক্তিশালী।
তিনি বলেন, ‘তাদের ব্যাটিং লাইনআপ খুবই ভালো। শুধু কোহলি না, রোহিত, ধাওয়ান, রাহুল। আমাদের বোলারদের নিয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী।’
ভারতকে হারানোর মিশনে লিটন দাস তিন পেসার নিয়ে নামবেন কি না তা এখনো চুড়ান্ত করেননি। তিনি বলেন, ‘এখনো এ বিষয়ে কোনো কথা বলিনি। নিজেও জানি না। দলের সাথে বসে সিদ্ধান্ত নিব।’
সবার সঙ্গে আলাপ করে হয়তো তিন পেসার দেখা যেতে পারে, আবার নাও দেখা যেতে পারে। কিন্তু তামিম ইকবালের বিকল্পে তাকে বেশ ভাবাবে। কারণ টি-টোয়েন্টিতে তামিম ইকবালের সরে যাওয়াতে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত উদ্বোধনী জুটি দাঁড় করাতে পারেনি। এবার ওয়ানডেতে কী হবে। লিটনের সঙ্গে কে আসবেন হাল ধরতে।
অধিনায়ক জানান, এই বিষয়ে এখন কোনো আলোচনা হয়নি। তবে লিটন না জানালেও এনামুল হক বিজয় ও নাজমুল হোসের শান্তর যে কাউকে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
২০২৩ সালে ভারতে বসবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ খেলার ‘ভিসা’ পেয়ে গেছে। এখন নিজেদের প্রস্তুত করে তুলা। প্রতিটি ওয়ানডে সিরিজও তাই বাংলাদেশের জন্য তার প্রস্তুতি। আজ মিরপুরে সংবাদ সম্মেলনে লিটনের কাছে ছুটে গিয়েছিল এই প্রশ্ন। কিন্তু তিনি সে পথে না হেঁটে সিরিজ জেতার ভাবনায় বিভোর।
তিনি বলেন, ‘হোমে মূল লক্ষ্য সিরিজ জেতা। এটাই মূল লক্ষ্য থাকবে। তার চেয়েও বড় জিনিস হল ডে বাই ডে কীভাবে ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি। উন্নতির জায়গা বাংলাদেশের ক্রিকেটে তো সবসময়ই থাকে। এই সিরিজ নিয়ে প্রত্যেক খেলোয়াড় অনেক আশাবাদী। বড় দলের বিপক্ষে খেলতে পারলে সুযোগ সৃষ্টি হয়। ভালো পারফর্ম করলে চিন্তাধারা বদলে যায়। টপ লেভেলে যাওয়ার চিন্তাভাবনা আসে।’
এমপি/এমএমএ/