মাত্র ১২৬ রানে অলআউট বাংলাদেশ!
হতশ্রি বোলিং, তারচেয়েও বেশি হতশ্রি ব্যাাটিং। নিউ জিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশের চিরচেনা রূপ। অসম্ভব ভালো খেলে ব্যাটে-বলে দাপট দেখিয় মাউন্ট মঙ্গান্ইুয় টেস্টে বিবর্ন ইতিহাস বদলে নতুন করে জয়ের কাব্য রচনা করেছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু এক টেস্টের পর আবার সেই চিরচেনা রূপে আবির্ভূত। বল হাতে হতাশা ছড়ানোর পর ব্যাটিংয়ে আরও করুণ দশা। চা বিরতি এক ঘন্টা আগে ব্যাট করতে নেমে দিন পার করতেই পারেনি। দিন শেষ করেছে ঘোর অমানিশায়। অলআউট হয়েছে মাত্র ১২৬ রানে। পড়েছে ফলোঅনে।
ইনিংস পরাজয় এড়ানোই কঠিন। নিউ জিল্যান্ড এগিয়ে আছে ৩৯৫ রানে। উইকেটে পতনের এই ধারাবাহিকতা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে রোধ করা সম্ভব না হলে, তৃতীয় দিনই ম্যাচের ইতি ঘটবে। নিউ জিল্যান্ড লাথামের ২৫২ ও কনওয়ের ১০১ রানে ভর করে ৬ উইকেটে ৫২১ রান করে ইনিংস ঘোষণা করেছিল।
ক্রাইস্টচার্চের সবুজ জমিনে টস জিতে বাংলাদেশের পেসাররা ফায়দা নিতে পারেননি। বাংলাদেশের পেসারদের বোলিং দেখে মনে হয়েছে সবুজের মাঝে কোথায়ও গলদ আছে! কিন্তু নিউ জিল্যান্ডের পেসারদের বোলিং প্রমাণ করেছে এ রকম উইকেট আসলেই পেসারদের জন্য, ব্যাটসম্যানদের জন্য নয়! বাংলাদেশের পেসাররা কিছু করতে পারেনি বলেই তাদের একজন ব্যাটসম্যান ডাবল সেঞ্চুরি, আরেকজন সেঞ্চুরি করেছেন্।
নিউ জিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা স্বাচ্ছন্দ্যে রান তোলাতে মনে হয়েছিল বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানেরাও পিছিয়ে থাকবে না। পেছনেতো আছেই মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের তরতজা স্মৃতি। কিন্তু তার কোনো কিছুই হয়নি। হ্যাগলি ওভালের সবুজ জমিন তার মতো করেই ফিরেছে। যে কারণে প্রথম দিন যেখানে উইকেট পড়েছিল মাত্র একটি, সেখানে দ্বিতীয় দিন উইকেট পড়েছে পনেরটি। নিউ জিল্যান্ডের পাঁচটি, বাংলাদেশর দশটি। বেলা বাড়ার সাথে সাথেই উইকেট মৃত্যুপুরিতে পরিণত হয়েছে। প্রথম সেশনে উইকেট পড়েছে চারটি। দ্বিতীয় সেশনে ৫টি। আর শেষ সেশনে ছয়টি।
দ্বিতীয় দিন নিউ জিল্যান্ডের পাঁচ উইকেটের পতন হলেও সেখানে ধ্বস ছিল না। কিংবা ছিল না বাংলাদেশের বোলারদের দাপট। যদিও তারা লাঞ্চের আগে ১২ রানে নিউ জিল্যান্ডের তুলে নিয়েছিলেন তিন উইকেট। কিন্তু তাতে কোনো চাপ তৈরি হয়নি। বাংলাদেশ খেলায় ফিরে আসার একটু মৃদু সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল।
উইকেট যে এ রকম রাতারাতি আমুল পরিবর্তন হয়ে যাবে তা কিন্তু নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং দেখে মোটেই আন্দাজ করা যায়নি। কারণ তারা ৫ উইকেট হারালেও রান সংগ্রহ করেছে ওয়ানডে মেজাজে। ৩৮.৫ ওভার ব্যাটিং করে রান যোগ করে ১৭২। প্রথম সেশনে ৭৪ রান যোগ করলেও দ্বিতীয় সেশনে এক ঘন্টা ব্যাটিং করে ১৬.১ ওভারে রান যোগ করে ৯৮। সেখানে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানেরা ব্যাটিংয়ে করতে নেমে অন্ধকার দেখতে থাকেন। একমাত্র ইয়াসির আলী ও নুরুল হাসান সোহান ছাড়া উইকেটে কেউ টিকতেই পারেননি। উইকেট তাদের কাছে হয়ে উঠে কচু পাতার পানি। আসা-যাওয়াতে শামিল হন। নিউ জিল্যান্ডের দুর্ধর্ষ পেস আক্রমণের সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারেননি। তৈরি হয়েছে দুর্বিসহ এক পরিস্থিতি। ২৭ রানে ৫ উইকেট (সাদমান ইসলাম ৭, মোহাম্মদ নাঈম শেখ ০, নাজমুল হোসেন শান্ত ৪, মুমিনুলহক ০, লিটন দাস ৮) হারানোর পর ইয়াসির আলী (৫৫) ও নুরুল হাসান সোহান ( ৪১) ছাড়া আর কেউই দুই অংকের ঘরে যেতে পারেননি। চা বিরতির এক ঘন্টা আগে ব্যাট করতে নেমে হারায় চার উইকেট। রান ছিল ২৭। চা বিরতির পর ৬ উইকেট হারিয়ে রান যোগ হয় ৯৯। ইয়াসির আলী ও নুরুল হাসান সোহান ষষ্ট উইকেট জুটিতে পতন রোধ না করলেও দলীয় সংগ্রহ শতরানও পার হতো না।
বাংলাদেশের ইনিংসকে মরুভুমি বানিয়ে দেন নিউ জিল্যান্ডের দুই পেসার বোল্ট ও সাউদি। দুই জনে পাল্লা দিয়ে উইকেট নেয়া শুরু করেন। সাউদি একটি নিলে, বোল্ট নেন একটি। আবার সাউদি নেন, পরে আবার বোল্ট। এভাবে দুই জনে প্রথম ছয় উইকেট সমান ভাগে ভাগ করে নেন। দুই জনে এ রকম উইকেট পাওয়ার নেশায় মেতে উঠাতে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য ভীবিষিকাময় হয়ে উঠে পরিস্থিতি। বিশেষ করে দেশের হয়ে শততম টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে মোহাম্মদ নাঈম শেখকে কোনো রানই করতে দেননি বোল্ট। এই বোল্টই পরে মেহেদী হাসান মিরাজকে বোল্ড করে নিউ জিল্যান্ডের চতুর্থ বোলার হিসেবে তিনশ উইকেট পূর্ণ করেন। তার আগে এই কোটা পূর্ন করেছিলেন স্যা রিচার্ড হ্যাডিল ৪৩১ উইকেট, ড্যানিয়েল ভেট্টরি ৩৬১ উইকেট ও টিম সাউদি ৩২৮ উইকেট। পরে বোল্ড শেষ ব্যাটসম্যান শরিফুলকে আউট করে পাঁচ উইকেটও নেন।
বাংলাদেশের ব্যাটিং বিপর্যয়ে প্রশংসনীয় ছিল ইয়াসির আলীর ব্যাটিং। সাতে নেমে তিনি নুরুল হাসান সোহানের সাথে ৬০ রান যোগ করার পাশাপাশি নিজেও ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি তুলে নেন ৮৫ বলে। তাদের জুটিচ ভাঙ্গে সাউদির বলে নুরুল হাসান সোহান ৪১ রানে এলডিবিøর শিকার হলে। সাউদি রিভিউ নিয়ে উইকেট পান। ইয়াসির আলীর ব্যাটিং ছিল সাবলিল। নিউ জিল্যান্ডের যে পেসারদের খেলতে হিমসিম খেয়েছেন প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানরা, সেখানে ইয়াসির আলী খুবই স্বাভাবিকভাবে রান করে গেছেন। মেহেদী হাসান মিরাজ আউট হওয়ার পর টেল এন্ডাররা চলে আসলে তিনি হাতও খুলে খেলতে থাকেন। তাকে অবশ্য বোল্ট কিংবা সাউদি আউট করতে পারেননি। ৫৫ রানে তিনি জেমিসনের প্রথম শিকার হন। ডিপ মিউিইকেটে তার ক্যাচ ধরেন মিচেল। নিউ জিল্যান্ডের হয়ে বোল্ট ৪৩ রানে পাঁচটি, সাউদি ২৮ রানে তিনটি এবং জেমিসন ৩২ রানে নেন দুইটি উইকেট। বাংলাদেশের ইনিংসের স্থায়ীত্ব ছিল মাত্র ৪১.২ ওভার।
এমপি/কেএফ/