নেইমারের অভাব বোধ করবে ব্রাজিল!
বিশ্ব ফুটবল মানেই যেন ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছে এই দুই দেশের অগনিত সমর্থক। তবে বাংলাদেশের মতো এ রকম অভিব্যক্তি প্রকাশ বিশ্বে আর দ্বিতীয়টি খোঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে। ঘরে ঘরে দুই দেশের পাল্লা দিয়ে পতাকা উড়ানো, ধুমছে হচ্ছে জার্সি বিক্রি। দুই দেশের খেলার দিন গোটা দেশ হয়ে উঠে হয় আর্জেন্টিনা, না হয় ব্রাজিল। জয়ে বাঁধভাঙা উল্লাস। মধ্য রাতেও চলে পটকা ফুটানো, বুবুজুলা বাজানো। হার হয় ব্যতীত। যেন প্রিয়জন হারানোর বেদনা।
ব্রাজিলের খেলা হলে আর্জেন্টিনার আবার আর্জেন্টিনার খেলার দিন ব্রাজিলের সমর্থকদের বিরোধিতা করা যেন নিয়মে পরিণত হয়ে উঠেছে। সমর্থন, পাতাকা উড়ানো, জার্সি পরা, উল্লাস করাতে কেউ পিছিয়ে থাকতে চায় না। নিয়তিও যেন অনেকটা সে রকমই লিখে দিয়েছে। দুই দলের হয়ে জদৎসেরা ফুটবলারও একই সময়ে উপহার দিয়ে থাকে। ম্যারাডোনা যখন মাঠ মাতাচ্ছেন, তখন জিকো, সক্রেটিসরা তারকা খ্যাতিতে পিছিয়ে ছিলেন না।
মেসি যখন বিশ্ব মাতাচ্ছেন, তখন আর্ভিাব ঘটে নেইমারের। দুই জন নিজেদের নৈপুণ্য দেখিয়ে এমনই উচ্চতায় পৌঁছে যান, যে তাদের অভাব বেশ ভালাভাবেই পড়ে দলের উপর। তবে এখানে আবার ব্রাজিলের সমর্থকদের আফসোস বেশি। কারণ ইনজুরির কারণে নেইমারকে তারা প্রায় সময় মিস করে থাকেন। সে তুলনায় মেসি ইনজুরির কারণে আর্জেন্টিনার হয়ে না খেলা ম্যাচের সংখ্যা খুঁজতে অনুবীক্ষণ যন্ত্রের প্রয়োজন পড়বে।
ক্লাব ফুটবল হোক আর জাতীয় দলের হয়ে হোক ইনজুরির যেন নেইমারের সঙ্গে সখ্যতা করতে বেশ পছন্দ করে। বলা যায় ইনজুরি আর নেইমার যেন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। ক্লাব ফুটবলে নেইমারের ইনজুরির চেয়ে জাতীয় দলের হয়ে নেইমারের ইনজুরি ব্রাজিল ভক্তদের জন্য বেশি কষ্টের। কারণ, প্রতি চার বছর পরপর আসা এক একটি বিশ্বকাপকে ঘিরে ব্রাজিল ভক্তরা আশার প্রদীপ জ্বালান নেইমারকে ঘিরে। কিন্তু ইনজুরি এসে সেখানে ‘কাঁটা বিছিয়ে দেয়। অতীতের ন্যায় এবারও তার ব্যতীক্রম হয়নি। সার্বিয়ার বিপক্ষে খেলায় তিনি ইনুজরিতে মাঠ ছাড়েন। যা থাকে আপতত ছিটকে দেয়েছে গ্রুপ পর্বের বাকি দুই ম্যাচ থেকে। যে কারণে আজ থাকে দেখা যাবে না সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে। মিস করবেন ২ ডিসেম্বর ক্যামেরুনের বিপক্ষে ম্যাচেও তাকে মাঠের বাইরে থাকতে হবে।
বিশ্বকাপ আসলে ইনজুরির কারণে ছিটকে যাওয়া নেইমারের জন্য নতুন নয়।
বিশ্বকাপ ফুটবলের আসরে ইনজুরি যেন মাথা চাড়া দিয়ে উঠে। ২০১৪ সালে নিজ দেশ বিশ্বকাপে নেইমার যাদুতে দারণ শুরু করা ব্রাজিল সেমিফাইনালে গিয়ে থমকে যায়। কারণ, ইনজুরির কারণে নেইমার ছিলেন মাঠের বাইরে। এই সুযোগে সেমি ফাইনালের মতো ম্যাচে জামার্নির কাছে হারতে হয়েছিল ৭-১ গোলের শোচনীয় ব্যবধানে। এরপর তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচেও নেদারল্যান্ডসের কাছে হার মেনেছিল ব্রাজিল ৩-০ গোলে। এরপর ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপেও তিনি পুরোপুরি ফিট ছিলেন না। কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের কাছে ২-১ গোলে বেজেছিল বিদায় ঘণ্টা।
এবার কি হবে? আজ বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় দোহায় ৯৭৪ স্টেডিয়ামে নেইমারকে ছাড়া সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নামবে ব্রাজিল। নেইমার গোল করেন। গোলের উৎস তৈরি করে দেন। রিচার্লিসনের দ্বিতীয় গোল নিয়ে যে মাতামাতি, নান্দিনিকতায় ভরা, তার উৎসও কিন্তু ছিলেন নেইমার। কারণ বল নিয়ে বক্সে ঢুকে তিনি শট নেওয়ার আগেই অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা ভিনিসিয়াস জুনিয়র শট নিয়েছিলেন।
বার্সেলোনার স্ট্রাইকার রিচার্লিসন আজ গোলের এমন উৎস পেতে অভাববোধ করবেন। যদিও ব্রাজিল দলে তারকার ছড়াছড়ি। তাই নেইমারের মতো খেলোয়াড়ের বিকল্প না পেলেও ঘাটতি পূরণে সমস্যায় পড়তে হবে না কোচ তিতেকে। দলে নেইমার ছাড়াও স্ট্রাইকার আছেন আটজন। এই আটজনে আবার জায়গা হয়নি রবার্তো ফিরমিনোর মতো স্ট্রাইকারের। এই তথ্যাই জানান দেয় ব্রাজিলের রিজার্ভ কতটা শক্তিশালী।
সোমবার (২৮ নভেম্বর) কোচ তিতে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘নেইমার একজন ব্যতিক্রমী খেলোয়াড়। তবে আমরা সবার ওপর বিশ্বাস রাখি। হয়ত আমরা ভিনির (ভিনিসিউস জুনিয়র) কাছ থেকে একটি ড্রিবলিং দেখতে পাব। ফিনিশিংয়ে রিচার্লিসন কিংবা পেড্রোর সৃজনশীলতা দেখতে পাব। এটা হবে কারণ তাদের সেই সৃজনশীলতা আছে।’
দলের অন্যতম খেলোয়াড় কাসেমিরো বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়ের কথা বলছি। তার মানের একজনকে খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু আমাদের দলে অনেক মানসম্পন্ন খেলোয়াড় আছে যারা তার পজিশনে ভালো খেলতে পারে।’ আজ তাই নেইমারের জায়গা বিকল্প খেলোয়াড় যে-ই খেলতে নামবেন, সেখানে ঘাটতি থাকবে না।
এদিকে নেইমারকে দ্রুক সুস্থ করে তুলতে যুক্তরাষ্ট্রের নাসার (ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের বিশেষ একটা প্রযুক্তি ব্যবহার করছে ব্রাজিল। এই প্রযুক্তির নাম ‘কমপ্রেশন বুট’। ব্রাজিলের একটি সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, ‘নাসার প্রযুক্তি ব্যবহারের পর গোড়ালির ইনজুরি থেকে সুস্থ হয়ে উঠছেন নেইমার। ইতোমধ্যে তিনি হাঁটতেও শুরু করেছেন।’
কোচ তিতেরে আশা নেইমারের মতো খেলোয়াড়কে নক আউট পর্ব থেকে তিনি দেখতে চান।
এমপি/এমএমএ/