স্পেনের সঙ্গে ড্র করে আশা বাঁচিয়ে রাখল জার্মানি
স্পেনের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে শেষ ষোলতে যাওয়ার আশা বাঁচিয়ে রেখেছে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানি। প্রথম ম্যাচে জাপানের কাছে ২-১ গোলে হারের পর তাদের শেষ ষোলতে যাওয়াটা ঝুঁকির মুখে পড়ে গিয়েছিল। সেই ঝুঁকি থেকে মুক্ত হতে তাদের জয় কিংবা ড্র প্রয়োজন ছিল। হারলে গতবারের মত গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হত। এবারও সেই সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল প্রথমে গোল হজম করে। ৬২ মিনিটে মুরাতোয়ার দেয়া গোল হজম করে তা পরিশোধ করে ৮৩ মিনিটে ফুলক্রোগের মাধ্যমে। দুই গোল দাতাই ছিলেন বদলি খেলোয়াড়। শেষ ষোলতে যাওয়ার জন্য ১ ডিসেম্বর কোস্টারিকার বিপক্ষে জিততেই হবে। কোস্টারিকা রবিবার ‘ই’ গ্রুপের ম্যাচে জাপানকে ১-০ গোলে হারিয়ে শামিল হয়েছে শেষ ষোলতে যাওয়ার লড়াইয়ে। একই দিন স্পেন খেলবে জাপানের বিপক্ষে।
স্পেনের পয়েন্ট চার। তারা গ্রুপে আছে সবার উপরে। জাপানের পয়েন্ট কোস্টারিকার সমান ৩। গোল গড়ে জাপান দুইয়ে।
প্রথমার্ধের খেলায় বল পজিশনে স্পেন (৬৮ ভাগ) এগিয়ে থাকলেও খেলা হয়েছে আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণে। একবার স্পেন আক্রমণ করলে পরোক্ষনেই আক্রমণে গিয়েছে জামার্নি। স্পেন চারটি, জামার্নি ৩টি শট নেয়। অন টার্গেট শট ছিল একটি করে। কর্ণার স্পেন পাঁচটি আদায় করে নিলেও জামার্নি একটিও আদায় করে নিতে পারেনি। এই অর্ধে স্পেন যেমন ওপেন নেট মিস করেছে, তেমনি জামার্নির করা গোলটি বাতিল হয়ে যায় অফসাইডের কারণে। আবার স্পেনের একটি চেষ্টা পোস্টে লেগে গেল বঞ্চিত করে।
আল বায়াত স্টেডিয়ামে খেলার প্রথস সুযোগ আসে স্পেনের। ৬ মিনিটে তারা গোল পেয়েই যাচ্ছিল। দানি ওলমোর ডান পায়ের তীব্র শট গোলরক্ষখ নুয়্যার পাঞ্চ করে রক্ষা করলেও বল পরে পোষ্টে লেগে বাইরে চলে যায়। ১০ মিনিটে জামার্নি এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ হারায়। থমাস মুরাল বক্সের ভেতর ফাঁকায় গেনাব্রিকে বল দিলে তিনি গোলরক্ষক সিমনকে একা পেয়েও জালে ফেলতে পারেনি। সিমন বাঁধা হয়ে দাঁড়ান। কর্ণার করে রক্ষা করেন। ১৮মিনিটে স্পেনের জর্দি আলভার ডান পায়ের তীব্র শট গোলে পোস্টের বাইরে জালে গিয়ে আঘাত করে। ২২ মিনিটে গেনাব্রির বাম পায়ের শট পোষ্ট ঘেষে বাইরে চলে যায়। ২৬ মিনিটে টরেসের শট জামার্নির রক্ষণভাগের ডেভিড লাউম বাঁধায় নিশানা হারায়। ৩২ মিনিটে টরেন অবিশ্বাস্যভাবে গোল করতে না পারলে স্পেন এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ হারায়। বাম প্রান্ত থেকে মার্কো আসেনসিও বক্সে টরেসকে লক্ষ্য করে পাস দেন। এ সময় টরেসের সামনে ছিলেন শুধুই স্পেনের গোলরক্ষক। কিন্তু টরেস চলন্ত বলে বাম পায়ে যে শট নেন তা বারের অনেক উপর দিয়ে চলে যায। টরেস যেন নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না এমন সুযোগ হাতছাড়া করে। ৩৫ মিনিটে বক্সের ভেতর থেকে টরেসের শট জামার্নির খেলোয়াড় কর্নার করে রক্ষা করেন। একের পর এক সুযোগ হাতছাড়া করে স্পেন ৩৯ মিনিট গোল হজম করে। ফ্রি কিক থেকে বক অ্যান্টনি রডিগের হেডি আপন ঠিকানা খোঁজে নেয়। কিন্তু অফসাইডের কারণে গোল বাতিল হয়ে যায়। ৪৪ মিনিটে আরেকটি ফ্রি কিক থেকে রডিগের ভলি শট গোলরক্ষক সিমন রক্ষা করেন।
দ্বিতীয়ার্ধের খেলা ছিল আরও প্রাণবন্ত। গোল করার নেশা দুই দলেরই বেড়ে গিয়েছিল। সেখানে তারা সফলও হয় একটি করে গোল করে। এ ছাড়া দুই দলই একাধিক সুযোগ হাতছাড়া করে। দুই দলের গোলরক্ষকই এ দিন চমৎকার খেলে গোলের সংখ্যা বাড়তে দেননি।
৫৬ মিনিটে রক্ষণভার ভুলে স্পেন গোল হজম করতে যাচ্ছিল। কিন্তু গোলরক্ষক সিমেনর দঢ়তায় এ যাত্রায় রক্ষা পায়। ভুলটি শুরু হয়েছিল কিন্তু সিমনের কাছ থেকেই। তিনি দলের একজন খেলোয়াড়কে নিজেদের বক্সে পাস দিলে সেই বল জামার্নির একজন খেলোয়াড় ট্যাকেল করে কেড়ে নিয়ে বল জসুয়া কিমিচের নেয়া শট গোলে ঢুকার মুহুর্তে সিমন ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিশ্চিত গোল রক্ষা করেন। এই গোল হজম করা থেকে রক্ষা পেয়ে স্পেন ৬২ মিনিটে গোল করে এগিয়ে যায়। ৫৭ মিনিটে মাঠে নেমে মুরাতোয়া এই গোল করেন। বাম প্রান্ত দিয়ে জর্দি আলবার নিখুঁত পাস থেকে বদলি খেলোয়াড় মুরাতোয়া ডান পায়ের আলতো টোকায় জামার্ন গোলরক্ষক নুয়্যারকে বোকা বানান। জামার্নির একজন খেলোয়াড়েরর বাঁধাও মুরাতোয়াকে আটকাতে পারেনি। এবারের বিশ্বকাপে এটি ছিল তার দ্বিতীয় গোল কোস্টারিকার বিপক্ষেও তিনি বদলি হিসেবে নেমে গোল করেছিলেন। ৬৬ মিনিটে মার্কো আসেনসিওর বাম পায়ের দুরন্ত শট বারের উপর দিয়ে চলে যায়।
গোল হজম করার পর জার্মানরা গোল পরিশোধের জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। এ ছাড়া তাদের আর কোনও উপায় ছিল না। কারণ হেরে গেলে পরপর দ্বিতীয়বারের মতো গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে হবে। যা চারবারের চ্যাম্পিয়ন দলের জন্য বিব্রতকর লজ্জ্বারও। তাইতো একের পর এক আক্রমণ করে স্পেনের রক্ষণভাগকে ব্যতীব্যস্ত করে তুলে। এই চাপ ধরে রেখেই তারা কয়েক সুযোগ হাতছাড়া করার পর গোল পরিশোধ করে। ৭২ মিনিটে জামাল মুসিয়ালার পাস থেকে ফুলক্রোগ ছুঁয়াতে না পারলে গোল পরিশোধে ব্যর্থ হয় জার্মানি। কিন্তু দুই মিনিটে গোল পরিশোধের সুবর্ন সুযোগ নষ্ট করেন জামাল মুসিয়ালা নিজেই। অফসাইড ট্রেপ ভেঙ্গে গোলরক্ষক সিমনকে একা পেয়েও তিনি গোল করতে পারেননি। অসম্ভব দৃঢ়তায় সিমন রক্ষা করেন। ৮৩ মিনিটে আসে তাদের সেই কাঙ্খিত সময়। বদলি খেলোয়াড় ফুলক্রোগ যে গোল করেন তার মুন্সিয়ানা ছিল জামাল মুসিয়ালার। তিনি বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন। কিন্তু তার থেকে অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক অবস্থানে থাকায় সেই বলেই ফুলক্রোগ ডান পায়ের তীব্র শটে জাল কাঁপান।
ছয় মিনিট ইনজুরির টাইমের শেষ মিনিটে জার্মানি গোল করার সুযোগ হাতছাড়া করে। এবারও অফসাইড ট্রেপ ভেঙ্গে বিপজ্জনকভাবে বামপ্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে ঢুকে পড়েন বদলি খেলোয়াড় লিরো সানে। কিন্তু তিনি শেষ মুহুর্তে বলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললেন স্পেনের গোলরক্ষক সিমনের কারণে। অবস্থা বেগতিক দেখে সিমন পোস্ট ছেড়ে বের হয়ে বাঁধার প্রাচীর তৈরি করেছিলেন।
এমপি/এএস