মরুঝড়ে উড়ে গেল আর্জেন্টিনা
রক্ষণে আর্জেন্টিনার দুর্বলতা আজন্মের আক্ষেপ। যদিও টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজেয় থাকার রেকর্ড বলছিল, আক্ষেপটা হয়ত ঘুঁচেছে লা আলবিসেলেস্তেদের। কিন্তু না। কাতার বিশ্বকাপে নিজেদের উদ্বোধনী ম্যাচে রক্ষণভাগের ভুলে ডুবল লিওনেল স্কালোনির দল।
মঙ্গলবার প্রতিপক্ষের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আর্জেন্টিনাকে ‘দুঃস্বপ্ন’ উপহার দিল সৌদি আরব।
লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে দুই দলের উদ্বোধনী ম্যাচে সৌদি আরব জিতেছে ২-১ গোলে। অথচ প্রথমার্ধে দুর্দান্ত খেলে ১ গোলের লিড নিয়ে বিরতিতে গিয়েছিল স্কালোনির শিষ্যরা। দ্বিতীয়ার্ধে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনে অবিশ্বাস্য এক জয় তুলে নেয় হার্ভে রেনার্ডের দল। তাদের জয়ে যেমন অবদান ছিল দুই গোলদাতা—সালেহ আল শেহরি এবং সালেম আল দাওসারি, তেমনি সৌদির গোলমুখে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন গোলরক্ষক মোহাম্মদ আল ওয়াইস।
রাশিয়ায় গত বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার উদ্বোধনী ম্যাচে পেনাল্টি মিস করেছিলেন মেসি। মঙ্গলবার সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি করেননি খুদেরাজ। লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে সৌদি আরবের বিপক্ষে দশম মিনিটে সফল স্পট-কিকে লা আলবিসেলেস্তেদের এগিয়ে নেন ৩৫ বছর বয়সি ফরোয়ার্ড। নিজেদের ডি-বক্সে লিয়ান্দ্রো পারেদেসকে ফাউল করেন আল বুলায়হি।
মেসি যখন ফ্রি-কিক নেন, তখন বিপজ্জনক জায়গায় আর্জেন্টাইন ফুটবলারকে ফেলে দেন সৌদি ডিফেন্ডার। এরপর টিভি মনিটরে রিপ্লে দেখে পেনাল্টির বাঁশি ফুঁকান রেফারি। শট নিতে এসে ঠাণ্ডা মাথায় গোলরক্ষক মোহাম্মদ আল ওয়াইসকে বোকা বানান মেসি। এই গোলে একটি রেকর্ডও গড়েছেন পিএসজি-সুপারস্টার। আর্জেন্টিনার হয়ে চার বিশ্বকাপে গোল করা একমাত্র খেলোয়াড় এখন তিনি।
রেকর্ড গড়ার পর ২২ মিনিটে সতীর্থদের বাড়ানো লম্বা পাস থেকে বল পেয়ে ফের প্রতিপক্ষের জাল কাঁপান মেসি। কিন্তু গোলোৎসবে মেতে উঠার সুযোগ হয়নি তাদের, কারণ লাইন্সম্যান অফসাইড ফ্লাগ উঁচিয়ে ধরেন সঙ্গে সঙ্গে। চার মিনিট বাদে একই দুর্ভাগ্যের শিকার লাউতারো মার্টিনেজ। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের গোলের পর উদযাপনও সেরে ফেলে আর্জেন্টিনা।
তাদের উল্লাস থামিয়ে প্রযুক্তির সাহায্য নেন রেফারি এবং অফসাইডের অভিযোগ এনে বাতিল করেন গোল। অফসাইড নাটকের শেষ নয় এখানেই। ৩৪ মিনিটে ফের জাল খুঁজে নেন মার্টিনেজ। লাইন্সম্যান উঁচিয়ে ধরেন অফসাইড ফ্লাগ। প্রথমার্ধে আর্জেন্টাইন ফুটবলারদের দাপুটে পারফরম্যান্সের বিপরীতে বলার মতো কিছুই করতে পারেনি সৌদির ফুটবলাররা।
প্রথম ৪৫ মিনিটে একটি শটও নিতে পারেনি হার্ভে রেনার্ডের শিষ্যরা। তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরু হতেই বদলে যায় তাদের খেলার ধরন এবং মাত্র পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে দুই গোলে দখলে নেয় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ। ৪৮ মিনিটে আর্জেন্টিনার দুই ডিফেন্ডার এবং গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজকে ধোকা দিয়ে সৌদি আরবকে সমতায় ফেরান সালেহ আল শেহরি। তাকে অ্যাসিস্ট করেন ফেরাস আল ব্রিকান।
৫৩ মিনিটে আর্জেন্টাইন ভক্তদের স্তব্ধ করে দেন সালেম আল দাওসারি। আর্জেন্টিনার ডি-বক্স থেকে দুর্দান্ত এক শটে দলকে এগিয়ে নেন এই মিডফিল্ডার। ৬৩ মিনিটে আর্জেন্টিনার সমতায় ফেরার দারুণ সুযোগ পায়। সেটা হতে দেননি ওয়াইস। মার্টিনেজের শট চোখের পলকেই কর্নারের বিনিময়ে রুখে দেন সৌদি গোলরক্ষক। ৭২ সময়ে মেসির পাস ডি-বক্সে পেয়েও দুর্বল শট নিয়ে দলকে হতাশ করেন ডি মারিয়া।
৮৪ মিনিটে মেসির দুর্বল হেড আটকে দেন ওয়াইস। ইনজুরি টাইমে প্রতিপক্ষের আরেকটি আক্রমণ রুখে দেন তিনি। তবে দলকে বিপদমুক্ত করতে পারেননি ওয়াইস। আর্জেন্টাইনদের ফিরতি শট থামিয়ে দিয়ে সৌদি আরবের লিড আগলে রাখেন আব্দুল্লাহ আল আমরি। এরপর আর্জেন্টিনার আরও কয়েকটি নিশ্চিত গোল রুখে দেন ওয়াইস। তাতে ২-১ গোলের হার দিয়ে শুরু হলো মেসির শেষ বিশ্বকাপ।
আরএ/