ইরানকে গোল বন্যায় ভাসিয়ে ইংল্যান্ডের শুরু
ইংল্যান্ড ফুটবল পাগল জাতি। ১৯৬৬ সালের পর আর জিততে পারেনি বিশ্বকাপের শিরোপা। সর্বশেষ ইউরো ফাইনালে উঠে প্রথমে গোল দিয়েও পরে টাইব্রেকারে ইতালির কাছে হেরে শিরোপা বঞ্চিত হয়েছিল। সেই ইংল্যান্ড এবার মিশন শুরু করেছে বড় জয় দিয়ে।
সোমবার (২১ নভেম্বর) দোহার খলিফা আর্ন্তজাতিক স্টেডিয়ামে এশিয়ার প্রতিনিধি ইরানকে তারা দাঁড়াতেই দেয়নি। ৬-২ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে। প্রথমার্ধেই তারা এগিয়ে ছিল ৩-০ গোলে। দলের হয়ে সাকা ২টি এবং বেলিংহ্যাম, রহিম স্ট্যালিং, রাশফোর্ড ও গ্রেলিশ ১টি করে গোল করেন। ইরানের হয়ে ২টি গোল করেন তারেমি।
খেলায় ইংল্যান্ড একচেটিয়া প্রাধান্য বিস্তার করে খেলে বড় জয় তুলে নেয়। তাদের গতিময় আর পাসিং ফুটবল ছিল চোখে পড়ার মতো। তারপরও গোল পেতে তাদের ৩৫ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। এরপর তারা ১১ মিনিটের ব্যবধানে করে ৩ গোল। খেলার শুরুতেই ৯ মিনিটে তাদের একটি আক্রমণ ঠেকাতে গিয়ে ইরানের গোলরক্ষক আলীরেজা বেইরানভান্দ নিজেদের দলের এক খেলোয়াড়ের সঙ্গে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন। তার নাক দিয়ে রক্ত পড়ছিল। তারপরও তিনি খেলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পারেননি। তার পরিবর্তে গোলরক্ষক হিসেবে খেলতে নামেন হোসেইন হোসেইনি।
প্রথম গোল করার আগে ৩১ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সহজ সুযোগ নষ্ট করে ইংল্যান্ড। আসলে এখানে ভাগ্য তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। কর্নার থেকে হ্যারি মাগুরির হেড পোস্টে লেগে ফিরে আসে। কিন্তু ৪ মিনিট পর পরিকল্পিত একটি আক্রমণ থেকে ইংল্যান্ড এগিয়ে যায় বেলিংহ্যামের গোলে। নিজেদের সীমানা থেকে গড়ে উঠে আক্রমণ। তিনজন খেলোয়াড়ের পা ছুঁয়ে বল যায় বাম প্রান্ত দিয়ে লুক শর কাছে। তার ক্রস থেকে ডি বক্সের বাইরে থেকে বেলিংহ্যামের হেড বল নিশানা খুঁজে পায়। ইরানের বদলি গোলরক্ষক চেয়ে দেখা ছাড়া করার কিছুই ছিল না। এটি ছিল বেলিংহ্যারে প্রথম আর্ন্তজাতিক গোল।
৪৩ মিনিটে সাকার গোলে ২-০ ব্যব্ধানে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। কর্নার থেকে মাগুরির হেড বক্সের ভেতর পেয়ে যান সাকা। বাম পায়ের কোনাকুনি ভলি শটে তিনি গোল করেন। ইংল্যান্ড তৃতীয় গোল করে অতিরিক্ত ১৪ মিনিটের প্রথম মিনিটে। মাঝমাঠে ইরানের সীমানা থেকে সাকা বল কেড়ে নিয়ে বেলিংহ্যামকে দেন। তিনি বল নিয়ে বিপজ্জনকভাবে ইরানের সীমানায় ডুকে ডান দিক দিয়ে অধিনায়ক হ্যারিকেনকে বাড়িয়ে দেন। হ্যারিকেন বল ধরে বক্সে ক্রস করলে সেই চলন্ত বলেই রহিম স্টার্লিং ডান পায়ের শটে বল জালে জড়ান।
প্রথমার্ধে ইরান বলার মতো সুযোগ পেয়েছিল একটিই। খুবই সহজ সুযোগ ছিল। অতিরিক্ত সময়ের ১০ মিনিটে বাম প্রান্ত থেকে মিলাদ মোহাম্মদ বক্সের ভেতর ফাঁকায় থাকা আলীরেজা জাহানবকসকে উদ্দেশ্য করে বল ক্রস করেছিলেন। এসময় তিনি বল রিসিভ না করে চলন্ত বলেই শট নিয়েছিলেন। কিন্তু বল বারের সামান্য উপর দিয়ে চলে গেলে ইরান গোলবঞ্চিত হয়।
প্রথমার্ধেই ইংল্যান্ড ৩-০ গোলে এগিয়ে থাকার পরও দ্বিতীয়ার্ধে তারা আক্রমণ করে খেলতে থাকে। ২টি গোলও আদায় করে নেয়। ইরানও ১টি গোল পরিশোধ করেন। ৬১ মিনিটে ইংল্যান্ড চতুর্থ গোল করে। ইরানের গোলরক্ষক হোসেইনের করা গোলকিকের বল মাঝমাঠে ধরে ইংল্যান্ড আক্রমণে যায়। বক্সের ভেতর বল পেয়ে সাকা ইরানের রক্ষণভাগের ২-৩ জন খেলোয়াড়কে কাটিয়ে বাম পায়ের প্লেসিং শটে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন।
৪ মিনিট পরই ইরান একটি গোল পরিশোধ করে। বক্সের বাইরে থেকে ঘোলিজাদেহ বাম পায়ের বাড়ানো বলে ছোট বক্সের ভেতর থেকে তারেমি ডান পায়ের তীব্র শটে গোল করেন। ১১ মিনিট পর দলের হয়ে পঞ্চম গোল করেন সাকার বদলি হিসেবে মাঠে নামা রাশফোর্ড। মাঠেই নেমেই তিনি গোলের দেখা পেয়ে যান। অধিনায়কের কাছ থেকে বল পেয়ে ঠান্ডা মাথায় তিনি গোল করেন। শেষ গোলটি আসে খেলার শেষ মিনিটে। ডানপ্রান্ত দিয়ে বক্সে ডুকে উইলসন নিচে শট না নিয়ে অপেক্ষাকৃত সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা গ্রেলিশকে ঠেলে দেন। তিনি শুধু ডান পায়ে বল জালে প্রবেশ করান।
দ্বিতীয়ার্ধের অতিরিক্ত সময় দেওয়া হয় ১০ মিনিট। ৮ মিনিটে ইরানের আজমাউন বক্সে ডুকে গোলরক্ষক পিকফোর্ডকে একা পেয়ে যে শট নেন তা গোলপোস্টে লেগে হতাশ করে। কিন্তু ১৩ মিনিটে গিয়েই তারা আবার আনন্দে ভাসে। ফ্রি-কিক থেকে বল বক্সে ভেসে আসার সময় ইংল্যান্ডের রক্ষণভাগের দুই খেলোয়াড় হ্যারি মাগুরি ও এরিক দিয়ার ইরানের একজন খেলোয়াড়কে বক্সে ফেলে দেন। এসময় রেফারি ভিএআর পরীক্ষা করে পেনাল্টি দেন। পেনাল্টি থেকে ইরানের তারেমি গোল করে ব্যবধান কমিয়ে আনেন ৬-২। ম্যাচে এটি ছিল তার দ্বিতীয় গোল।
এমপি/এসজি