রাতেই পর্দা উঠছে যাদুর বাঁশি বিশ্বকাপ ফুটবলের
২৯ দিন, ৩২ দল, ৬৪ খেলা, ৮ স্টেডিয়াম। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা। তারপরই আল বায়াত স্টেডিয়ামে স্বাগতিক কাতার ও ইকুয়েডরের খেলা দিয়ে ঘণ্টা বাজবে কাতার বিশ্বকাপের। শুরু হবে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই। যেখানে কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান। ৩২ দল খেললেও সবাই কিন্তু শিরোপারে পানে চেয়ে থাকে না।
শিরোপার লড়াই সীমাবদ্ধ থাকে মূলত মুষ্টিমেয় কয়েকটি দলের উপর। আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ফ্রান্স, স্পেন, ইংল্যান্ড, জার্মানি-এরাই মূলত শিরোপার দাবিদার। এদেরকে হটিয়ে অন্য কোনো দলের পক্ষে শিরোপা জেতা অনেকটাই কঠিন।
কাতার বিশ্বকাপ ফিফার ২২তম আসর। চক্রকারে বিশ্ব ঘুরে এবার বসেছে কাতারে। এশিয়াতে এটি দ্বিতীয় আর মরুর বুকে প্রথম। আবার একক দেশ হিসেবে কাতারও প্রথম এশিয়ান দেশ। এবারের স্বাগতিক হওয়ার সুযোগ কাতার পেয়েছিল ২০১০ সালে। কাতারকে স্বাগতিক করা নিয়ে সে সময় চারিদিকে সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিল। এই আয়োজনে সব থেকে বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল আবহাওয়া। সচরাচর যে সময় বিশ্বকাপ শুরু হয়ে থাকে, সেই সময় শুরু করতে গেলে তাপমাত্রা থাকে খুব বেশি। ৫০ ডিগ্রি সেলিসিয়াসের কাছাকাছি। এ রকম তাপমাত্রায় শীত প্রধান দেশগুলোর পক্ষে ফুটবল খেলা অসম্ভব। ফিফা সেই সমস্যার সমাধান করেছিল শীতে আয়োজনে করে।
গতকল শনিবার সে সমালোচনার জবাব দিয়েছেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফ্যান্তিনো। সংবাদ সম্মেলনে এক পর্যায়ে তিনি সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে পশ্চিমাদের ‘ভণ্ড’ বলতেও দিধা করেননি। সব বাধা পেরিয়ে আজ সফল ও বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল আসরের পর্দা উঠতে যাচ্ছে আজ রাতে। ১০টায় কাতার ও ইকুয়েডরের খেলা শুরু হওয়ার আগে রাত ৮টায় শুরু হবে ৩০ মিনিটের জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার কথা রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ান ব্যান্ড বিশ্ব বিখ্যাত ব্যান্ড ‘বিটিএস’র তারকা জাং কুক, কলম্বিয়ান গায়ক জে বালভিন, ভারতের মডেল-ড্যান্সার নোরা ফাতেহির। পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই ‘ফিফা ফ্যান ফেস্টিভ্যালে’ পারফর্ম করবেন আমেরিকান র্যাপার ডি জে ক্যালবিন ও জামাইকান তারকা শন পল।
বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজন করতে গিয়ে কাতার সরকার ২২০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। ৬টি স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে নতুন করে। ২টি করা হয়েছে সংস্কার। সবগুলোই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এ ছাড়া অনুশীলনের আধুনিক সুযোগ সুবিধা, হোটেল, রাস্তা, পাতাল নির্মাণেও ব্যয় হয়েছে প্রচুর টাকা। কাতারের ব্যয় অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। রাশিয়া ২০১৮ সালে সফলভাবে আয়োজন করেছিল বিশ্বকাপ। ব্যয় করেছিল ১১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া, ব্রাজিল ২০১৪ সালে ১৫ বিলিয়ন ডলার, ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার, জার্মানি ২০০৬ সালে ৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার, জাপান ২০০২ সালে ৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছিল। ব্যয় তুলে আনতে টিকিটের দামও রাখা হয়েছে আকাশচুম্বি। রাশিয়া বিশ্বকাপে টিকিটের গড় দাম ছিল ২১৪ পাউন্ড। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২১ হাজার টাকা। এবার তা করা হয়েছে ২৮৬ পাউন্ড বা প্রায় ২৮ হাজার টাকা। ফাইনাল খেলার টিকিটের দাম আরও বেশি। ৬৮৪ পাউন্ড বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৬৬ হাজার টাকা।
৩২ দলের আসরের খেলা হবে আট গ্রুপে। প্রতি গ্রুপের সেরা দুই দল যাবে শেষ ষোলোতে বা প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে। এরপর কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমি ফাইনাল হয়ে ১৮ ডিসেম্বর লুসাইল স্টেডিয়ামে মঞ্চস্থ হবে ফাইনাল।
প্রতি বিশ্বকাপে যেমন নতুন নতুন তারকার জন্ম দেয়, তেমনি বাজায় আবার বিদায় ঘন্টায়ও। তবে এবারের বিদায় ঘন্টা ফুটবল প্রেমীদের অন্তরে নাড়া দিয়ে যাবে, কাঁদাবেও। কারণ, মেসি-রোনালদোর শেষ বিশ্বকাপ এটি। দুই জনেই ক্লাব ফুটবলে নিজ নিজ দলকে অনেক শিরোপা উপহার দিয়েছেন। কিন্তু বিশ্বকাপ জিততে পারেননি। আবার মেসি কোপা আমেরিকা আর রোনালদো ইউরো জিতেছেন। দুই জনের জন্যই শেষ সুযোগ। তবে যেকোনো একজনের হাসার সুযোগ আছে। আবার দুই জনকেই বিদায় নিতে হতে পারে রিক্ত হস্তে। অবশ্য ফুটবল প্রেমীদের চাওয়া মেসির হাতেই যেন উঠে ট্রফি! মেসি-রোনালদোর মতো সমানভাবে উচ্চারিত হয়ে থাকে ব্রাজিলের নেইমারের। কিন্তু তার জন্য এটি শেষ বিশ্বকাপ নয়। তিনিও চাইবেন ২০০২ সালের পর ব্রাজিলকে আবার শিরোপা এনে দিয়ে ‘হেক্সা’ জিততে।
কাতার বিশ্বকাপে ইতালির সুযোগ না পাওয়াটাও ছিল এক ধরনের শূন্যতা। চারবারের চ্যাম্পিয়ন ও বর্তমান ইউরো চ্যাম্পিয়ন ইতালি বাছাইপর্বের গণ্ডি পার হতে পারেনি। ইতালির না খেলার মতো হতাশা ঝড়বে ইনজুরির কারণে সাদিও মানে, করিম বেনজেমা,পগবার মতো ফুটবলারদের ছিটকে যাওয়াতে। আবার মিশর বাছাই পর্ব পার হতে না পারতে মোহাম্মদ সালাহর মতো বর্তমান সময়ের অন্যতম গোল মেশিনের খেলা দেখা থেকেও বঞ্চিত হবেন ফুটবল প্রেমীরা।
কাতার মুসলিম দেশ হওয়াতে পশ্চিমাদের বিষয়ে অনেক কড়াকড়ি করা হয়েছে। নারীদের খোলামেলা পোষাকে চলাফেরা করা যাবে না। আইন ভঙ্গ করলে শাস্তি পেতে হবে। আবার স্টেডিয়াম এলাকাতে বিয়ার খাওয়া যাবে না। ফিফা সভাপতি জানিয়েছেন তিন ঘণ্টা বিয়ার না খেলে খুব বেশি সমস্যা হবে না। বিয়ার খাওয়ার জন্য এলাকা নির্ধারিত করে দেওয়া হয়েছে ।
এমপি/এমএমএ/