পশ্চিমাদের ‘ভণ্ড’ বললেন ফিফা প্রেসিডেন্ট
অভিবাসী শ্রমিকদের লাশের উপর মঞ্চ সাজিয়েছে কাতার। যেখানে ফুটবলের তালে নেচে ওঠবে গোটা বিশ্ব। মানবাধিকারের প্রতিবেদনে উঠে আসা এমন গুরুতর অভিযোগে আচ্ছন্ন এবারের ফুটবল বিশ্বকাপ। যা মোটেও পছন্দ হচ্ছে না জিয়ান্নি ইনফ্যান্তিনোর। সকল অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে পশ্চিমাদের ‘ভণ্ড’ বললেন ফিফা প্রেসিডেন্ট।
কাতার বিশ্বকাপ ঘিরে যত রটনা রটেছে তার তীব্র বিরোধিতা করেছেন ফিফা প্রধান। টুর্নামেন্টের পর্দা ওঠার আগদিন, শনিবার (১৯ নভেম্বর) দোহায় এক সংবাদ সম্মেলনে প্রায় এক ঘন্টা স্বাগত বক্তব্য প্রধান করেন তিনি। পুরো সময়টাই কাতার এবং টুর্নামেন্টের পক্ষে উচ্চকণ্ঠ ছিল ইনফ্যান্তিনো।
বিশ্বকাপ চলাকলীন কাতারে সমকামী মুভমেন্ট পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অভিবাসী শ্রমিকদের ইস্যুর পাশাপাশি এটাও প্রভাব ফেলেছে টুর্নামেন্টে। এরই প্রেক্ষিতে সুইজারল্যান্ডের জন্ম নেওয়া ইনফ্যান্তিনো বলেছেন যে কাতারে অভিবাসী শ্রমিকদের ইস্যুতে ফোকাস না করে ইউরোপীয় দেশগুলোর তাদের নিজস্ব ইতিহাসে সংঘটিত কাজের জন্য ক্ষমতা চাওয়া উচিত।
ফিফা প্রধান তার স্বাগত বক্তব্য শুরু করেন এভাবে, ‘আজ আমার শক্তিশালী অনুভূতি আছে। আমি নিজেকে কাতারি, আরব, আফ্রিকান, সমকামী, প্রতিবন্ধী এবং একজন অভিবাসী শ্রমিক বোধ করি।’
সমস্ত আলোচনা-সমালোচনা একপাশে রেখে আগামীকাল বিশ্বকাপের কিক-অফ। উদ্বোধনী দিনে আল বায়েত স্টেডিয়ামে ইকুয়েডরের প্রতিপক্ষ স্বাগতিক কাতার। এক যুগ আগে এই টুর্নামেন্ট মঞ্চস্থ করার অনুমতি পেয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি। তখন থেকে এখন পর্যন্ত ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার ৬ হাজার ৫০০ অভিবাসী শ্রমিক মারা গেছে কাতারে।
ভয়াবহ এই তথ্য গত বছর ফেব্রুয়ারিতে দ্য গার্ডিয়ান তাদের একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করে। কাতারে দেশগুলোর দূতাবাসের দেওয়া পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে মৃত্যুর সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়। কাতার সরকার ওই প্রতিবেদনটি বিভ্রান্তিকর বলে উড়িয়ে দেয়, কারণ রেকর্ড করা সমস্ত মৃত্যু বিশ্বকাপ-সম্পর্কিত প্রকল্পে কাজ করা শ্রমিকদের ছিল না। কাতার সরকারের দেওয়া তথ্যমতে ২০১৪ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বকাপ স্টেডিয়াম নির্মাণ সাইটে শ্রমিকদের মধ্যে ৩৭ জন মারা গিয়েছে, যার মধ্যে মাত্র তিনটি মৃত্যু ছিল ‘কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত’। কিন্তু আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বলছে, এটা একটি অবমূল্যায়ন।
ইনফ্যান্তিনো বললেন, ‘আমাদের ইউরোপিয়ান এবং পশ্চিমা বিশ্ব থেকে অনেক পাঠ শেখানো হয়েছে। আমি ইউরোপিয়ান। আমরা বিশ্ব জুড়ে ৩ হাজার বছর ধরে যা করছি তার জন্য নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার আগে আমাদের পরবর্তী ৩ হাজার বছর ধরে ক্ষমা চাওয়া উচিত। ইউরোপ যদি সত্যিই এই লোকদের (শ্রমিকদের) ভাগ্যের কথা চিন্তা করে, তারা বৈধ পথ তৈরি করতে পারে, যেমনটা কাতার করেছে, তাহলে শ্রমিকরা কাজের জন্য ইউরোপ যেতে পারে। তাদের কিছু ভবিষ্যত, কিছু আশা দিন।’
সব ছাপিয়ে সর্বকালের সেরা বিশ্বকাপ দেখার অপেক্ষায় ফিফা প্রেসিডেন্ট, ‘সমালোচনা বুঝতে আমার অসুবিধা হয়। আমাদের এই লোকদের সাহায্য করার জন্য, শিক্ষায় এবং তাদের একটি ভালো ভবিষ্যত ও আরও আশা দেওয়ার জন্য বিনিয়োগ করতে হবে। আমাদের সকলের নিজেদেরকে শিক্ষিত করা উচিত, অনেক কিছুই নিখুঁত নয় কিন্তু সংস্কার এবং পরিবর্তনের জন্য সময় লাগে। এই একতরফা নৈতিক শিক্ষা শুধুই ভণ্ডমি। কাতার প্রস্তুত, এটা সর্বকালের সেরা বিশ্বকাপ হবে।’
ইনফ্যান্তিনো যোগ করেন, ‘আমাকে কাতারকে রক্ষা করতে হবে না। তারা নিজেদের রক্ষা করতে পারে। আমি ফুটবলকে রক্ষা করি। কাতার উন্নতি করেছে এবং আমি আরও অনেক কিছু অনুভব করি। অবশ্যই আমি কাতারি, আরব, আফ্রিকান, সমকামী, প্রতিবন্ধী বা অভিবাসী শ্রমিক নই। কিন্তু আমি তাদের মতোই অনুভব করি কারণ আমি জানি যে বিদেশে বৈষম্যের শিকার হওয়া মানে কী।’
এমএমএ/