বিশ্বকাপ আয়োজনে কাতারের যত ব্যয়
টাকায় কি না হয়। বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজন করে কাতার তাই প্রমাণ করে দিল। ছোট্ট একটি দেশ। বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজন করার জন্য অনেক প্রতিকূলতাই ছিল। কিন্তু সব কিছু হার মেনেছে পেট্র-ডলারের কাছে।
বলা যায় টাকা দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করেছে কাতার। সংবাদ মাধ্যমে খবর বের হয়েছে এই আয়োজনের জন্য কাতার ২২০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। আগামীকাল ২০ নভেম্বর শুরু হচ্ছে বিপুল অর্থ ব্যয় করে এই মহাযজ্ঞের।
বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনের দায়িত্ব পায় কাতার ২০১০ সালে। এই আয়োজনে সব থেকে বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল আবহাওয়া। সচরাচর যে সময় প্রতি বিশ্বকাপ শুরু হয়ে থাকে, সেই সময় শুরু করতে গেলে তাপমাত্রা থাকে খুব বেশি। ৫০ ডিগ্রি সেলিসিয়াসের কাছাকাছি। এ রকম তাপমাত্রায় শীত প্রধান দেশগুলোর পক্ষে ফুটবল খেলা অসম্ভব। ফিফা সেই সমস্যার সমাধান করেছিল শীতে আয়োজনে করে।
আয়োজনের এই সমস্যা কেটে যাওয়ার পর কাতার সরকার ঝাঁপিয়ে পড়ে আয়োজনের দিকে। ব্যয়বহুল এই আসরের জন্য সবচেয়ে বেশি খরচ করতে হয়েছে অবকাঠামো নির্মানে। ফিফার কাছে কাতারের প্রস্তাব ছিল এই খাতে ব্যয় হবে ৪কোটি বিলিয়ন ডলার। কিন্তু ব্যয় হয়েছে ১০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। ৬টি স্টেডিয়াম নির্মাণ করার পাশাপাশি ২টি স্টেডিয়াম করা হয়েছে সংস্কার। এ ছাড়া, অনুশীলনের জন্যও ব্যয় করতে হয়েছে মোটা অঙ্কের টাকা। সেখানে রাখা হয়েছে সব আধুনিক সুযোগ-সুবিধা।
অবকাঠামো নির্মাণ ছাড়া বাকি ২১০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয়েছে নতুন নতুন রাস্তা, বিমানবন্দর, হোটেল, পাতাল রাস্তাও উদ্বোধনী হাবে। এই তথ্য জানিয়েছে ইউএস স্পোর্টস ফাইন্যান্স কনসালটেন্সি ফ্রন্ট অফিস। শুধুমাত্র দোহায়, ‘দ্য পার্ল’ নামে আবাসন কমপ্লেক্স নির্মাণে ব্যয় খরচ করা হয়েছে ১৫ বিলিয়ন ডলার। দোহা মেট্রোতে খরচ হয়েছে ৩৬ বিলিয়ন ডলার।
কাতারের ব্যয় অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। রাশিয়া ২০১৮ সালে সফলভাবে আয়োজন করেছিল বিশ্বকাপ। ব্যয় করেছিল ১১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার।এ ছাড়া, ব্রাজিল ২০১৪ সালে ১৫ বিলিয়ন ডলার, ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার, জার্মানি ২০০৬ সালে ৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার, জাপান ২০০২ সালে ৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছিল।
বিপুল পরিমাণ অর্থ এই মহাযজ্ঞে আয়োজনে কাতার সরকার ব্যয় করলেও সেই টাকা তারা তুলে আনার ব্যবস্থাও করেছে। এমনকি লাভও করতে পারে। আগের আসরগুলোর তুলনায় যেমন এবার ব্যয় বেশি হয়েছে, তেমনি খেলা দেখতে আসার দর্শকদের পকেটে থেকে টাকাও বের হবে খুব বেশি। আটটি স্টেডিয়াম থেকে টিকিট বিক্রি বাবদ রেকর্ড রেভিনিউ পাওয়ার আশা করছে ফিফা। টিকিট বিক্রির পরিমাণ তিন মিলিয়ন। রাশিয়া বিশ্বকাপ টিকিট বিক্রি থেকে ফিফা আয় করেছিল ৫ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার।
এবার ম্যাচ টিকিটের দাম বেশি রাখাতে আয়ও হবে আগের তুলনায় অনেক বেশি। ফিফার ধারনা রেকর্ড আয় হবে এই খাতে। ধারণা করা হচ্ছে, শুধু টিকিট বিক্রি থেকেই ২০ বিলিয়ন ডলার আয় হবে। কারণ রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে ৪০ শতাংশ বেশি দাম রাখা হয়েছে এবারের আসরে।
একটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, গত ২০ বছরের মাঝে এবারের টিকিটের দাম সবচেয়ে বেশি। ফাইনালে টিকিটের দাম রাশিয়া বিশ্বকাপের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া হসপিটালিটি প্যাকেজ বিক্রি করা হয়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার। আবার ব্রডকাস্টটিং স্বত্ব, স্পন্সর স্বত্ব থেকেও কাতারের বিপুল আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
এমপি/এমএমএ/