বিশ্বকাপ চলাকালীন সিডনিতে সাকিবদের অনুষ্ঠান, অতঃপর...
দৃশ্যপট-এক: ২০১৮ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল প্রথমবারের মতো খেলতে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায়। সেখানে স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশিরা সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে ৫ ক্রিকেটারকে নিয়ে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। বাকি ৪ ক্রিকেটার ছিলেন- তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মেহেদি হাসান মিরাজ। সেখানে সব ক্রিকেটার খুবই প্রাণবন্ত সময় কাটান প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে। ছবি তোলা, কথা বলা, প্রশ্নের জবাব দেওয়া। প্রায় দুই ঘণ্টার বেশি ছিল অনুষ্ঠানের ব্যাপ্তি। তারকা ক্রিকেটারদের এমন আন্তরিকতায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীরা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ দলকে পেয়ে যার পর নাই খুশি হয়েছিলেন। অর্থ খরচ করে আসাটা তাদের সার্থক হয়েছিল।
দৃশ্যপট-দুই: ২০২২ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে বাংলাদেশ দল এখন আছে অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে ব্রিসবেনে অবস্থানকালে একইভাবে প্রবাসীরা পুরো বাংলাদেশ দলকে নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু সেখানে সাকিব ছাড়া বাকি ক্রিকেটাররা সবাই কম-বেশি আন্তরিক ছিলেন। ক্রিকেটারদের জন্য রাখা ব্যাটে সাকিব তো নিজের অটোগ্রাফই দেননি, এমনকি ছবি তোলা, কথা বলায়ও তার ছিল অনীহা! দর্শকরা কিন্তু এই অনুষ্ঠানে অর্থের বিনিময়ে গিয়েছিলেন। তার এমন আচরণে প্রবাসীরা অনেক ব্যতীত হয়েছিলেন।
দুটি অনুষ্ঠানে ক্রিকেটারদের বিশেষ করে সাকিবের আচরণের এমন পার্থক্য হওয়ার কারণ আর্থিক। ফ্লোরিডায় সাকিবদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল অর্থের বিনিময়ে। কিন্তু ব্রিসবেনে কোনো আর্থিক বিষয় ছিল না।
এদিকে ব্রিসেবেনে যখন সাকিবের এরকম আচরণ, তখন সিডনিতে আবার সাকিবসহ দলের কয়েকজন ক্রিকেটারকে নিয়ে বড় আয়োজন করার প্রস্তুতি, ব্যাপক প্রচারণা। এরকম প্রচরণার কারণে এখানে সাকিবসহ যাদের নিয়ে যাওয়া হবে তাদের অর্থ দেওয়া হবে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। সাকিবের সঙ্গে নাম আছে তাসকিন আহমেদ ও লিটন কুমার দাসের। এই তিন জনের নাম দিয়ে পোস্টারও করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানের আয়োজক অনিক জোয়ার নামে এক প্রবাসী বাংলাদেশি এবং তার প্রতিষ্ঠান ইন্সপায়ার স্পোর্টস ও এবিএসসিএ। অনুষ্ঠানের নাম দেওয়া হয়েছে , `WELCOMES OUR NATIONAL STARS DINNER & EXCLUSIVE MEET & GREET EVENT’. আগামী ২৫ অক্টোবর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় শুরু হবে এই অনুষ্ঠান। হোবার্টে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে এবারের আসরের প্রথম ম্যাচ খেলে পরের দিন বাংলাদেশ দল আসবে সিডনিতে। এখানে ২৭ অক্টোবর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলবে দ্বিতীয় ম্যাচ।
সাকিবসহ অংশ নেওয়া ক্রিকেটারদের প্রদেয় অর্থের পরিমাণও অনেক বেশি। ক্রিকেটারদের এই অর্থ পরিশোধ করতে আবার প্রবাসীদের লোভনীয় অফার দিয়ে মোটা অঙ্কের ডলারও প্রস্তাব করা হয়েছে। এরকম একটি প্রস্তাবের চ্যাটিংয়ের ‘স্ক্রিনশট’ ঢাকাপ্রকাশ-এর হাতে এসেছে। যেখানে টিকিটের মূল্য রাখা হয়েছে ৯০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার। শুধু তাই নয়, আছে স্পেশাল টিকিটও। ১০ জনের একটি টেবিলের মূল্য রাখা হয়েছে ৫০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার। ৫ জনের সিলভার স্পন্সরশিপ টেবিলের মূল্য ১০০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার। পাওয়ার্ড বাই স্পন্সরশিপ ১০ জনের টেবিলের মূল্য ২০০০ অস্টেলিয়ান ডলার। এই টেবিলে আছে খেলোয়াড়দের সঙ্গে ওয়ান টু ওয়ান কথা বলা ও প্রোমো হাইলাইটস। ১০ জনের ভিআইপি টেবিল ২০০০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার দিয়ে কিনলে খেলোয়াড়দের সঙ্গে স্পেশাল ডিনার করার সুযোগ থাকবে। পাশাপাশি পার্সোনাল ছবি তোলা, ওয়ান টু ওয়ান পরিচয় পর্ব এবং অটোগ্রাফ আইটেমও থাকবে। এখানে আবার আলাদা করে সাকিবের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে সাকিবের অটোগ্রাফ থাকবেই।
আইসিসির ইভেন্ট চলাকালীন এরকম একটি অনুষ্ঠানে স্বয়ং দলের অধিনায়কের নেতৃত্বে কয়েকজন ক্রিকেটারের অংশ নেওয়া অবাক করার মতোই। অনুমোদনই বা দেওয়া হয় কী করে? এ ব্যাপারে বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী সুজনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অনুমতি না দেওয়ার বিষয়টি জানান।
আয়োজক অনিক জোয়ারের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ হয়নি। আমরা এটা করেছি মানুষের আগ্রহ কেমন আছে তা জানার জন্য। কিন্তু আমরা এখন এই অনুষ্ঠান করছি না।’
তাহলে এভাবে তারিখ, সময় ও ভেন্যু উল্লেখ করে পোস্টার করা নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন করছি না। পরে করব।’
এদিকে একটি সূত্রে জানা গেছে, অনুষ্ঠান আয়োজনের সব প্রস্তুতিই সম্পন্ন হয়েছিল। কিন্তু দলের অবস্থা ভালো না হওয়ায় এবং নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ জিততে না পারলে পরে এরকম একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিলে বিতর্ক সৃষ্টি হবে। এই ভাবনা থেকে পরে আয়োজকরা সরে আসেন।
এমপি/এসজি