ব্যাটিং ব্যর্থতায় প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের শোচনীয় হার
নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি আসরে বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে যে উন্নতি করেছিল, মনে আসা জাগিয়েছিল বিশ্বকাপে একটা ভালো কিছু করার সেখানে বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগেই খেয়েছে বিশাল বড় এক চোট। প্রস্তুতি ম্যাচের প্রথমটিতে ফিরে গেছে ব্যাটিং ব্যর্থতার সেই মায়াজালে। ৯ উইকেটে মাত্র ৯৮ রান করে হেরেছে ৬২ রানে। টস জিতে ব্যাট করতে নেমে আফগানিস্তান সংগ্রহ করেছিল৭ উইকেট ১৬০ রান।
এটা সত্য, নিউজিল্যান্ডে ত্রিদেশীয় আসরে বাংলাদেশ চারটি ম্যাচ হারলেও ক্রমান্বয়ে উন্নতি করেছিল। বিশ্বকাপে ভালো করার একটা পূর্বাভাসও উঁকি দিতে শুরু করেছিল। তার জন্য প্রস্তুতির শেষ ‘ল্যাবরেটরি’ ছিল দুটি অফিসিয়াল প্রস্তুতি ম্যাচ। টুকটাক যা ভুল-ভ্রান্তি ছিল, তা অনেকখানি শোধরে নেওয়ার। কিন্তু তার পরিবর্তে বাংলাদেশ ফিরে গেছে নিজেদের ব্যর্থতার সেই প্রাগঐতিহাসিক যুগে! না ব্যাটিং, না বোলিং, না ফিল্ডিং- সর্বত্রই ছিল ব্যর্থতার অমাজর্নীয় মিছিল!
উদ্বোধনী জুটিতে ব্যর্থতা, ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে রান করতে না পারার ব্যর্থতা। বল হাতে নিরামিষ বোলিং। ডেথ ওভারে গিয়ে রান নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার ব্যর্থতা। সহজ ক্যাচ হাতছাড়া করার মাশুল। যেন ব্যর্থতার ডায়রিয়া!
মূল আসর শুরু হওয়ার আগে আইসিসি প্রস্তুতি ম্যাচের আয়োজন করে থাকে, নিজেদের ভুল-ত্রুটি শেষবারের মতো শোধরে নেওয়ার জন্য। বাংলাদেশ যেন সেখানে সে কাজটি করেছে, নিজেদের ব্যর্থতাগুলোকে ভালোভাবে ‘শান’ দেওয়ার জন্য! যাতে করে মূল পর্বে গিয়ে সেগুলোকে ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারে?
আপাত দৃষ্টিতে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৯ উইকেটে ৯৮ রান অনেক কম মনে হলেও সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে কিন্তু অনেক বেশি রান। যে দল ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতেই মাত্র ২৮ রান যোগ করতে হারায় ৪ উইকেট। ২৮ রানের পর হারায় আরও ১ উইকেট। ইনিংসের মেয়াদ তখন মাত্র ৬.১ ওভার, প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানদের সবাই সাজঘরে, সেখান থেকে অলআউট না হয়ে পরে আরও ৪ উইকেট হারিয়ে ৭০ রান যোগ করা বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে ‘অবশ্য’ই উন্নতি হিসেবে দেখা হবে!
যে উইকেটে আফগান ব্যাটসম্যানরা রান করায় পারদর্শিতা দেখিয়েছেন, সেখানে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা রান করতে সংগ্রাম করেছেন। ফজল হক ফারুকী, মুজিবুর রহমান, মোহাম্মদ নবীকে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা খেলতেই পারেননি। ফজল হক ফারুকী মাত্র ৩ ওভার বোলিং করে ৯ রান দিয়ে বাংলাদেশের টপ অর্ডার ধ্বংস করে দেন। মুজিবুর রহমান ৩ ওভারে ১ উইকেট নিলেও রান দেন মাত্র ৫। দু'জনেরই ১৪টি করে বলে কোনো রান নিতে পারেননি বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা। মোহাম্মদ নবীও ৩ ওভারে ১২টি ডট বল দিয়ে ১১ রানে নেন ১ উইকেট।
বোলাররা যদি এমন ভয়ংকর হয়ে উঠেন তাহলে ব্যাটসম্যানদের অবস্থা কী হতে পারে, তা সহজেই অনুমান করা যায়। শেষ সুযোগ কাজে লাগাতে উদ্বোধনী জুটিতে আনা হয় আরেক দফা পরিবর্তন। মিরাজ (১২) ও নাজমুলের (১৬) জুটি কার্যকর হতে পারেনি। যদিও দু'জনের শুরুটা ছিল আশা জাগানিয়া। ১৭ বলে ১৯ রান যোগ করে পরের বলে নাজমুল ফিরে যান। ব্যস, তৃপ্তির ঢেকুর যা ছিল এই পর্যন্ত। ১ উইকেটে ১৯ রান থেকে ২৮ রানে পড়ে ৫ উইকেট। একে একে ফিরে যান সৌম্য (১), সাকিব (১) আফিফ (০)। পরে মোসাদ্দেক ২৯, নুরুল হাসান ১৩, মোস্তাফিজুর অপরাজিত ১০ রান করলে বাংলাদেশ শতরান করতে না পারলেও অলআউট ঠেকাতে পেরেছিল।
ব্যাটসম্যানদের এই ব্যর্থতার আগে শুরু হয়েছিল বোলারদের ব্যর্থতা। হাসান মাহমুদ ও তাসকিন ছাড়া সবাই ছিলেন ব্যর্থতার মিছিলে অগ্রণী সৈনিক। হাসান মাহমুদ ৪ ওভারে মাত্র ২৪ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে নিজের ভালো করার ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন। তার ২৪ বলের মাঝে ১৭ বলেই ব্যাটসম্যানরা কোনো রান নিতে পারেননি। সাকিব ২ উইকেট নিলেও ৪ ওভারে ৪৬ রান দেন। মোস্তাফিজ যথারীতি ধারহীন বোলিং করে ৪ ওভারে ৩১ রান দিয়ে কোনো উইকেট নিতে পারেননি। দু'জনেই ৮টি করে ডট বল দেন। নাসুম আহমেদ ২ ওভারে ১৬ রান দিয়ে থাকেন উইকেটশূন্য। মোসাদ্দেক ১ ওভারে ৪ রান দেন। সৌম্য সরকার ১ ওভারে দেন ৫ রান।
আফগানরা প্রথম ১০ ওভারে সংগ্রহ করেছিল ২ উইকেটে ৬৭, সেখান থেকে পরের ১০ ওভারে যোগ করে ৫ উইকেটে ৯৩ রান। এমনকি ১৫ ওভার শেষে তাদের রান ছিল ৪ উইকেটে ১০৫। শেষ ৫ ওভারে যোগ করে ৫৫। এর মাঝে শেষ ২ ওভারে সংগ্রহ করে ৩৩। সাকিবের ওভারে ১৯ ও তাসকিনের ওভারে ১৪। মূখ্য ছিলেন মোহাম্মদ নবী। মোহাম্মদ নবী ১৭ বলে ৫ ছক্কায় ৪১ রান করে অপরাজিত থাকেন।
এমপি/এসজি