১৭৩ রান করেও বাংলাদেশের হার
এটা যেন অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। নিয়তির নির্মম পরিহাসও। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের দুরবস্থার কারণ ব্যাটিং ব্যর্থতা। তারপরও মাঝে মাঝে ব্যাটিং ভালো হলে সেদিন আবার বোলিং ভালো হয় না। কিন্তু সাফল্য পেতে হলে প্রয়োজন ব্যাটিং-বোলিংয়ের সফল মিলন। এটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কম ঘটে বলেই হারটা হয় বেশি।
আজ যেমন পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে জ্বলে উঠেছিল। কিন্তু বোলিং আবার হয়ে গিয়েছিল নখদন্তহীন। যে কারণে ৬ উইকেটে ১৭৩ রান করে বাংলাদেশ হেরেছে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে। ১ বল অবশিষ্ট থাকতে ৩ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান করে ১৭৭ রান। এ নিয়ে তিন জাতির আসরে বাংলাদেশ সবগুলো ম্যাচেই হারল।
৭ উইকেটে হার দেখলে মনে হবে বাংলাদেশ ১৭৩ রান করেও লড়াই করতে পারেনি। আবার যখন দেখা যাবে ১ বল বাকি থাকতে পাকিস্তান ম্যাচ জিতেছে, তখন মনে হবে ম্যাচ হয়েছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই! সেটিই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হতে পারেনি। কারণ বাংলাদেশের বোলিং হয়ে গিয়েছিল নখদন্তহীন। আগের দিন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ভালো করেছিলেন। ৭ উইকেটে করেছিলেন ১৬০ রান তারপরও তারা ম্যাচ হেরেছিল ৪৮ রানে। কারণ তার আগেই যে নিউজিল্যান্ড করে ফেলেছিল ৫ উইকেটে ২০৮ রান। বোলিং ভালো না হওয়াতে বাংলাদেশকে হারতে হয়েছিল ৪৮ রানের বড় ব্যবধানে।
বাংলাদেশের বোলারদের আসলে নখদন্তহীন করে দেন পাকিস্তানের দুই ওপেনার অধিনায়ক বাবর আজম ও দুর্দান্ত ফর্মে থাকা উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ রিজওয়ান। ১২.৩ ওভারে তারা ১০১ রান যোগ করেন। তিন জাতির আসরে উদ্বোধনী জুটিতে এটি ছিল প্রথম শতরান। ১৭৩ রান কারা করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে যদি ১০১ রান চলে আসে সেখানে জয় নিয়ে সংশয় খুব একটা থাকে না। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশ ক্ষণিকের জন্য হলেও ম্যাচে ফিরে এসেছিল হাসান মাহমুদ এক ওভারে ৩ বলের ব্যবধানে বাবর আজম ও হায়দার আলীকে ফিরিয়ে দিলে। ৩৭ বলে ক্যারিয়ারের ২৯ তম হাফ সেঞ্চুরি করে আর বেশিদূর যেতে পারেননি পাকিস্তানের কাপ্তান। ৫৫ রানে তিনি আউট হয়ে যান। তার ইনিংসে ছিল নয়টি বাউন্ডারি। মোহাম্মদ রিজওয়ান ছিলেন কিছুটা ধীরগতিতে। সাম্প্রতিক সময়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে হাফ সেঞ্চুরিকে ‘নানাবাড়ির দুধ ভাত’-এ পরিণত করে ফেলা এই ব্যাটসম্যান আরেকটি হাফ সেঞ্চুরি করেন ৪২ বলে। এটি ছিল তার ক্যারিয়ারের ২২তম এবং এই আসরের দ্বিতীয়। বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের ম্যাচেও তিনি করেছিলেন অপরাজিত ৭৮ রান।
মো. রেজওয়ানের এই ধীর গতির ব্যাটিং পুষিয়ে দেন নেওয়াজ। তৃতীয় উইকেট জুটিতে দুজনে ৬ ওভারে যোগ করেন ৬৪ রান। এই জুটির রানই বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে পুরোপুরি ছিটকে দেয়। পাকিস্তানের জয়টাকে করে তুলে শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার।
রিজওয়ান-নেওয়াজ জুটি বাধার আগে পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ৪৩ বলে ৭৩ রানের। এই জুটির রানের পর পাকিস্তানের সংগ্রহ নেমে আসে ৭ বলে ৯ রানে । ষষ্ঠ বোলার হিসাবে ১৯ নম্বর ওভারে সৌম্য সরকার বল হাতে নিয়েই রিজওয়ানকে আউট করেন নাজমুল হাসান শান্তর সহায়তায়।
রিজওয়ানের ৫৬ বলে ৬৯ রানের ইনিংসে ছিল ৪টি বাউন্ডারি। শেষ ওভারে পাকিস্তানের প্রয়োজন পড়ে ৮ রানের। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের করা ওভারের প্রথম চার বলে ৭ রান নেওয়ার পর মোহাম্মদ নেওয়াজের ব্যাট থেকে বাউন্ডারির মাধ্যমে আসে জয়-সুচক রান।
নেওয়াজ ২০ বলে এক ছক্কা ও পাঁচ বাউন্ডারিতে ৪৫ রান করে অপরাজিত থাকেন। তার সঙ্গে আসিফ আলী ২ বলে দুই রানে থাকেন অপরাজিত। বাংলাদেশের সফল বোলার ছিলেন হাসান মাহমুদ। তিনি চার ওভারে ২৭ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। সৌম্য সরকার ১ ওভারে হাত ঘুরিয়ে ৬ রানে নেন ১ উইকেট। উইকেট না পাওয়া বোলারদের মাঝে সবচেয়ে বেশি অমিতব্যয়ী ছিলেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। তিনি ৩.৫ ওভার বোলিং করে রান দেন ৫৩। এ ছাড়া সাকিব আল হাসান ৩ ওভারে ২৮, শরিফুল ৪ ওভারে ৩০ তাসকিন ৪ ওভারে ৩২ রান দেন। ম্যাচ সেরার পুরস্কার যায় মোহাম্মদ রিজওয়ানের পকেটে।
এমপি/আরএ/