হারের আগে সাকিবের ব্যাটে বাংলাদেশের লড়াই

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের বিপর্যয়ের অপর নাম ব্যাটসম্যানদের ভয়াবহ ব্যর্থতা। আগে-পরে যখনই ব্যাটিং করুক দেড়শ অতিক্রম করা কঠিন হয়ে পড়ে।
সেখানে যদি নিউজিল্যান্ড ২০৮ রান অতিক্রম করার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়, তা’হলে সে চ্যালেঞ্জ নেয়ার দুঃসাহস কি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের আছে? ম্যাচের চিত্রনাট্য তখনই লেখা গেছে বাংলাদেশের ললাটে আরেকটি হার।
দেখার বিষয়ছিল সেই হারটা কেমন হয়? সেখানে তারা অন্তত লড়াই করার মানসিকতা দেখিয়েছে। হারার আগে যে হেরে যাওয়া, সেখান থেকে বের হয়ে এসে হার মেনেছে ৪৮ রান। ২০ ওভারে রান করেছে ৭ উইকেটে ১৬০। তিন জাতির আসরে বাংলাদেশের এটি ছিল টানা তৃতীয় জয়। বাংলাদেশে এই হারে তিন জাতির আসরের নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গেল।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের চালচিত্র আগে-পরে যখনই হোক না কেন ১২০, ১৩০, ১৪০ এর ঘরে ঘৃুরাঘুরি। সেখান থেকে বের হয়ে এসে এবার তারা করেছে ১৬০ রান। এ ১৬০ রান করার মাঝে ছিল একটা লড়াকু মনমানসিকতা। তিন জাতির আসরে প্রথম দুই ম্যাচে যেমন হারার আগেই হেরে বসেছিল, এবার এভারস্টের চূড়ায় উঠার মতো কঠিন টার্গেট থাকার পরও বাংলাদেশ লড়াই করেছে।
এভারেস্টের চূড়ায় উঠতে গেলে একজন এডমন্ড হিলারির প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের সে রকম কেউ নেই, যিনি এডমন্ড হিলারির ভুমিকায় অবতীর্ণ হবেন। তারপরও এই ম্যাচে ‘অনেকটাই’ এডমন্ড হিলারির ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন মাঠের বাইরে একের পর এক সমালোচনা আর বিতর্কের জন্ম দেওয়া অধিনায়ক সাকিব। ১ ছক্কা ও ৮ চারে ৪৪ বলে খেলেন ৭০ রানের ইনিংস। ছোট ছোট অবদান ছিল লিটন দাস, সৌম্য সরকারের। দুই জনেই ২৩ রান করে করেন।
যেহেতু এই সিরিজ বাংলাদেশের পরীক্ষা-নিরীক্ষার। তাই এই ম্যাচেও ছিল যথরীতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা। মেহেদি হাসান মিরাজ-তাসকিন আহমেদ ও হাসান মাহমুদকে সেরা একাদশের বাইরে রেখে সৌম্য সরকার, মোহাম্মকদ সাইফউদ্দিন ও এবাদত হোসেনকে সুযোগ করে দেওয়া হয়। তিনজনই সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন। সৌম্য ২৩ রানের পাশাপাশি বল হাতে ২ ওভার বোলিং করে ২১ রান দেন। সাইফউদ্দিন ও এবাদকত দুইজনেই ২টি করে উইকেট নেন যথাক্রমে ৩৭ ও ৪০ রানে। কনওয়ের ৪০ বলে ৬৪ ও ম্যাচ সেরা গ্লেন ফিলিপসের ২৪ বলে ৬০ রানের ইনিংসের সুবাদে নিউজিল্যান্ড টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৫ উইকেটে করে ২০৮ রান।
এই ম্যাচে বাংলাদেশ লম্বা ব্যাটিং লাইন নিয়ে খেলতে নামে। ৮ জন প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যান ছিলেন। একজন বোলারের ঘাটতি মেটানো হয় সৌম্য সরকার ও মোসাদ্দেক হোসেনকে দিয়ে। দুজনেই ২ ওভার করে বোলিং করে ২১ ও ২৪ রান দেন। যেখানে প্রতিষ্ঠিত বোলাররাই দিয়েছেন তাদের ৪ ওভারের রান দেওয়ার চেয়ে সামান্য কিছু কম রান।
লম্বা ব্যাটং লাইন নিয়ে খেলতে নামলেও সাকিব, লিটন, সৌম্য ছাড়া আর কেউই নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। মিরাজ সেরা একাদশে না থাকায় সৌম্য ফিরলেও ইনিংসের উদ্বোধন তাকে দিয়ে করানো হয়নি। লিটন দাসকে আবার ফিরিয়ে আনা হয়। নিজেরে চেনা জায়গা ফিরে পেয়ে লিটন বিস্ফোরক হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু থেমে যান ১৬ বলে ২৩ রান করে ব্রেসওয়েলের বলে গাপটিলের হাতে ধরা পড়ে। আউট হওয়ার আগে ১ ছক্কার পাশাপাশি বাউন্ডারি হাঁকান ৩টি। আগের ম্যাচে ইনিংস উদ্বোধনের সুযোগ পেয়ে ২৯ বলে ৩৩ রান করা নাজমুল হোসেন শান্ত এই ম্যাচে সুবিধা করতে পারেননি। ১২ বলে ১১ রান করে তিনি লিটনের আগে আউট হন। ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশের রান আসে ২ উইকেটে ৫২। লিটনের পাশাপাশি সৌম্য সরকারের ভুমিকাও ছিল এই সংগ্রহে। সাকিব এই ম্যাচে চারে ব্যাটিং করেন। পাঁচে নেমে যান আফিফ।
লিটন ফিরে যাওয়ার পর সাকিব উইকেটে এসেই মারমুখি ব্যাটিং শুরু করেন এবং সফলও হতে থাকেন। সৌম্য সরকারের সঙ্গে জুটিতে ৪৩ রান আসে মাত্র ৪.৩ ওভারে। সৌম্য মিলানের বলে বোল্টের হাতে ধরা পড়ে বিদায় নেয়ারন পড়ে বিদায় নেন। এ সময় বাংলাদেশের রান ছিল ৩ উইকেটে ১০ ওভারে ৯০।সাকিবের রান ছিল ১৫ বলে ২৬। সেখানে পরের ১০ ওভারে যোগ হয় ৪ উইকেটে ৭০।
সাকিব পরে আরও ২৯ বল খেলে ৪৪ রান করার পরও রান বেশি না হওয়ার কারণ অপরপ্রান্তে মড়ক লাগা। যে ইয়াসির আলী পাকিস্তানের বিপক্ষে, নুরুল হাসান সোহান নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আগ্রাসী ব্যাটিং করেছিলেন,সেখানে এই ম্যাচে তারা ব্যর্থ হন। ব্যর্থতার খাতায় নাম লেখান আফিফ। কেউই দুই অংকের ঘরে যেতে পারেননি।
উইকেট পতন অব্যাহত থাকলেও সাকিব নিজের আগ্রাসী ব্যাটিং থামাননি। ৩৩ বলে ৬ বাউন্ডারিতে তুলে নেন ক্যারিয়ারেরর ১১তম হাফ সেঞ্চুরি। ইনিংস শেষ হওয়ার ১০ বল বাকি থাকেেত এই ম্যাচে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা টিম সাউদির বলে কনওয়ের হাতে ধরা পড়ে। নিউ ঝিল্যান্ডের অ্যাডাম মিলানে ২৪ রানে নেন ৩ উইকেট। ২টি করে উইকেট নেন টিম সাউদি ও মিচেল ব্রেসওয়েল।
এমপি/এসআইএইচ/এমএমএ/
