নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ফিরতি ম্যাচেও পরীক্ষা-নিরীক্ষা
একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশ একটি ম্যাচ জিতলেই হুলুস্থুল কাণ্ড ঘটে যেত। উন্মাদনার কমতি থাকত না। কেউ একটা হাফ সেঞ্চুরি করলে অনেক বড় প্রাপ্তি হিসেবে দেখা হতো। সেঞ্চুরি হলে তো কথাই নেই। সেখানে পরে এসেছিল দিন-বদলের গান। জয়টা নিয়মিত হয়ে উটে। হাফ সেঞ্চুরিও আসতে থাকে অহরহ। এখন সেঞ্চুরিতে পূর্নতা খোঁজে পান সবাই। হাফ সেঞ্চুরিকেত সন্তুষ্প নন কেউ। কিন্তু সেই দিন-বদলের গানে বেসুর আওয়াজ।
পাকিস্তানের বিপক্ষে ইয়াসির আলীর ২১ বলে অপরাজিত ৪২ কিংবা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নুরুল হাসান সোহান ১২ বলে অপরাজিত ২৫ রানের মাঝে নতুন টেকিনিক্যাল ডিরেক্টর শ্রীধরন শ্রীরাম দেখছেন উন্নতি হিসেবে। তিনি এমন দুই ম্যাচের উদাহরণ দিয়েছেন, যেখানে বাংলাদেশ দল হার মেনেছিল কোনো রকম লড়াই ছাড়াই। আবার এমনিতেই দল আছে ক্রমাগত হারের মাঝে।
আগামীকাল বুধবার (১২ অক্টোবর) ক্রাইস্টচার্চের হেগলি ওভালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ফিরতি ম্যাচ নিয়ে বেশ উচু কন্ঠেই জানালেন, ‘উন্নতি হয়েছে অনেক। বিশেষ করে আমাদের মিডল অর্ডার অনেক উন্নতি করেছে।হারিস রউফের বোলিংয়ের বিপক্ষে রাব্বির (ইয়াসির আলী) ব্যাটিং কিংবা ট্রেন্ট বোর্টের বিপক্ষে নুরুলের ব্যাটিং এ সবই ছিল খুবই ইতিবাচক।’ শ্রীধরন এই দুই বোলারকে বিশ্বের সেরা বোলার হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘এই দুই জনই বিশ্বের সেরা বোলারদের মধ্যে আছে। তাদের বিপক্ষে এভাবে খেলে অনেক আত্মবিশ্বাস পাওয়া যায়।’ শ্রীধরন যেভাবে বলেছেন, তাতে মনে হবে এই দুই বোলার বা এ রকম বোলারদের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা আগে কখনো খেলেননি।শুধু এই দুইজন নন, নাজমুল হোসেন শান্তর ফিরে আসা ম্যাচে ২৯ বলে ৩৩ রানের ইনিংস নিয়েও তিনি প্রশংসা করেছেন। সাকিব ফিরে আসাতে মিডল অর্ডার শক্তিশালী হয়েছে বলেও জানান তিনি। তিনি অপেক্ষায় আছেন লিটন দাস ও আফিফ হোসেনের ফিরে আসার।
শ্রীধরনের প্রশংসা ঝরেছে পেসারদের নিয়েও। অথচ দুইটি ম্যাচে পেসাররা আহমরি ভালো কিছু করতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘পেস বোলাররা ইতিবাচক ছিল। প্রথম ম্যাচে তাসকিনের বোলিং, দ্বিতীয় ম্যাচে ফিন অ্যালেনের বিপক্ষে শরিফুলের বোলিং, ইনজুরি থেকে ফিরে হাসানের বোলিং ছিল পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন।’ মোস্তাফিজকে নিয়ে জানালেন, ‘সে ভালোভাবে ঘুরে দাঁড়াবে।’ দলে থাকা অপর দুই স পেসার ইবাদত ও সাইফও খেলার সুযোগ পাবে বলে জানান শ্রীধরন।
পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড তিন ম্যাচে দুইটি করে জয়ী হয়ে ফাইনালের পথে এক পা দিয়েই রেখেছে। বাংলাদেশ দলের যে ভঙ্গুর অবস্থা, তাতে করে কোনো ম্যাচ জেতার কথা আশাও করা যায় না। তারপরও গাণিতিক হিসেবে বাংলাদেশ এখনো লড়াইয়ে আছে। যদি তারা পরের দুই ম্যাচ জিততে পারে, তা’হলে তিন দলের পয়েন্টই সমান হয়ে যাবে। তখন নেট রান রেট বিবেচনা করা হবে। কিন্তু বাস্তবতরা নিরিখে এটি আকাশ-কুসুম কল্পনা। আরেকটি হারকে মেনে নিয়েই বাংলাদেশ মঙ্গলবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলতে নামবে। প্রথম লিগে তারা হেরেছিল ৮ উইকেটে।
দলের দুঃসময়ে শ্রীধরন সমর্থক ও মিডিয়ার সমর্থন চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের পাশে থাকার জন্য মিডিয়া ও সমর্থকদের আমি অনুরোধ করছি। এটি দেশ ও আবেগের ব্যাপার। খেলোয়াড়রা সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করছে ভালো করার। আমরা ম্যাচ জিতে দেশবাসীকে উপহার দিতে চাই।
অধিনায়ক সাকিব ভালো করার জন্য দলের খেলোয়াড়দে নিয়ে কাজ করছেন বলে জানান।শ্রীধরন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এমন একটি জায়গা, যেখানে ওঠা-নামা থাকবেই। এ সময় সবাইকে স্থির থাকতে হবে। সাকিব দল নিয়ে অনেক কাজ করছে। সব সময় তাদের সঙ্গে কথা বলছে। আমার মনে হয় দলকে কিভাবে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া যায়, তার পরিকল্পনা আছে সাকিবের কাছে। এটি সাকিবের দল। আমরা তাকে সব দিক থেকে সহযোগিতা করে যাব।’
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচেও বাংলাদেশ দলের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলবে বলে জানান শ্রীধরন। তিনি বলেন, ‘আমাদের পরীক্ষা-নীরিক্ষা চলবে।’
শ্রীধরন অপেক্ষায় আছেন বাংলাদেশ দল নিয়ে গর্ব করার মতো উপলক্ষ এনে দেয়ার। তিনি বলেন, ‘আমরা ধৈর্য ধরে এগুতে চাই। আমরা যে রকম দল চেয়েছিলাম, তা পেয়ে গেছি, যারা ভবিষ্যৎয়ে ভালো করবে। আমরা বিশ্বকাপের অপেক্ষায়ও আছি। আমরা যে রকম ব্র্যান্ডের ক্রিকেট খেলব, তাতে করে বাংলাদেশ দলকে আমরা নিশ্চিতভাবে গর্ব করার মতো উপহার দেব।
এমপি/এমএমএ/