হারের জালেই আটকা বাংলাদেশ
সেই চির চেনা পরিবেশ। হারের বৃত্তেই আটকে থাকল বাংলাদেশ। পারেনি হারের জাল ছিন্ন করে জয় উপহার দিতে। হেরেছে ২১ রানে। তবে এই হারে আছে সান্ত্বনার প্রলেপ। পাকিস্তানের কাছে হারলেও সহজে ছেড়ে কথা বলেনি। জয়ের আবহ তৈরি করতে না পারলেও লড়াই করেছে। পাকিস্তানের ৫ উইকেটে করা ১৬৭ রানের পেছনে ছুটে বাংলাদেশ যেতে পেরেছে ৮ উইকেটে ১৪৬ রানে।
তিন জাতির টি-টোয়েন্টি আসরে এটি ছিল প্রথম ম্যাচ। স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড মাঠে নামবে আগামীকাল ৮ অক্টোবর পাকিস্তানের বিপক্ষে। বাংলাদেশের পরের ম্যাচ ৯ অক্টোবর রবিবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। ডাবল লিগ পদ্ধতিরে আসরে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থাকা দুইটি দল ১৪ অক্টোবর খেলবে ফাইনাল।
শক্ত প্রতিপক্ষ হওয়ার পরও বাংলাদেশ এই ম্যাচ খেলতে নেমেছিল নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে ছাড়াই। উইন্ডিজে সিপিএল খেলে টিকিট ও ভিসা সমস্যার কারণে তিনি ম্যাচের আগের দিন বৃহস্পতিবার নিউজিল্যান্ড সময় সন্ধ্যায় দলের সঙ্গে যোগ দেন। সাত সমুদ্র তের নদী পাড়ি দিয়ে আসা সাকিব দীর্ঘ ভ্রমণ ক্লান্তির কারণে তাকে আর সেরা একাদশে নামানো হয়নি। তার নাম ছিল ১৫ জনের সবার শেষে। তার পরিবর্তে টস করেন সহ-অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান। মুদ্রা নিক্ষেপণে জয়ী হয়ে বোলারদের হাতে বল তুলে দেওয়ার পর তাদের সামনে টার্গেট দাঁড়ায় ১৬৮ রান করার।
এই রান পাড়ি দিতে নতুন উদ্বোধনী জুটির সন্ধানে থাকা বাংলাদেশ দলের টিম ম্যানেজমেন্ট সাব্বির-মিরাজের উপর চতুর্থবারের মতো আস্থা রেখেছিলেন। কিন্তু সেই আস্থার প্রতিদান তারা জুটি হিসেবে দিতে ব্যর্থ হন। যদিও শুরুটা ছিল আগ্রাসী। কিন্তু ২৫ রানে থেকে যেতে হয় তাদের। আগের ৩ ম্যাচে প্রথমে আউট হয়েছিলেন সাব্বির। এবার প্রথমে আউট হন মিরাজ। ৪.২ ওভারে দলীয় ২৪ রানে তিনি ফিরে যান ১১ বলে ১০ রান করে। এর মাঝে ১টি ছক্কাও ছিল। মোহম্মদ ওয়াসিমের বলে পুল করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে আসিফ আলীর হাতে ধরা পড়েন। সাব্বিরও মারমুখী ব্যাটিং করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সফল হতে পারেননি। ১৮ বলে ১৪ রান করে হারিস রউফের বলে তার হাতেই ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন। তখনো ব্যাটিং পাওয়ার প্লে শেষ হয়নি। দ্রুত দুই ওপেনারকে হারিয়ে একটু চাপেই পড়ে যাওয়া বাংলাদেশ দলের নতুন দুই ব্যাটসম্যান লিটন দাস ও আফিফ হোসেন ক্রিজে এসে একটু দেখে-শুনে খেলার চেষ্টা করেন। লিটন দাস ছিলেন বেশ সংযত। এখানে তারা সফলও হন। জুটিতে ৫০ রান আসে ৬.৪ ওভারে। শুরুতে সংযমী থাকা লিটন দাস যখনই হাত খুলে খেলার চেষ্টা শুরু করেন, তখনই বিদায় হয়ে যান। এক পর্যায়ে তার রান ছিল ১৭ বলে ১৭। পরের ৮ বলে যোগ করেন ১৮ রান। ১৮ বলে ৩৫। এরপরই তিনি আউট হয়ে যান মোহাম্মদ নেওয়াজের বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে হায়দার আলীর হাতে ধরা পড়ে।
লিটন আফিফ জুটির অর্ধশত রানের জুটি ম্যাচে বাংলাদেশকে জীবন্ত রেখেছিল। কিন্তু জুটি ভাঙার পরপরই আবার মড়ক লাগে। লিটন দাস আউট হওয়ার পলের বলেই ফিরে যান মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত কোনো রান না করেই। দলীয় শতরানের আগেই ফিরে যান আফিফও ২৩ বলে ১টি করে চার ও ছয় মেরে ২৫ রানে। দ্রুত বিদায় নেন অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহানও ৮ রানে। ২ উইকেটে ৮৭ রান থেকে দলের রান দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ১০১। মাত্র ১৪ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে সম্পূর্ণ ছিটকে যায় বাংলাদেশ। ম্যাচের বাকিটা হয়ে থাকে শুধুই আনুষ্ঠানিকতা। তখনও বাকি ৫.১ ওভার। জয়ের জন্য প্রয়োজন ৬৭ রানের। অন্য কোন দল হলে শেষ চেষ্টা করে দেখত। কিন্তু বাংলাদেশের এমন ব্যাটসম্যান নেই, যারা এমন সাহসী কাজ করে দেখাতে পারেন। ইয়াসির আলী ও তাসকিন অবশ্য ৩.২ ওভার টিকলেও রান করেন ১৮। তাসকিন ৮ বল খেলে মাত্র ২ রান করে মোহাম্মদ ওয়াসিমের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন। পরের বলেই ফিরে যান নাসুম বোল্ড হয়ে। শেষ পর্যন্ত ইয়াসির আলী হারিস রউফের শেষ ওভারে চড়াও হয়েছে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ২০ রান সংগ্রহ করলে বাংলাদেশের হারের ব্যবধান কমে আসে ২১ রানে। ইয়াসির আলী টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের লজ্জা দিয়ে ২১ বলে ২ ছক্কা ও ৫ চারে ৪২ রান করে অপরাজিত থাকেন। এটি তার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ রান। আগের সর্বোচ্চ রান ছিল ২৭। তিনি এই ইনিংস খেলেছেন ইনজুরি থেকে ফিরে এসে।
পাকিস্তানের হয়ে মোহাম্মদ ওয়াসিম ২৪ রানে ৩ উইকেট। মোহম্মদ নেওয়াজ ২ উইকেট নেন ২৫ রানে। ১টি করে উইকেট নেন শাহওয়াজ দাহানি, হারিস রউফ ও শাদাব খান।
এর আগে পাকিস্তান টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ম্যাচ সেরা ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ানে অপরাজিত ৭৮ রানে ভর করে ৫ উইকেটে ১৬৭ রান সংগ্রহ করে। রিজওয়ান ৩৮ বলে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ২১তম হাফ সেঞ্চুরি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭ ম্যাচের সিরিজে তিনি ৪টি হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন। এর আগে এশিয়া কাপে ৬ ম্যাচ করেছিলেন ৩টি হাফ সেঞ্চুরি। সর্বশেষ ১৪ ম্যাচে এটি ছিল তার অষ্টম হাফ সেঞ্চুরি। রিজওয়ান ছাড়া অধিনায়ক শান মাসুদ ৩১, বাবর আজম ২২ ও ইফতেখার আহমেদ ১৩ রান করেন। তাসকিন ২৫ রানে নেন ২ উইকেট। ১টি করে উইকেট নেন মিরাজ ১২, নাসুম ২২ ও হাসান মাহমুদ ৪২ রান দিয়ে।
এমপি/আরএ/