ছন্নছাড়া সাকিবরা শুক্রবার মাঠে নামবেন নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে
মাঠের প্রভাব যেন মাঠের বাইরেও পড়েছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে খুবই দুঃসময় পাড়ি দিচ্ছে বাংলাদেশ। হারতে হারতে দুর্বল জিম্বাবুয়ের কাছেও হার মেনেছে। ক্রমাগত এই হার বাংলাদেশ দলকে ছন্নছাড়া করে তুলেছে। কেমন যেমন লক্ষ্যহীন, দিকভ্রান্ত। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও নিউ জিল্যান্ডে তিন জাতির আসর খেলতে যাওয়ার আগে তেমনভাবে কোনো অনুশীলনও হয়নি। অধিনায়ক করা হয়েছিল সাকিবকে দলের দুঃসময় পাড়ি দেওয়ার জন্য। কিন্তু তিনিও দলের সঙ্গে নেই। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে শুক্রবার (৭ অক্টোবর) তিন জাতির আসরের প্রথম ম্যাচ খেলার আগে তিনি একদিনও দলের সঙ্গে অনুশীলন করেননি। দলে যোগ দিয়েছেন আজ নিউ জিল্যান্ড সময় সন্ধ্যায়। ম্যাচের হিসেবে ২৪ ঘণ্টারও কম সময় আগে তিনি দলের সঙ্গী হয়েছেন। খেলা শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল ৮ টায়।
দলের দুঃসময়ে অধিনায়কের এমন খামখেয়ালিপনা দলকে নিরুৎসাহিত করার জন্য যথেষ্ট। যদিও টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে সাকিবের পক্ষ নিয়ে সাফাই গেয়ে বলা হচ্ছে সাকিব সব সময় দলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। খোঁজ খবর নিয়েছেন। কিন্তু এভাবে খোঁজ খবর নেওয়ার মাঝেই কি অধিনায়কের দায়িত্ব পালন হয়ে যায়? তিনি এ কাজটি এমন একসময় করেছেন যখন পাকিস্তান ও নিউ জিল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫ ম্যাচে জয় মাত্র ৩টি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৩ ম্যাচে জয় ২টি।
একজন সাকিব দলের জন্য কতটা প্রয়োজনীয় তা বোঝা যায় মেহেদী হাসান মিরাজের কথায়। আজ বিসিবির পাঠানো ম্যাচ পূর্ব এক ভিডিওবার্তায় মিরাজ বলেছেন, ‘সাকিব ভাই আজকে আমাদের সঙ্গে জয়েন করেছেন। এটা আমাদের জন্য অন্য বড় সুবিধা। কারণ সর্বশেষ সিরিজে সাকিব ভাই ছিলেন না। এখন আমাদের পরিপূর্ণ দল হয়েছে। আমরা সবাই একসঙ্গে অনুশীলন করে মাঠে নামতে পারব।’
এই সিরিজ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের সর্বশেষ প্রস্তুতি। এখান থেকেই যতটুকু সম্ভব নিজেদের ঝালাই করে নিতে হবে। তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপের আগে এরকম ত্রিদেশীয় সিরিজ আমাদের দলকে অনেক উজ্জীবিত করবে। পাকিস্তান বিশ্বকাপে ভালো করেছে, এশিয়া কাপেও ভালো ক্রিকেট খেলেছে এবং নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে খেলব। আশা করি, বড় দুটি দলের সঙ্গে আমাদের আত্মবিশ্বাস ভালো থাকবে, প্রতিটি ক্রিকেটারের প্রস্তুতি এখানে গুরুত্বপূর্ণ। যার যার জায়গা থেকে পারফর্ম করাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি এখানে ভালো পারফর্ম করতে পারি, বিশ্বকাপে গিয়ে অনেক বেশি ভালো ক্রিকেট খেলতে পারব আশা করি।’
নিউ জিল্যান্ডকে বাংলাদেশ যে ৩ বার হারিয়েছে, তা ঘরের মাঠেই। গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে স্পিনিং উইকেট বানিয়ে সফরকারীদের ৫ ম্যাচের সিরিজে বধ করেছিল ৩-২ ব্যবধানে। এই ম্যাচ নিয়ে জয়ের কোনো আশাবাদ ব্যক্ত করেননি। অবশ্য তা করার কথাও নয়। মিরাজ বলেন, ‘ফলাফল তো আমাদের হাতে নেই। আমরা প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পারি, ব্যক্তিগতভাবে ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি।’
নিউ জিল্যান্ড গিয়ে বাংলাদেশ মাত্র ৩ দিন অনুশীলন করেছে। এতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন মিরাজ। তিনি বলেন, ‘আমরা যে তিনদিন অনুশীলন করেছি, খুব ভালো অনুশীলন হয়েছে। বোলাররা বোলিং করেছে, ব্যাটসম্যানরা ব্যাটিং করেছে। দুটি গ্রুপে আমাদের অনুশীলন হয়েছে এবং সুনির্দিষ্ট অনুশীলন করেছি আমরা। যার যতটুকু দরকার, ততটুকুই করেছি। বিশেষ করে, আমি ব্যাটিং করেছি এবং বোলিংও করেছি। পেস বোলাররা স্পট বোলিং করেছে। যার যার যতটুকু দরকার, খুব ভালো প্রস্তুতি হয়েছে। কোচিং স্টাফ যারা আছেন, তারা খুব ভালো সহায়তা করেছেন আমাদের। আমাদের এখানে সহজ ছিল না অনুশীলন সেশন, কারণ এখানে একটু বেশি ঠান্ডা। তার পরও সবাই খুব ভালো মানিয়ে নিয়েছে। আমাদের দলের জন্য এটা ইতিবাচক দিক।’
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের ভালো করতে না পারার অন্যতম কারণ উদ্বোধনী জুটিতে সমস্যা। ল্যাবরেটরিতে এই মুহূর্তে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে মিরাজ-সাব্বিরকে দিয়ে। কিন্তু সেখানে ফলাফল খুব একটা আশাব্যঞ্জক হওয়ার মতো ছিল না। বিশেষ করে সাব্বিরকে নিয়ে। মিরাজ মোটামুটি উতরে গেছেন।
এ নিয়ে মিরাজ বলেন, ‘যেহেতু আমি ওপেনিংয়ে একটা সুযোগ পেয়েছি। চেষ্টা করছি ভালো ক্রিকেট খেলার জন্য এবং আমি উপভোগ করছি। সবাই আমাকে সাপোর্ট করছে। এই জিনিসটা ভালো লাগছে। আমার উপর সবাই অনেক বিশ্বাস রাখছে। আমি নিজেও অনেক আত্মবিশ্বাসী। এখন শুধু মাঠে ভালো ক্রিকেট খেলার অপেক্ষায়।’
যেহেতু এই সিরিজ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শেষ প্রস্তুতি, তাই আবারও নতুন করে এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হতে পারে। মিরাজকে রেখে তার সঙ্গে আবার লিটন দাসকে ফিরিয়ে আনা হতে পারে। আবার এমনও হতে পারে নাজমুল হোসেন শান্তকে দিয়েও চেষ্টা করা হতে পারে। নির্বাচক কমিটির সদস্য হাবিবুল বাশার কোনো নাম উল্লেখ না করে উদ্বোধনী জুটিতে পরিবর্তনের আভাস দিয়েছেন।
এমপি/এসজি