নেপালের ক্যাসিনোতে আবারও সুজন!
বিশ্বব্যাপী অনলাইন জুয়া খেলার প্রতিষ্ঠান বেটউইনারের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বেটউইনার সঙ্গে সাকিবের চুক্তি সংক্রান্ত ঘটনার জের শেষ হতে না হতেই আবারও জুয়া খেলার ঘটনা বাংলাদেশের ক্রিকেটাঙ্গনে। এবার চুক্তি সংক্রান্ত কোনো ঘটনা নয়, সরাসরি ক্যাসিনোতে জুয়া খেলার ঘটনা। নেপালের কাঠমান্ডুর ‘বেলিস’ ক্যাসিনোতে জুয়া খেলতে গিয়েছেন বিসিবির পরিচালক ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজন। এমন একটি ভিডিও এসেছে ঢাকাপ্রকাশ-এর হাতে।
ক্রীড়াঙ্গনে ক্যাসিনো যেন পিছুই ছাড়ছে না। মতিঝিল ক্লাব পাড়ায় ক্যাসিনোকাণ্ড দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠেছিল। ক্রিকেটে ছিল ম্যাচ ফিক্সিং। মোহাম্মদ আশরাফুল ৫ বছরের জন্য বহিষ্কার হয়েছিলেন। ম্যাচ ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব গোপন করে আইসিসি কর্তৃক ১ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন সাকিব । এখানেই শেষ নয়। বিপিএলে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের কারণে ঢাকা গ্লাডিয়েটর্সের ফ্রাঞ্চাইজিদেরও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ক্লাব পাড়ায় ক্যাসিনো এখনো বন্ধ। কয়েকটি ক্লাব এখনো সিল গালা করা।
কিন্তু ক্রিকেটে নানা ভাবে ক্যাসিনো আর জুয়াকাণ্ড চলমান। কয়েকদিন আগে বিশ্বব্যাপী অনলাইন জুয়া খেলার প্রতিষ্ঠান বেটউইনারের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান বেটউইনার নিউজের সঙ্গে চুক্তি করে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছিলেন বিশ্বের নাম্বর ওয়ান অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তুমুল সমালোচনা আর বিসিবির শক্ত অবস্থানের কারণে সাকিব বেটউইনারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিলেন। যদিও এই সমালোচনার কারণে দেশব্যাপী বেটউইনার ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছিল! তারা উদ্দেশে হাসিল করে নিয়েছিল।
এদিকে বিসিবির কতিপয় পরিচালক বিভিন্ন সময় দেশের বাইরে ক্যাসিনোতে গিয়ে জুয়া খেলার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এখানে সবচেয়ে বেশি নাম এসেছে বিসিবির পরিচালক ও জাতীয় দলের অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ সুজনের। প্রথমে আশরাফুলের ঘটনায় তার নাম এসেছিল। কিন্তু এর জন্য আশরাফুল সাজা পেলেও সুজনের কোনো সাজা হয়নি। এরপর ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপ ক্রিকেট চলাকালীন তিনি একটি ক্যাসিনোতে গিয়েছিলেন। ক্যাসিনোতে তার একটি ছবি ক্যামেরাবন্দি হয়েছিল সে সময়। আত্মপক্ষ সমর্থন করে তিনি বলেছিলেন ক্যাসিনোতে গিয়েছিলেন খাবারের খোঁজে। এই ঘটনার ৪ বছর পর ২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কা সফরের সময় তার আরও একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল কলম্বোর একটি ক্যাসিনোতে খালেদ মাহমুদ।
এবারও আত্মপক্ষ সমর্থন করে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার এক বন্ধুকে নিয়ে সেখানে গিয়েছিলাম। ক্ষুধা পেয়েছিল বলে সেখানে যাই খাওয়ার জন্য। ক্যাসিনোতে শুধু কার্ড খেলা হয় না, খাবারও পাওয়া যায়। সে কারণেই ওখানে যাই। সুজন যখন ক্যাসিনোতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ তখন তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হেরে সিরিজ হেরে গেছে। পরে শেষ ম্যাচ হেরে হয়েছিল হোয়াইটওয়াশও।’
শুধু ক্যাসিনোকাণ্ডে নয়, বিসিবির এই পরিচালক নানা সময় অনেক বিতর্কের জন্ম দিয়েও সমালোচিত হয়েছেন। কিন্তু তিনি নিজেকে সংশোধন করেননি। উপরন্ত নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন আবারও ক্যাসিনোতে গিয়ে। এবার তিনি গিয়েছিলেন নেপালের কাঠমান্ডুর ‘বেলিস’ ক্যাসিনোতে। ভিডিওতে দেখা যায় মাথায় উল্টো করে পড়া কালো ক্যাপ ও কালো পোলো গেঞ্জি পরা সুজন।
খালেদ মাহমুদ সুজন নেপাল গিয়েছিলেন নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ চলাকালীন। নেপালের এই ক্যাসিনোতে প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশি নিয়িমিত খেলতে যান। খালেদ মাহমুদ ক্যাসিনোতে যাওয়ার কারণে প্রচুর সংখ্যক বাঙালি তাকে দেখেছেন। এ সময় তার সঙ্গে দুই জন নারীও ছিলেন বলে প্রত্যাক্ষদর্শী অনেকেই জানিয়েছেন। প্রত্যাক্ষদর্শীর বরাতে জানা যায়, তিনি ক্যাসিনোতে গিয়েছিলেন ১৬, ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর এই ৩ দিন । ১৯ তারিখ তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন।
প্রত্যাক্ষদর্শীরা আরও জানান, এবার ক্যাসিনোতে জুয়া খেলে খালেদ মাহমুদ সুজন দুই দিনে ৩০ লাখ টাকার মতো জিতেছেন। বর্তমানে খালেদ মাহমুদ সুজন বাংলাদেশ দলের সঙ্গে নিউজিল্যান্ড রয়েছেন। বর্তমানে খালেদ মাহমুদ সুজন জাতীয় দলের সঙ্গে নিউজিল্যান্ডে আছেন। এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য তার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল। প্রথমে ফোন করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি রিসিভ করেননি। পরে ক্যাসিনোকাণ্ডের উল্লেখ করে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হয়েছিল। তিনি বার্তা সিন করলেও সাড়া দেননি। যে কারণে তার প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।
এমপি/এমএমএ/