‘আমরা করব জয়’ গেয়ে ঐতিহাসিক জয় উদযাপন
নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের নিউ জিল্যান্ড বধ। নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে গিয়ে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ জয়ই এতদিন ধরে ছিল স্বপ্নের মতো। সেখানে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন নিউ জিল্যান্ডকে টেস্ট ফরম্যাটেই হারিয়ে দিয়েছে মুমিনুল হকের দল। এক অসাধারণ মুহূর্ত। আর এর উদযাপনও তাই বিশেষ। ড্রেসিংরুমে ‘আমরা করব জয়’ গেয়ে টাইগাররা এ জয় উদযাপন করেছে।
মুশফিকুর রহিমের স্কয়ার কাট থেকে পাওয়া জয়সূচক রানের পর মাঠের মধ্যে তেমন বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি ক্রিকেটারদের মধ্যে। যতটা সম্ভব নিজেদের সংযত রেখেই আনুষ্ঠানিকতা সারেন মুমিনুল-মুশফিক-তাইজুলরা।
তবে ম্যাচ পরবর্তী প্রেজেন্টেশন শেষ করে ড্রেসিংরুমে ফিরে আর ঠেকানো যায়নি ক্রিকেটারদের। নিজেদের চিরায়ত ‘আমরা করবো জয়’ গান গেয়ে ঐতিহাসিক জয়ের উদযাপন করেছেন মুশফিক, মিরাজ, তাসকিনরা।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে আপলোড করা হয়েছে টাইগারদের উদযাপনের ভিডিও। যেখানে গেছে মুশফিকের আনন্দ যেন একটু বেশিই। তিনি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, ‘উপভোগ করতে হবে ভাইয়েরা, উপভোগ কর।’ এরপর শুরু হয় দলের সম্মিলিত কণ্ঠে ‘আমরা করব জয়’ গান।
এর আগে ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে মুমিনুল বলেন, ‘আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না কী অনুভব করছি। এটা এক কথায় অবিশ্বাস্য। সত্যি কথা, কাল রাতে আমি আর ঘুমাতে পারিনি আজ কি হবে সেটা ভেবে। কারণ যখন পাঁচ উইকেট পড়ে গেল, তখন মনে হচ্ছিল ওরা আরও বেশি রানও করতে পারে, কমও করতে পারে। এই চিন্তায়। এই টেস্টটা জেতার খুব গুরুত্ব ছিল।’
খুবই কঠিন সময়ে পাওয়া জয়ে দলের সবার অবদানের কথা উল্লেখ করে মুমিনুল এই জয় ক্রিকেটের উন্নতির একটা ‘সিম্বল’ হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন। তিনি বলে, ‘আমাদের টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতি করার চিহ্ন হতে পারে এটা। পাকিস্তান সিরিজ হারার পর সবার ভেতরে দলীয়ভাবে আরো উন্নতি করার জন্য তাগাদা ছিল। ব্যাটিং, বোলিং সবক্ষেত্রে একজন আরেকজনকে সহায়তা করেছে। যখনই কেউ একটু খারাপ করেছে বা ক্যাচ মিস করেছে, বাকিরা তাকে সমর্থন দিয়েছে ভালো করতে।’
চতুর্থ দিনই বাংলাদেশ জয়ের ঘ্রান পেতে শুরু করেছিল। কিন্তু তারপরও কারো মুখ ফুটে বের হয়ে আসেনি প্রকাশ্যে জয়ের কথা। টেস্ট ক্রিকেট ধৈর্য্যরে খেলা। ২২ গজের পিচে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা যেমন নিজেদের অসম্ভব ধৈর্য্যরে পরিচয় দিয়েছেন, কথা বলার ক্ষেত্রেও ছিল একই রকম ধৈর্য্য। আবেগকে করেছেন নিয়ন্ত্রণ। কারণ নিউ জিল্যান্ডের কঠিন কন্ডিশনে যেখানে বাংলাদেশ হাবুডুবু খেয়েছে গত ২১ বছর, সেখানে জয় হাতের নাগালে–এ রকম শুধু কল্পনাই করা যায়। আবার বাংলাদেশ খেলতে গিয়েছে প্রতিকুল পরিস্থিতিতে। গায়ে চিমটি কেটে যেন উপলদ্ধি করা গেল, না এটি স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। স্বপ্নকে বাস্তবে নামিয়ে আনা যায়। চেষ্টা করলে জেতা যায়। বাংলাদেশ সেই চেষ্টায় ব্রতি হয়ে জয় এনেছে প্রথম সেশনেই। ম্যাচ সেরা এবাদতের বিস্ফোরণ বোলিংয়ে নিউ জিল্যান্ড ১০ ওভার ৪ বল খেলে মাত্র ২২ রান যোগ করে ১৬৯ রানে গুটিয়ে যায়। জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ৪০ রান পেতে লাঞ্চের সময় হয়ে যায়। আম্পায়ার লাঞ্চের সময় বাড়িয়ে দেন। আর তাতেই অধরা হয়ে থাকা জয়ের সন্ধান পেয়ে যায় বাংলাদেশ ১৬ ওভার ৫ বল খেলে। রচিত হয় বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাফল্যে সেরা পালক। নতুন বছরের শুরুতেই পেল বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে পেল আবার প্রথম জয়। দুই টেস্টের সিরিজে বাংলাদেশ এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে। দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে ৮ জানুয়ারি ক্রাইস্টচার্চে।
এসএ/