বাংলাদেশের সামনে আজ কী পরীক্ষা!
বাংলাদেশকে বেশ ভালোই একটা ঝাঁকুনি দিয়েছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। নিজেদের প্রস্তুতির জন্য খেলতে গিয়ে প্রায় হেরেই যাচ্ছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ৮ উইকেটে করা ১৫৮ রানের জবাব দিতে নেমে শেষ ওভারে আরব আমিরাতের প্রয়োজন ছিল ২ উইকেট হাতে নিয়ে ১০ রানের। কিন্তু শরিফুলের করা সেই ওভারে পরপর দুই বলে দুই উইকেট হারালে স্বাগতিকদের আর ইতিহাস গড়া হয়নি। তবে যে লড়াকু মনোভাব দেখিয়েছে, তাতে করে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের জন্য চোখ রাঙানি দিয়ে রাখল। দুবাইতে বাংলাদেশ সময় আজ মঙ্গলবার রাত ৮টায় শুরু হবে দ্বিতীয় ম্যাচ। সিরিজে সমতা আনতে হলে স্বাগতিকদের জয়ের বিকল্প নেই। ৭ রানে প্রথম ম্যাচ জিতে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা সিরিজ জেতার জন্য বাংলাদেশেরও প্রয়োজন জয়।
মরুর বুকে দুই ম্যাচের এই সিরিজ বাংলাদেশের জন্য নিউ জিল্যান্ডে তিন জাতির টি-টোয়েন্টি আসর ও অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য। আর স্বাগতিকদের প্রাপ্তি বাংলাদেশের মতো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে দুইটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাওয়া। নিজেদের অভিজ্ঞতার ঝুলি বাড়িয়ে নেওয়া। এই সিরিজের আগে দুই দেশ একবারই মাত্র মুখোমুখি হয়েছিল। ২০১৬ সালে এশিয়া কাপের আসরে মিরপুরে বাংলাদেশ সেই ম্যাচ জিতেছিল ৫১ রানে।
বাংলাদেশের জয়ের ব্যবধান দেখে মনে হবে ব্যাট হাতে বাংলাদেশ বিশাল রানের পাহাড় গড়েছিল। আসলে তা ছিল না। আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ মাত্র ১৩৩ রান করেছিল ৮ উইকেট হারিয়ে। কিন্তু ছোট এই সংগ্রহও আরব আমিরাতের জন্য পাহাড় সমান হয়ে গিয়েছিল। মাত্র ৮২ রানে তারা অলআউট হয়ে গিয়েছিল।
বাংলাদেশের সেই ব্যাটিং ব্যর্থতা কিন্তু এই সিরিজের প্রথম ম্যাচেও বিদ্যমান ছিল। ৫ ওভারেই হারিয়েছিল দুই ওপেনারসহ ৩ উইকেট। ১১ ওভারে ৭৭ রানে পড়েছিল ৫ উইকেট। তখন মনে হয়েছিল বাংলাদেশ খুব বেশি দূরে যেতে পারবে না। কিন্তু আফিফ হোসেনর ক্যারিয়ার সেরা অপরাজিত ৭৭ রানের ইনিংসের সঙ্গে অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহনের সমপোযোগি অপরাজিত ৩৫ রান বাংলাদেশের সংগ্রহকে দেড়শ ছাড়া করেছিল। আফিফ অবশ্য দুইবার জীবন পেয়েছিলেন। এই জীবন না পেলে বাংলাদেশের সংগ্রহে অনেক পরিবর্তন আসত। ম্যাচের দৃশ্যপটেও পরিবর্তন আসতে পারত। আফিফ-সোহান ছাড়া দলের আর কারও উল্লেখযোগ্য সংগ্রহ ছিল না। ওপেনাররা আবারও হতাশ করেছিলেন। আজকের ম্যাচই বাংলাদেশের পরীক্ষা-নিরীক্ষার শেষ সুযোগ।
প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দিলেও এই ম্যাচ থেকে বাংলাদেশের কিছুটা অর্জন আছে। ব্যাটিং ব্যর্থতা থেকে ঘুরে দাঁড়ানো। যা সচরাচর বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের পক্ষে কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয় না। শুধু ব্যাটসম্যানরাই নন, বোলারদেরও অর্জন আছে। বাংলাদেশের টার্গেট অতিক্রম করতে গিয়ে শুরুতে বেশ চড়াও হয়ে খেলছিলেন স্বাগতিক দলের ব্যাটসম্যানরা। এক পর্যায়ে মনে হয়েছিল ম্যাচ বুঝি বাংলাদেশের হাতছাড়া হতে চলেছে! আরব আমিরাতের রান ছিল ৭.৫ ওভারে ১ উইকেটে ৬৬। সেখান থেকে বোলাররা দারুনভাবে ফিরে আসেন। তাদের ফিরে আসাতে আরব আমিরাতের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ১০২ রান। ৩৬ রানে হারায় ৬ উইকটে। ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় স্বাগতিকরা। আবার যখন আরিয়ান ও জুনায়েদের ব্যাটে ভর করে জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। ২ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১০ রানের। তখন শরিফুল পরপর ২ বলে ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশকে জিতিয়ে দেন। এক ম্যাচে এভাবে দুই দুইবার বোলারদের ফিরে আসাটা ছিল আত্মতৃপ্তি। এই ফিরে কাজটা শুরু হয়েছিল মিরাজের হাত ধরে। ৩ ওভারে ১৭ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট।
মিরাজ মনে করেন, আরব আমিরাতের বিপক্ষে কঠিন পরিস্থিতি পড়ে ম্যাচ জেতার মাঝে তাদের আত্মবিশ্বাস জোগাবে।
তিনি বলেন, ‘গত কয়েকটা সিরিজে, এশিয়া কাপে আমরা কাছে গিয়ে হেরেছি। জিততে জিততে হেরে গেছি। কালকের পরিস্থিতি ও রকমই ছিল। কিন্তু আমাদের বোলাররা খুব ভালো কামব্যাক করেছে। এটা সবার ভেতরে বিশ্বকাপের জন্য আলাদা আত্মবিশ্বাস জোগাবে ।’
পরীক্ষা-নিরীক্ষার সিরিজে বাংলাদেশ দল আজকের ম্যাচেও একাধিক পরিবর্তনের পাশাপাশি ব্যাটিং অর্ডারেও পরিবর্তন এনে নিজেদের পরখ করে নিতে পারে।
এমপি/এসআইএইচ