নিউ জিল্যান্ডে প্রথম জয়ের পথে বাংলাদেশ
এবাদত। সেরা একাদশে তাকে রাখা নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। হওয়াটাই স্বাভাবিক। কারণ তাকে জায়গা করে দিতে বাদ দিতে হয়েছিল আবু জাহেদ রাহীকে। যে রাহী আবার প্রস্তুতি ম্যাচে সবচেয়ে সফল বোলার ছিলেন। এদিকে অভিষেকের পর থেকেই খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগোচ্ছিলেন এবাদত। ১০ ম্যাচে ১১ উইকেট। সেরা বোলিং ছিল ৯১ রানে ৩ উইকেট।
মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে যেখানে বাংলাদেশের অন্য বোলাররা ত্রাস ছড়াচ্ছিলেন, সেখানে এবাদত ছিলেন নির্বিষ। সেই এবাদতই দ্বিতীয় ইনিংসে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেন। মাত্র ৭ বলের ব্যবধানে কোনো রান না দিয়ে তিন (উইল ইয়াং, হ্যানরি নোলাস, টম ব্লুন্ডেল) উইকেট তুলে নেন। ম্যাচের ড্রাইভিং আসনে দলকে বসিয়ে দেন তিনি। আর এতেই বেকায়দায় পড়ে যায় স্বাগতিকরা। ২ উইকেটে ১৩৬ রান থেকে দলের রান দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ১৩৬। চাপে থেকেই নিউ জিল্যান্ড দিন শেষ করে ৫ উইকেটে ১৪৭ রানে। হাতে ৫ উইকেট নিয়ে এগিয়ে আছে মাত্র ১৭ রানে।
নিউ জিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশ দেখছে প্রথমবারের মতো জয়ের স্বপ্ন নিয়ে। আগামীকাল স্বাগতিক দলের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান রস টেলর ৩৭ ও রাচিন রবিন্দ্র ৬ রান নিয়ে নামবেন দলকে বাঁচাতে। বাংলাদেশের টার্গেট থাকবে বেশি দূর এগোতে না দেওয়া।
চতুর্থ দিন শেষে টেস্টের যে অবস্থা তাতে বাংলাদেশের আকাশে জয়ের চাঁদ উঠতে শুরু করেছে। তৃতীয় দিন শেষে জয়ের আশা না করে ড্র করতে পারলেই সন্তুষ্ট হবেন বলে জানিয়েছিলেন দলের পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন। এখন সেখানে নিউ জিল্যান্ড ড্র করার কথা ভাবতে পারে। ড্র করতে পারলে তারাই সন্তুষ্ট থাকবে।
১৩০ রানের লিড নেওয়ার পর নিউ জিল্যান্ডকে বেশ চেপেই ধরেছিল বাংলাদেশ। ৬৩ রানে তুলে নেয় দুই উইকেট। প্রথম ইনিংসে চমৎকার বোলিংয়ের পরও তাসকিন আহমেদ উইকেট শূন্য ছিলেন। শুধু চেয়ে দেখেছেন সহযোদ্ধাদের উইকেট নিয়ে উল্লাস করা। এবার নিউ জিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই তিনি আঘাত করেন। দলপতি টম লাথামকে ব্যক্তিগত ১৪ ও দলীয় ২৯ রানে বোল্ড করেন তিনি। এরপর সবাই তাকে নিয়ে উল্লাসে মেতে উঠেন। প্রথম ইনিংসে একটি উইকেট পেলেও খুব ভালো বল করতে পারেননি এ পেসার।
পঞ্চম বোলার হিসেবে বল হাতে তুলে নিয়ে এবাদত ফিরিয়ে দেন প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান ডেভন কনওয়েকে (১৩)। গালিতে তার ক্যাচ ধরেন সাদমান ইসলাম। ৬৩ রানে ২ উইকেট হারানোর পর ইয়াং ৩২ ও ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংস খেলতে নামা রস টেলর চাপ সামাল দিয়ে দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। অনেকটা সফলও ছিলেন তারা। এ জুটি যোগ করে ৭৩ রান। দলের রান তখন ১৩৬।
এবাদতের শট অব লেন্থের বলে ভুল করেন ইয়াং উইল। বল গিয়ে তার স্ট্যাম্পে আঘাত হানে। অবসান ঘটে ১৭২ বলে ৬৯ রানের ইনিংসের। নতুন ব্যাটসম্যান নিকোলাস হ্যানরি প্রথম বলেই জোরালো এলবিডব্লিউর আবেদনের শিকার হয়েছিলেন। আম্পায়ার সাড়া দেননি। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। পরের বলেই তার স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলেন এবাদতই। এ সময় এবাদত ১৪০ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করেছিলেন। তার বল খেলতে সমস্যায় পড়েছিলেন কিউই ব্যাটসম্যানরা। এবাদতের পরের ওভারেই এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে ফিরে যান টম ব্লুন্ডেল কোনো রান না করেই।
এবাদতের এ রকম বোলিংয়ের সামনে মাটি কামড়ে পড়ে আছেন ক্যাারিয়ারের শেষ ইনিংস খেলতে নামা রস টেলর। প্রথম ইনিংসে ৩১ রান করেছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে তিনি ৩৭ রানে অপরাজিত। তার সঙ্গে ৬ রানে অপরাজিত আছেন রাচিন রবিন্দ্র।
এর আগে বাংলাদেশ দল চতুর্থ দিন খুব বেশি সময় টিকতে পারেনি। ২০ ওভার ২ বলে ৫৭ রান যোগ করেই শেষ ৪ উইকেট হারিয়ে অলআউট হয় ৪৫৮ রানে। লিড পায় ১৩০ রানের। শেষ ৪ উইকেট হারায় ১৩ রানে। আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান মিরাজ ও ইয়াসির আলী সপ্তম উইকেটের জুটিতে ৭৫ রান যোগ করেন। মিরাজ ৪৭ রানে সাউদির বলে উইকেটের পেছনে টম ব্লুন্ডেলের হাতে ধরা পড়ে বিদায় নেওয়ার পর আর টিকতে পারেননি বাকি ব্যাটসম্যানরা। ব্যক্তিগত ৫ রানের পর দলীয় ২৬ রানে বিদায় নেন ইয়াসির আলীও। জেমিসনের বলে তিনিও উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন। তাসকিন (৫) ও শরিফুল (৭) যেতে পারেননি দুই অংকের ঘরে। বোল্ট ৮৫ রানে নেন ৪ উইকেট। ওয়েগনার এ দিন আর কোনো উইকেট পাননি। ১০১ রানে নেন ৩ উইকেট। সাউদি ২ উইকেট নিতে খরচ করেন ১১৪ রান। জেমিসনের ১ উইকেটের পেছনে খরচ হয়েছে ৭৮ রান।
এমপি/এসএন