বিসিএল ফাইনাল
জমে উঠেছে দুই অধিনায়কের লড়াই
মিঠুন-জাকিরের সেঞ্চুরি, মুরাদের ৫ উইকেট
বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে (বিসিএল) ফাইনাল দারুণভাবে জমে উঠেছে। চলছে লড়াই দুই অধিনায়কের। সেঞ্চুরির জবাবে হচ্ছে সেঞ্চুরি। ফাইনালে প্রদর্শীত হচ্ছে বিসিবি দক্ষিণাঞ্চলের অধিনায়ক ফরহাদ রেজা ও ওয়ালটন মধ্যাঞ্চলের অধিনায়ক শুভাগত হোমের অলরাউন্ড নৈপুণ্য। দলের রানকে হৃষ্ট পোষ্ট করতে ফরহাদ রেজা ব্যাট হাতে খেলেন মারমুখি ৭১ রানের ইনিংস। পরে মাত্র ১৬ রানে মধ্যাঞ্চলের ৪ উইকটে তুলে নিয়ে কোনঠাসা করে ফেলেন।
কিন্তু তখনই এগিয়ে আসেন মধ্যাঞ্চলের অধিনায়ক শুভাগত হোম। ওপেনার মোহাম্মদ মিঠুনের সাথে জুটি বেঁধে দলের করুণ অবস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন। ৬৭ রানে অপরাজিত তিনি। এর আগে বল হাতে সোমবার (৩ জানুয়ারি) দক্ষিণাঞ্চলের পতন হওয়া ৫ উইকেটের ৩টি তুলে নেন তিনি। এদিকে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন মধ্যাঞ্চলের মোহাম্মদ মিঠুন। ১০২ রানে তিনি অপরাজিত। এর আগে সেঞ্চুরি করেছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের জাকির হাসান। তিনি অপরাজিত থাকেন ১০৭ রানে। বিসিবি দক্ষিণাঞ্চলকে ৩৮৭ রানে থামিয়ে দিয়ে নিজের ব্যাট করতে নেমে বড় বিপর্যয়েই পড়েছিল। দিন শেষে তাদেরস ৪ উইকেটে ১৮৪। এখনো তারা পিছিয়ে আছে ২০৪ রানে।
মিরপুরের হোম অব ক্রিকেটে প্রথম দিন উইকেট পড়েছিল ৫টি। দ্বিতীয় দিন দুই দলের মিলে পড়েছে ৯টি। দক্ষিণাঞ্চলের ৫টি, মধ্যাঞ্চলের ৪টি। রান উঠেছে ২৯৬।
দক্ষিণাঞ্চল আগের দিনের চমৎকার শুরু ধরে রাখতে পারেনি হাসান মুরাদের ঘূর্ণিবলে। আজ তিনি আর ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারেননি। যদিও রিশাদ হাসানকে আউট করে ৫ উইকেট নেয়ার র্কীতি গড়েন। আজকে মধ্যাঞ্চলের সফল বোলার ছিলেন দলপতি শুভাগত হোম। তিনি একাই তুলে নেন ৩ উইকেট। কিন্তু শুভাগত হোম ত্রাস সৃষ্টি করতে পারেননি প্রতিপক্ষের ইনিংসে। যে কারণে আগের দির্নে দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান জাকির হাসান ও ফরহাদ রেজা দলের রানকে চারশ ছুঁই ছুঁই করে ফেলেন। দুই জনে ষষ্ট উইকেট জুটিতে যোগ করেন ১১৯ রান। যেখানে দলপতি ফরহাদ রেজারই একার অবদান ছিল ৭১ রানের। ৬২ বলের মারমুখি ইনিংসে তিনি ৩ ছক্কার সাথে ৯টি বাউন্ডারিও হাঁকান। তাকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে হাসান মুরাদ ইনিংসে পঞ্চম উইকেট পূর্ণ করেন। দিনের প্রথম উইকেট মুরাদ পেলেও পরে আর তিনি কোনো উইকেট পাননি। ফরহাদ রেজা আউট হওয়ার পর পরবর্তিতে রিশাদ হাসান (১৬) নাসুম আহমেদের (১৭) ছোট ছোট অবদানে দলের রান বাড়ার সাথে সাথে জাকির হাসান তার সেঞ্চুরিও তুলে নেন। হাসান মুরাদের বলে চার মেরে তিনি সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ১৫১ বলে। একে একে অপর প্রান্তের বাকি সব ব্যাটসম্যান আউট হলে তিনি শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ১০৭ রানে। তার ১৬১ বলের ইনিংসে ছিল ১৫টি চারের মার। লিগ পর্বের শেষ ম্যাচেও মধ্যাঞ্চলের বিপক্ষে জাকির ১০৯ রান করেছিলেন। এর আগে তিনি পূর্বাঞ্চলের বিপক্ষে ১২২ রান করেছিলেন।
ব্যাট করতে নেমে মধ্যাঞ্চল ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে। এক প্রান্ত থেকে ফরহাদ রেজা একের পর এক উইকেট নিতে থাকেন। এর মাঝে আবার এক ওভারে জোড়া আঘাতও ছিল। ক্রিজে ব্যাটাররা আসছেন, আর ফরহাদ রেজা উইকেট পকেটস্থ করছেন। এ সময় আব্দুল মজিদ (০), এই আসরের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার (৩), আরেক সফল ব্যাটসম্যান সালমান ইসলাম (১), তাইবুর রহমান (৪) ফিরে যান। ইনিংসের গোড়া পত্তন করতে আসা মোহাম্মদ মিঠুন চেয়ে চেয়ে দেখছিলেন। কিন্তু করার কিছুই ছিল না। একমাত্র করণীয় ছিল নিজে টিকে থাকে পতন রোধ করা। সেই কাজটিই সুচারুরূপে করে যান দলপতি শুভাগত হোমকে পেয়ে। দুই জনে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে যান। ফরহাদ রেজার তোপ সামলে অন্যদেরও সামাল দিতে থাকেন। রোধ করেন উইকেট পতনের। এমনই রোধ করেন যে পরে আর কোনো উইকেটই পতন হতে দেননি। মিঠুনতো সেঞ্চুরি তুলে নেন ১৪৭ বলে। মেহেদী হাসানের বলে বাউন্ডারি মেরে তিনি ব্যাট উঁচিয়ে ধরেন। চলতি আসরে এটি তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। প্রথম ম্যাচে বিসিবি উত্তরাঞ্চলের বিপক্ষে ১৭৬ রান করেছিলেন। তার সাথে শুভাগত হোম অপরাজিত আছেন ৬৭ রানে। দুই জনে মিলে পঞ্চম উইকেট জুটিতে যোগ করেন ১৬৮ রান। আগামীকাল এই দুই জনকে আরো বহদূর যেতে হবে ম্যাচে ফিরে আসতে হলে। ফরহাদ রেজা ৩১ রানে নেন ৪ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বিসিবি দক্ষিণাঞ্চল: ৩৮৭ (আগের দিনের ২৬৮/৫), ওভার ১১১.৩ ( জাকির হাসান ১০৭*, এনামুল হক ৭৬, ফরহাদ রেজা ৭১, পিনাক ঘোষ ৬৫, জাকির হাসান ৪৪, অমিত হাসান ১০, হাসান মুরাদ ৫/ ১০১, শুভাগত হোম ৩/৫১, আবু হায়দার ২/৭৬)।
ওয়ালটন মধ্যাঞ্চল: ১৮৪/৪, ওভার ৫৩ (মোহাম্মদ মিঠুন ১০২, শুভাগত হোম ৬৭, ফরহাদ রেজা ৪/৩১)।
এমপি/এএস