বোলার নয়, বল দেখে খেলেছেন জয়
নিউ জিল্যান্ডের কন্ডিশন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য এক আতঙ্কের নাম। এই আতঙ্ক ছড়ান তাদের পেসাররা। প্রতিবারের ন্যায় এবারও ছিল একই ভূত! বিপরীতে বাংলাদেশের করুণ অবস্থা। আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানান দিয়েছিল এবার বাংলাদেশের উপর দিয়ে রীতিমতো পেস ঝড় বয়ে যাবে।
এদিকে, আবার নিউ জিল্যান্ডের চার পেসার-সাউদি, বোল্ট, ওয়েগনার ও জেমিসনকে বলা হচ্ছে তাদের ইতিহাসে সেরা পেস অ্যাটাক। এ রকম তথ্য বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মনোবলে আরও বেশি করে চিড় ধরিয়ে দেওয়ারই কথা। কিন্তু হয়েছে বিপরীত। দুর্দান্ত প্রতাপে খেলছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। দুই দিনে (দ্বিতীয় ও তৃতীয় তিন) পাঁচ সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ দল উইকেট হারিয়েছে মাত্র ৬টি। রান জমা করেছে ৪০১। হাফ সেঞ্চুরি আছে চার চারটি। সবগুলোই মোটামুটি বড়সড়। সেঞ্চুরির কাছাকাছি আছে আবার দুইটি। নাজমুল হোসেন শান্ত ৬৪, মাহমুদুল হাসান জয় ৭৮, লিটন কুমার দাস ৮৬, মুমিনুল হক ৮৮। ইনিংসের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাট থেকে আসলেও নজর কেড়েছে ক্যারিয়ারের মাত্রাই দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা মাহমুদুল হাসান জয়ের হাফ সেঞ্চুরি । বলের পর বল হজম করে তবেই তিনি এক একটি রান সংগ্রহ করেছেন। তার ব্যাটিং শৈলী দেখে মুগ্ধতা ছড়িয়েছে অন্যদেরও।
একাদশে নবীনতম ক্রিকেটারের এমন ধৈর্য্যশীল ব্যাটিং অন্যদেরও আত্মবিশ্বাসী করে তুলে। শুধু প্রয়োজন টিকে থাকা। বলের গুণাগুণ বিচার চার করে খেলা। কিন্তু প্রশ্ন হলো মাহমুদুল কিভাবে হজম করলেন এই চার পেসারকে। যেখানে তার আর্ন্তজাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা মাত্র এক টেস্টের। ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে যেখানে অভিষেক হয়েছিল বিবর্ণ। প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে আউট। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ রান। ছোট্ট এই অভিজ্ঞতা নিয়ে নিউ জিল্যান্ডের দুর্ধর্ষ পেস আক্রমণ সামলানোর গোপন তথ্য ফাঁস করেছেন মাহমুদুল। পেসারদের নাম দেখে নয়, বল দেখে তিনি খেলেছেন। যে কারণে আগেই কোনো ভয়ভীতি কাজ করেনি। বলের গুণাগুণ বিচার করে খেলে সফল হয়েছেন।
সোমবার নিউ জিল্যান্ড থেকে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘নিউ জিল্যান্ডের বোলিং বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলিং। তারা বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়ন। আমি চেষ্টা করেছি নিজের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে। আমি বোলারদের নাম দেখে না, বল দেখে খেলার চেষ্টা করেছি।’
নিউ জিল্যান্ড প্রথম ইনিংসে ৩২৮ রান করে। খুব বড় ইনিংস না হলেও প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ বিবেচনায় বড়ই বলা যায়। কারণ, নিউ জিল্যান্ডে বাংলাদেশের অতীত ইতিহাসে রুগ্ণ। অল্প রানে গুটিয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সেখানে প্রথমেই প্রতিরোধের দেয়াল গড়ে তুলেন সাদমান ইসলাম এই মাহমুদুল হাসান জয়কে নিয়েই। কী ছিল সেখানে মসলা। সেটিও জানিয়েছেন জয়। বলের পর বল খেলে সেই বলকে পুরনো করা, যাতে পরবর্তী ব্যাটসম্যানদের জন্য রান করাটা সহজ হয়। এই পরিকল্পনায় তারা অনেকটা সফল হন। সাম্প্রতিক ওপেনিং জুটির ভয়াবহ ব্যর্থতা রোধ করে তারা ৪৩ রান যোগ করেন। যেখানে বলের ব্যবহার ছিল ১৮.১ ওভার।
জয় বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের শুরুতে আমার ও সাদমান ভাইয়ের পরিকল্পনা ছিল যে আমরা নতুন বলকে কীভাবে পুরনো করা যায় এবং বল বাই বল খেলব। আমরা একবারে লম্বা চিন্তা করলে সাফল্য নাও আসতে পারে। কিন্তু বল বাই বল খেললে সাফল্যের সম্ভাবনা বেশি থাকবে। এই পরিকল্পনায় আমাদের জুটিটা ভালোই হয়।’
ব্যক্তিগতভাবে নিজের ব্যাটিং পরিকল্পনা নিয়ে মাহমুদুল হাসান জয় বলেন, ‘আমার বিশেষ কোনো পরিকল্পনা ছিল না। সাধারণভাবেই খেলার চেষ্টা করেছি। একটা প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিলাম। আমি মোটামুটি ভালো করেছিলাম। ওখান থেকেই মূলত আত্মবিশ্বাস পেয়েছি। পরিকল্পনা ছিল বেশি রানের দিকে যাব না। বেশি বল খেলতে পারলে রান এমনিই আসবে। সাদমান ভাই, শান্ত ভাই, মুমিনুল ভাই সব সময় বলেছেন ব্যাটিংয়ে থাকলেই রান আসবে।’
সাদমান আউট হওয়ার পর ক্রিজে আসা নাজমুল ও মুমিনুলের অবদানের কথাও জানান মাহমুদুল। তিনি বলেন, ‘যখন শান্ত ভাই আসেন, উনার সঙ্গে আমার অনেক ভালো একটা জুটি হয়। আমি যখন বেশি শট খেলার জন্য আক্রমণাত্মক হচ্ছিলাম, তখন উনি আমাকে নিয়ন্ত্রণে থাকতে বলেছিলেন। মুমিনুল ভাইও এই একই কথা বলেন। উনি বলেন, ডট বল হলে সমস্যা নেই । এভাবেই খেলে যেতে থাকো।’
টেস্ট ম্যাচের আগে বাংলাদেশ নিউ জিল্যান্ড একাদশের বিপক্ষে দুই দিনের একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিল। সেখানে তিনি ১৩১ বল খেলে ৬৬ রান করেছিলেন। এই ইনিংসও তাকে আত্মবিশ্বসী করে তুলেছিল বলে জানান মাহমুদুল হাসান জয়।
এমপি/এমএমএ/