মাহমুদউল্লাহও কী কাগজে লিখে দিবেন ‘অবসর’?
বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গণে একটি কথা প্রায়াই শুনা যায় ‘অপসংস্কৃতি’। এই অপসংস্কৃতি নিয়ে নতুন করে ব্যাখ্যা দেওয়ার কিছু নেই। ক্রিকেটেও ঢুকে পড়েছে এই ‘অপসংস্কৃতি’। সারা জীবন ২২ গজে খেলে, জাতীয় দলে ভূমিকা রেখে বিদায় নিতে হচ্ছে ছাপার অক্ষরে। আর এই ছাপার অক্ষর প্রকাশের জায়গা হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ফেসবুক’। কখনো কখনো বিসিবির পাঠানো মেইলেও হয়ে থাকে একজন ক্রিকেটারের বিদায়বার্তা। খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে ফেসবুকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে থেকে নিজেদের বিদায়ের বার্তা জানিয়েছেন তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিম। এবার মাহমুদউল্লাহর সামনে কী অপেক্ষা করছে?.
অক্টোবর-নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্ট বিশ্বকাপকে সামনে রেখে বাংলাদেশ দল ঘোষণা করতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে দলে রাখা হবে, কি না এ নিয়ে ব্যাপক আলাপ-আলোচনার পর সর্ব সম্মতিক্রমে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এর আগে জিম্বাবুয়ে সফরেও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বাদ দেয়া হয়েছিল। পরে আবার সেই সিরিজেরই শেষ ম্যাচে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। পরে রাখা হয়েছিল এশিয়া কাপেও। কিন্তু এবার তাকে বাদ দেয়ার ক্ষেত্রে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু যে কথা বলেছেন, তাতে করে মাহমুদউল্লাহর জন্য টি-টোয়েন্টির দরজা চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়ারই কথা। প্রধান নির্বাচক বলেছেন, ‘এবার আমাদের টি-টোয়েন্টির যে টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট, ওর একটা পরিকল্পনা আমাদেরকে দিয়েছে এবং আগামী এক বছরের জন্য যে পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগুচ্ছি, সেই পরিকল্পনায় আমরা গিয়েছি। টিম ম্যানেজেমেন্টর সবার সম্মতিক্রমে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে ‘অফ’ করা হয়েছে।’ অংক করে যোগ ফল বের করলেও ফলাফল আসবে মাহমুদউল্লাহর আর টি-টোয়েন্টি দলে ফেরা হচ্ছে না! শেষ ম্যাচ তিনি খেলে ফেলেছেন এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। তা’হলে তিনি বিদায় নেবেন কিভাবে। তামিম-মুশফিকের মতো, না কি টেস্ট ক্রিকেটে যেমন তার অবসরের কথা বিসিবি জানিয়েছিল ই-মেইল করে!
মাহমুদউল্লাহ শেষ টেস্ট খেলেছিলেন ২০২১ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। প্রথম ইনিংসে ১৫০ রান করে অপরাজিত থাকার পরই তিনি অবসরের কথা জানিয়ে দেন টিমম্যাটদের। খেলোয়াড়দের পক্ষ তাকে দেয়া গার্ড অব অনার। কিন্তু অদৃশ্য চাপে পরে মাহমুদউল্লাহ তার অবসর নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও কিছু আর বলেননি। সেই ঘোষণা আসে ৪ মাস পর পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের আগে বিসিবির পক্ষ থেকে ই-মেইল করে জানানো হলে। যে অবসর নিতে পারতেন রাজকীয়ভাবে অপরাজিত সেঞ্চুরি করে সম্মানের সঙ্গে, সেটিই হয়ে উঠে পরে কাগুজে লেখা। টি-টোয়েন্টিতেও মাহমুদউল্লাহর একই পথে হাঁটা ছাড়া আপাতত আর কোনো উপায় সামনে খোলা নেই?
মাহমুদউল্লাহ খুব দ্রুতই টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ‘ইতি দেখে ফেললেন। জিম্বাবুয়ে সফরে নেৃতত্ব হারানোর পাশাপাশি দলে জায়গাও হারান। জিম্বাবুয়ে সফরেই দলে ফিরেছিলেন দলের খেলোয়াড়দের ইনজুরির কারণে। পরে আবার ডাকা হয় এশিয়া কাপে। এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলে থেকেই ছাটাই! সময়ের হিসেবে দেড় মাসেরও কম।
অবশ্য তারে বাজে ফর্ম শুরু হয়ের্ছিল গত টিচ-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে। এ সময় তিনি ১৯টি ম্যাচ খেলে একটিমাত্র হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ছিল সেই আসরেই উইন্ডিজের বিপক্ষেই অপরজিত ৩১ রান। এ ছাড়াও ২০ থেকে ৩০ রানের ঘরে ৫টি ইনিংস থাকলেও সেগুলোর স্ট্রাইকরেট ছিল টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সঙ্গে খুব বেশি বেমানান। কখনো একশর সামান্যর উপরে, কখনো একশর নিচে। এ সময় তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ মাত্র তিনটি ম্যাচ জিতেছিল।
বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ১২১টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের রান ২১২২। ৬টি হাফ সেঞ্চুরিরর সর্বোচ্চটি ছিল অপরাজিত ৬৪। গড় ও স্ট্রাইক রেট খুবই কম। গড় ২৩.৫৭, স্ট্রাইক রেট ১১৭.৩০।
এমপি/এএস