তিন শতকের আক্ষেপের পরও দিনটি বাংলাদেশের
আগের দিন আশা জাগিয়েছিলেন মাহমুদুল হাসান জয়। কিন্তু শতক হলো না তার। ৭৮ রানে মাঠ ছাড়লেন। নড়বড়ে শুরু করা মুমিনুল কয়েক দফা জীবন পেয়ে তিনিও আশা জাগিয়েছিলেন। খুব কাছাকাছি চলেও গিয়েছিলন। কিন্তু ৮৮ রানে তাকেও ফিরে আসতে হয়। মুমিনুলের সঙ্গে সমান তালে খেলে লিটন দাসও আশার তরী ভাসিয়েছিলেন। সম্ভাবনার দরজা ক্রমেই মেলে ধরছিলেন। সবাই ভেবেছিলেন মাহমুদুল-মুমিনুল যে নিরাশ ক্রিকেট প্রেমীদের করেছে তা ঘুচাবে লিটন। শতক করে হতশা দূর করে রাঙিয়ে তুলবেন তাদের। কিন্তু না; এবারও হলো না। সবার হতাশাকে বাড়িয়ে দিয়ে তিনিও ফিরে গেলেন ৮৬ রানে। তিনটি শতকের অপমৃত্যু ঘটলেও দিনটি কিন্তু ঠিকই বাংলাদেশ নিজেদের করে নিয়েছে। তৃতীয় দিন শেষ করেছে ৬ উইকেট হারিয়ে ৪০১ রানে। এগিয়ে আছে ৭৩ রানে। নিউ জিল্যান্ড প্রথম ইনিংসে করেছিল ৩২৮ রান।
এশিয়ার বাইরে অন্য সব দেশে বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাস মলিন। সেখানে নিউ জিল্যান্ডে আরও বেশি করে মলিন। এবার নিউ জিল্যান্ড খেলতে গিয়েছিল খুবই নাজুক পরিস্থিতিতে। অথচ এবারই বাংলাদেশ বিদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো কোনো দলের প্রথম ইনিংসকে ছাড়িয়ে লিড নিতে পেরেছে।
মাউন্ট মঙ্গানুইয়ের বে ওভালে প্রথম টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ বেশ হৃষ্টপুষ্ট অবস্থানে থাকলেও দিনের শুরুটা কিন্তু ছিল খুবই দুর্বিসহ আর কঠিন। কারণ এ সময় নিউ জিল্যান্ডের চার পেসারের আক্রমণ আর কন্ডিশনের সুবিধায় ব্যাটসম্যানদের জন্য ছিল কঠিন যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে টিকতে পারেননি মাহমুদুল হাসান জয় ও মুশফিকুর রহিম (১২)। আর রান উঠে মাত্র ৪৫। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ধাতস্থ হতে থাকেন। রানের চাকাও সচল হতে থাকে। দ্বিতীয় সেশনে কোনো উইকেটও হারাতে হয়নি। রান আসে ২ উইকেটে ৮৭। আর তৃতীয় সেশনে ২ উইকেট হারিয়ে যোগ হয় ৯৪। সারাদিনে ৪ উইকেট হারিয়ে যোগ করেছে ২২৬ রান।
টেস্টের প্রথম তিনদিনই রাজত্ব করছে বাংলাদেশ দল। প্রথম দিন বল হাতে শাসন করে ম্যাচ সমান করে টিকে ছিল। দ্বিতীয় দিন প্রথম সেশনে নিউ জিল্যান্ডকে অলআউট করে শুরু হয় ব্যাট হাতে শাসন। যা অব্যাহত আছে তৃতীয় দিন শেষেও। পাঁচ সেশন ব্যাট করে মাত্র ৬ উইকেট হারিয়ে ৪০১ রান করা বিদেশের মাটিতে প্রতিপক্ষ বিবেচনায় বাংলাদেশের সেরা অর্জন। শেষ দুই দিন বাংলাদেশ নিজেদের এই অবস্থানকে কতটা কাজে লাগিয়ে টেস্টের ফল পাকিয়ে নিজেরা খেতে পারে তা দেখার বিষয়। লিড ৭৩ রানের। শেষ ৪ উইকেটে সেই লিড দ্রুত বাড়িয়ে নিজেদের অবস্থানকে আরও পোক্ত করতে হবে। পরে নিউ জিল্যান্ডকে আবার ব্যাটিংয়ে নামিয়ে দ্রুত অলআউট করার চেষ্টা করতে হবে। এখানে সফল হলেই বাংলাদেশ টেস্টের ফলাফল নিজেদের অনুকূলে নেওয়ার রাস্তা তৈরি করতে পারবে।
মাহমুদুল ও লিটন দাস সেঞ্চুরি পাননি ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটাতে। যে মাহমুদুল ছিলেন আগের দিন ধৈর্য ধারনের জীবন্ত উদাহরণ, তিনিই আজ ছিলেন ছটফটে, অস্থির। যার মাশুল দিতে হয়েছে শতক বঞ্চিত হয়ে। দিনের শুরু থেকেই বারবার শট খেলার জন্য চেষ্টা করেছেন। কখনও জায়গায় দাঁড়িয়ে। কখনও অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল খেলে। আউটও হয়েছেন তার খেসারত দিয়ে। ওয়েগনারের অফ স্ট্যাাম্পের বাইরে জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে গিয়েছিলেন। গালিতে তাকে লুফে নেন নিকোলাস। আগের দিন ২১১ বল খেলে করেছিলেন ৭০ রান। আজ ১৭ বল খেলে যোগ করেন ৮ রান। মাহমুদুল হতাশ হওয়ার পর সেখানে সম্ভাবনার বীজ বপন করে ধীরে ধীরে সেঞ্চুরি নামক ফসল পাকানোর কাছাকাছি চলে যান প্রথমে মুমিনুল, পরে লিটন। মুমিনুল যখন নব্বই ছুঁই ছুঁই করছেন তখনই ৮৮ রানে বোল্ট নামক ট্রেনের নিচে কাটা পড়েন এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে। বাঁচার জন্য অ্যাম্বুলেন্স নামক রিভিউ ডেকেছিলেন। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। ১২ চারে সাজানো তার ২৪৪ বলের ইনিংসের যবনিকা ঘটে সেখানেই। আউট হওয়ার আগে লিটনের সঙ্গে তিনি পঞ্চম উইকেটে যোগ করেন ১৫৮ রান। মুমিনুল যখন আউট হন, তখন লিটনেরও সেঞ্চুরির ফল পাকতে শুরু করেছে। তার রান ছিল ৭৭। তিনিও আশির ঘর র্স্পশ করে নব্বই ছুঁই ছুঁই করছিলেন। শুরু থেকে কখনও ধীরস্থির, কখনও আগ্রাসী-এই দুইয়ের মিশেলে লিটন ভালোই খেলছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই তার ছন্দপতন ঘটে। বোল্টের অফ স্ট্যাম্পের বাইরে বল খোঁচা দিতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ব্লুন্ডেলের হাতে ধরা পড়েন। ১৭৭ বলের ইনিংসে লিটন এই একটিই ভুল করেছিলেন। আর এই এক ভুলেই তার মৃত্যু ঘণ্টা বাজে ৮৬ রানে। যেখানে ছিল ১০টি চারের মার। কী আর করা। ভুলের জন্য অনুশোচনা করতে করতে মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়েন। দুই সেট ব্যাটসম্যান বিদায় নেন ৯ রান ও ২৩ বলের ব্যবধানে। তাদের বিদায়ের পর ইয়াসির আলী (১১*) ও মেহেদী হাসান মিরাজ (২০*) মিলে দিনের বাকি সময় পার করে দেন ৩১ রান যোগ করে। ওয়েগনার ও বোল্ট যথাক্রমে ৬১ ও ৯৮ রান দিয়ে নেন ৩টি করে উইকেট।
এমপি/টিটি