কে হবে এশিয়ার নতুন রাজা পাকিস্তান, না শ্রীলঙ্কা
এশিয়া কাপ ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল অধরা রেখেই আজ আসরে শিরোপা লড়াইয়ে অবতীর্ণ হবে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। দুবাইর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলা শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায়।
একে একে আজ মঞ্চস্থ হবে এশিয়া কাপের ১৫তম আসরের ফাইনাল। কিন্তু আয়োজক তথা ক্রিকেট প্রেমীদের একান্ত চাওয়া থাকার পরও একটি আসরেও মঞ্চস্থ হয়নি পাকিস্তান-ভারত ফাইনাল। কখনো ভারত ফাইনালে উঠলে পাকিস্তানের আর উঠা হয় না। সেখানে জায়গা করে নেয় হয় শ্রীলঙ্কা, কখনো বাংলাদেশ। একই অবস্থা হয় পাকিস্তানও ফাইনালে উঠলে।
পাকিস্তান-ভারত ফাইনালে না উঠলেও ফাইনাল আজ ঠিকই মঞ্চস্থ হবে। শ্রীলঙ্কা কিংবা পাকিস্তান কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলবে না এক বিন্দুও। ক্রিকেট প্রেমীদের আগ্রহেরও কমতি নেই ফাইনাল নিয়ে। দুই দল দুই গ্রপ থেকে উঠে এসেছে ফাইনালে। লক্ষ্যনীয় বিষয় ছিল দুই দলই সুপার ফোরে আসতে নিজ নিজ গ্রুপে রানার্সআপ হয়েছিল। দুই দলই আসর শুরু করেছিল হার দিয়ে। পাকিস্তান ভারতের কাছে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর ৫ উইকেটে হেরেছিল। কিন্তু শ্রীলঙ্কা আফগানিস্তানের কাছে পাত্তাই পায়নি। তাদের করা ১০৫ রান আফগানরা পাড়ি দিয়েছিল ১০.১ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে। এরপর শ্রীলঙ্কা আর কোনো ম্যাচই হারেনি। পাকিস্তান হেরেছে শুধুমাত্র শ্রীলঙ্কার কাছেই ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর নিয়ম রক্ষার ম্যাচে ৫ উইকেটে।
শ্রীলঙ্কা এবার নিয়ে ১২বার ফাইনাল খেলবে। আগের ১১ বারের মাঝে তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ৫ বার। বাকি ৬ বারের ৫ বারই তারা হেরেছে ভারতের কাছে। একবার হেরেছিল পাকিস্তানের কাছে। সে তুলনায় পাকিস্তান ফাইনাল খেলেছে খুবই কম মাত্র ৪ বার। তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দুইবার। একবার শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে, আরেকবার বাংলাদেশকে হারিয়ে। হেরেছিল দুইবারই শ্রীলঙ্কার কাছে। আর দুই দল পরস্পরের বিপক্ষে ফাইনাল খেলেছে ৩ বার। শ্রীলঙ্কা জিতেছে ২ বার, পাকিস্তান ১ বার।
দুই দল আজকের ফাইনালের আগে পরস্পরের বিপক্ষে একটা ড্রেস রিহার্সাল ম্যাচও খেলেছে। এক ম্যাচ হাতে রেখেই দুই দল ফাইনাল নিশ্চিত করাতে সুপার ফোরের শেষ ম্যাচ দুই দলের জন্য হয়ে উঠে নিয়ম রক্ষার। সেই নিয়ম রক্ষার ম্যাচে পাকিস্তান পাত্তাই পায়নি শ্রীলঙ্কার কাছে। হেরেছিল ৫ উইকেটে। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান মাত্র ১২১ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল। শ্রীলঙ্কা সেই রান অতিক্রম করেছিল ১৭ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে।
২২ গজে যারা ভালো করবে তারাই জিতবে-এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এবারের আসরে ভালো খেলার চেয়েও ‘ভাগ্যও’ ফলাফল প্রভাবক হয়ে উঠেছে। এই ভাগ্য হচ্ছে ম্যাচ শুরু আগেই ‘টস’। টস জেতার পর কোনো দলই আগে ব্যাটিং করেনি। টস জিতলেই বোলিং বেছে নেওয়া হয়েছে। পরে ফলাফলও অনুকূলে চলে আসে। এবারের আসরে তিনটি ম্যাচ ব্যতীত বাকি সব ম্যাচেই টস জিতে পরে ব্যাটিং করা দলই জয়ী হয়েছে। শধু হংকং দুইবার ও আফগানিস্তান একবার টস জিতে বোলিং আগে নিয়ে ম্যাচ জিততে পারেনি। তা হোক লো স্কোরিং ম্যাচ কিংবা হাই স্কোরিং ম্যাচ। বাংলাদেশের ১৮৩ রান যেমন শ্রীলঙ্কা পাড়ি দিয়েছে ৪ বল হাতে রেখে, তেমনি আবার আফগানিস্তানের ১২৯ রানও পাড়ি দিতে হিমশিম খাওয়ার পরও পাকিস্তান ম্যাচ জিতেছে ৪ বল বাকি রেখে। এমন কী বাংলাদেশের ১২৭ রানও আফগানিস্তান প্রচণ্ড বাধার মুখে পড়লেও শেষ পর্যন্ত ৯ বল অবশিষ্ট রেখেই অতিক্রম করতে পেরেছিল। বিষয়টি পরিষ্কার টস জিতে পরে ব্যাটিং করার ক্ষেত্রে সাফল্য অনেকটাই নিশ্চিত। আজকের ফাইনালেও দুই দল চাইবে টস জিততে।
আজকের ফাইনালে পাকিস্তানের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠবে তাদের ব্যাটিং লাইন। একমাত্র মোহাম্মদ রিজওয়ান ছাড়া আর কেউই নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। রিজওয়ান ২ হাফ সেঞ্চুরিতে ২২৬ রান করে যেখানে আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যাটসম্যান, সেখানে দলের আর কেউই শতরানও করতে পারেননি। সবচেয়ে বেশি হতাশ করেছেন অধিনায়ক বাবর আজম। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সুপার ফোরের নিয়ম রক্ষার ম্যাচে তার ৩০ রানই এবারের আসরের সর্বোচ্চ। কে জানে বাবর আজমের ইনিংসটা ফাইনালের জন্য জমা হয়ে আছে কি না। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে লঙ্কান বোলারদের জন্য দুর্দশাই ডেকে আনবে। বোলিংয়ে পাকিস্তান আবার মোহাম্মদ রিজওয়ানের মতো এককভাবে কারও উপর নির্ভরশীল নয়। সবাই যার যার অবস্থান থেকে অবদান রেখে যাচ্ছেন। ৮ উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ নেওয়াজ। সাদাব খান নিয়েছেন ৭ উইকেট। ৬ উইকেট নিয়েছেন নাসিম শাহ। ৫ উইকেট নেওয়া আছে হারিস রউফের।
শ্রীলঙ্কার ব্যটিং লাইন আবার সম্মিলিত। শতরানের উপরে আছে ৪ জনের। তারা হলেন পসুন নিশানকা ১৬৫ রান, কুশাল মেন্ডিস ১৫৫ রান, রাজা পাকসে ১২০ রান, দাসুন শানাকা ১০৯ রান। এদের সবারই আছে কোনো না কোনো ম্যাচে জয়ে বিশেষ অবদান। বোলিংয়ের দিক দিয়েও তাদের অবদান সম্মিলিত। ৬টি করে উইকেট নিয়েছেন মাদুশানকা ও হাসারাঙ্গা ডি সিলভা। ৫টি করে নেওয়া আছে চামিকা করুনারত্নে ও থিকসানার।
দুই দল আজকের আগে এখন পর্যন্ত মুখোমুখি হয়েছে ২৬ বার। পাকিস্তান ১৩ বার ও শ্রীলঙ্কা ৯ বার জিতেছে। আজকেও এক দল জিতবে। কিন্তু সেই জয়ের গুরুত্ব থাকবে আলাদা।এই জয় মানেইতো চ্যাম্পিয়ন।
এমপি/এসএন