কোহলির প্রথম সেঞ্চুরিতে মরুর বুকে ভারতের রান বন্যা
সব হারিয়ে ভারত জ্বলে উঠল নিজেদের মতো করে। আর ভারত যখন নিজেদের মতো জ্বলে উঠে, তখন প্রতিপক্ষ কে থাকে তা গৌণ হয়ে যায়। গৌণ হয়ে যায় তাদের টস হারাটাও। এবারের এশিয়া কাপে টস জয় মানেই বোলিং বেছে নেওয়া। পরে ফলাফলও আসে নিজেদের পক্ষে। আজকের ম্যাচেও আফগানিস্তান টস জিতে যথারীতি সেই কাজটিই করে বোলিং নিয়ে।
সব হারিয়ে হতাশায় পড়া ভারতীয় দলের ব্যাটসম্যানদের কাছে এটি হয়ে উঠে কচু পাতার পানি। তাইতো আগে যেখানে দেখা গেছে টস হেরে ব্যাট করতে নামার পর রান করতে সংগ্রাম করতে হয়েছে। আজ সেখানে ব্যতিক্রম ছিল ভারতীয় দলের ব্যাটসম্যানরা। কোহলি রানের দেখা পেলে ভারতের ইনিংস পেটমোটা হয়ই। আর তিনি যদি সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে যান তাহলে তো কথাই নেই। সেই ইনিংস অনেক বড় হয়। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তার প্রথম সেঞ্চুরিতে (অপরাজিত ১২২) ভারত রান বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছেন আফগান বোলারদের। ২ উইকেটে ভারতের সংগ্রহ ২১২ রান। এটি এই আসরের দলগত সর্বোচ্চ রান। আগের সর্বোচ্চ ছিল হংকংয়ের বিপক্ষে পাকিস্তানের ২ উইকটে ১৯৩ রান।
আসরে এই প্রথম দেখা গেল ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের নিজেদের ছন্দে। নিয়মিত অধিনায়ক রোহিত শর্মা না থাকায় অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা লুকেশ রাহুলের সঙ্গে ইনিংসের উদ্বোধন করেন বিরাট কোহলি। আর এখানেই সফল দুইজনই। আসরে কোহলি নিয়মিত রান পেলেও রাহুল ছিলেন খরায়। আজ তিনিও রান পান। দুজনই ফিফটির দেখা পান। লুকেশ রাহুল ৩৬ বলে করেন ক্যারিয়ারের ১৭তম ফিফটি। কোহলি আসরের তৃতীয় ও ক্যারিয়ারের ৩৩তম ফিফটি তুলে নেন ৩২ বলে ২ ছক্কা ও ৫ চারে। উদ্বোধনী জুটিতে রান আসে ১২.৪ ওভারে ১১৯। চলতি আসরে উদ্বোধনী জুটিতে এটিই প্রথম শতরানের জুটি। তার আগে ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে রান আসে বিনা উইকেটে ৫২। উদ্বোধনী জুটি ভাঙে লুকেশ রাহুল ফরিদ আহমেদের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লং অনে নজিবুল্লাহ জাদরানের হাতে। ৪০ বলে ২ ছক্কা ও ৪ বাউন্ডারিতে সাজানো ছিল তার ৫৯ রানের ইনিংস। ৩৬ বলে করেন ক্যারিয়ারের ১৭তম ফিফটি। একই ওভারে ফরিদ সূর্য কুমারকেও প্লেইড অন করেন। সূর্য কুমার প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে পরের বলে আউট হয়ে যান।
একই ওভারে দুই ব্যাটসম্যানকে হারালেও ভারতের রানের চাকা মন্থর হয়নি। রিশাভ পন্তকে নিয়ে বিরাট কোহলি গতি আরও দ্রুত বাড়িয়ে নেন। এই জুটি ৭ ওভারে অবিচ্ছিন্ন থেকে ৯৭ রান যোগ করেন।
জুটিতে রান তোলার গতি পায় ১৫ ওভার শেষে। কারণ রিশাভ জুটি বাঁধার পর ১৪ ও ১৫ ওভারে রান আসে যথাক্রমে ৫ ও ৪ রান। ১৫ ওভার শেষে ভারতের রান ছিল ২ উইকেটে ১৩৪। শেষ ৫ ওভারে আসে ১১, ১৫, ১৫, ১৯ ও ১৮ করে মোট ৭৮ রান। এর ৬৩ রানই আসে কোহলির ব্যাট থকে।
কোহলি শুরুতে যতটুকু আক্রমণাত্মক ছিলেন, হাফ সেঞ্চুরির পর আরও আগ্রাসী হয়ে উঠেন। যে কারণে ৩২ বলে যেখানে এসেছিল হাফ সেঞ্চুরি, সেখানে পরের ৫০ রান আসে মাত্র ২১ বলে। তিনি কতটা আগ্রাসী ছিলেন তা তার সেঞ্চুরি হাঁকানোর ধরন দেখলেই বোঝা যায়। ৯০ রান থেকে পরপর দুই বলে চার ও ছক্কা মেরে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেন। ফ্রাঞ্চাইজি লিগে তার অবশ্য ৫টি সেঞ্চুরি আছে। কোহলি শেষ পর্যন্ত ৬১ বলে ৬ ছক্কা ও দ্বিগুণ বাউন্ডারিতে ১২২ রান করে অপরাজিত থাকেন। ৩২ বলে হাফ সেঞ্চুরি করার পর ২৯ বল খেলে করেন ৭২ রান। কোহলির নান্দনিক ব্যাটিংয়ের সময় দর্শকে পরিণত হওয়া রিশভ পন্ত ১৬ বলে ৩ চারে ২০ রান করে অপরাজিত থাকেন।
আফগানিস্তানের ইনিংসে ২ উইকেট নেওয়া ফরিদ আহমেদই সবচেয়ে বেশি ৫৭ রান দেন।
এমপি/এসজি