পাকিস্তানের জয়ে সব হিসেব-নিকেশ শেষ
পাকিস্তান-আফগানিস্তানের একটি ম্যাচ। অথচ কতটা হিসেব-নিকেশ। খেলছে দুই দল। বাইরে বসে অংক কষছে আরও দুই দল। সঙ্গে বাদবাকি অন্যরাও। আফগানিস্তান জিতলে হিসেব-নিকেশ বেড়ে যাবে। সম্ভাবনা থাকবে চার দলেরই ফাইনালে যাওয়ার। থাকবে সুপার ফোরের শেষ ম্যাচ পর্যন্ত আকর্ষণ। আর পাকিস্তানন জিতলে সব হিসেব-নিকেশ মাটি। কোনো কিছুরই প্রয়োজন হবে না। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে। টানটান উত্তেজনার ম্যাচে হিসেব-নিকেশ চুকিয়ে ৪ বল হাতে রেখে ১ উইকেটে ম্যাচ জিতে ফাইনালে উঠেছে পাকিস্তান। তাদের সঙ্গী হয়েছে শ্রীলঙ্কা। ১১ সেপ্টেম্বর দুই দলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে হবে মুখোমুখি। ২০১৪ সালে দুই দল সর্বশেষ ফাইনাল খেলেছিল। শ্রীলঙ্কা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ৫ উইকেটে ম্যাচ জিতে।
তিন কাঠির খেলায় বুঝি এমনই হয়ে থকে। যে ম্যাচে ছিল না নুন্যতম কোনো উত্তেজনা। টস জয় থেকে শুরু করে ম্যাচের কতৃত্ব ছিল পাকিস্তানের দিকে। ঘুম পাড়ানি মাসি-পিসি ছড়ার মতো ম্যাচের যবনিকা ঘটতে যাচ্ছিল। ‘যদি’র অবসান ঘটিয়ে ভারতের বিদায়। পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা ফাইনালও নিশ্চিত। এমনটি না ভাবার কোনো কারণই নেই। ১২৯ রান তাড়া করতে নেমে পাকিস্তানের রান ৩ উইকেটে ১৫.২ ওভারে ৮৭। জয়ের জন্য প্রয়োজন ৭ উইকেটে ২৮ বলে ৪০ রানের। এ আর এমন কঠিন কি? জয়তো হাতের মুঠোয়। এর চেয়ে কঠিন পরিস্থিতেও এবারের আসরে ম্যাচ জেতার কতো গল্প আছে। কিন্তু না, এ কি হলো? হঠাৎ মরুর বুকে ঝড় উঠে। বৃষ্টি ঝড় নয়, বালুর ঝড় নয়, উইকেট ঝড়। যে ঝড়ে লন্ডভন্ড পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন। পতিত হয় হারের মুখে। জয়ের আভা বিচ্ছুরিত হচ্ছে আফগানদের আকাশে। মাঠের বাইরে থেকে হোটেলে বসে কোরাস গাইছেন ভারতের ক্রিকেটাররা। তাদের ডুবে যাওয়া ‘যদি’ নির্ভর ফাইনাল খেলা আবার জেগে উঠেছে। এবার সুযোগ কাজে লাগাতেই হবে! আফগানরাও ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে শামিল হবে। তখন এ রকমটিও না ভাবার অবশ্য কোনো কারণও ছিল না। ৩ উইকেটে ৮৭ রান থেকে পাকিস্তানের রান মুহুর্তে পরিণত হয় ৮ উইকেটে ১১০। ২.৫ ওভারে ২৩ রানে নেই ৫ উইকেট। ১০ বলে করতে হবে ২০ রান। ক্রিজে ব্যাটসম্যান বলতে শুধুমাত্র আসিফ আলী। কিন্তু ফরিদ আহমেদের ওভারেই এক ছক্কা মেরে ৩ বল পর তিনিও আউট হয়ে গেলে আফগানিস্তান জয়ের আরও কাছাকাছি চলে যায়। শেষ উইকেট জুটিতে পাকিকস্তানকে করতে হবে ৭ বলে ১২ রান।
নতুন ব্যাটসম্যান মোাহম্মদ হাসনাইন এসে চলে যান নন স্ট্রাইক প্রান্তে। নাসিম শাহ ওভারের শেষ বলে ১ রান নিয়ে স্ট্রাইক ধরে রাখেন। ৬ বলে ১১ রান। আফগানদের প্রয়োজন একটি মাত্র উইকেট। নাসিম শাহর সঙ্গে অপর ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ হাসনাইন। এই আসরে অভিষেক হওয়া নাসিম শাহ একটি মাত্র ম্যাচে ব্যাট করার সুযোগ পেয়ে কোনো রান করতে পারেননি। মোহাম্মদ হাসনাইন ৬ ইনিংসে ব্যাট করলেও রান করেছেন ৫। কাজেই এই দুই ব্যাটসম্যানের যে কোনো একজনকে আউট করা দুর্দান্তভাবে ম্যাচে ফিরে আসা আফগান বোলারদের জন্য খুব কঠিন হবে না। ব্যস, তা’হলেই নতুন করে প্রাণ পাবে এবারের আসর। অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী শেষ ওভার তুলে দেন ম্যাচের সেরা বোলার ফজলহক ফারকীর হাতে। যিনি এর আগে ৩ ওভারে ১৯ রান দিয়ে তুলে নিয়েছেন ৩ উইকেট। ওভারের প্রথম বলটি তিনি ইয়র্কার দিতে গিয়ে মিস করেন। হয়ে যায় ফুলটস। নাসিম শাহ সোজা ব্যাচ চালিয়ে হাওয়া ভাসিয়ে সীমানা পার করে দেন। টার্গেট নেমে আসে ৫ বরে ৫ রানে। তারপরও ম্যাচ আফগানদের হাতে। শুধুমাত্র উইকেটটি প্রয়োজন। ৫ বলের যে কোনো একটি থেকে তা চলে আসতে পারে। পরের বলও আবার ফজলহক ফারকী ইয়র্কার দিতে গিয়ে ব্যর্থ হন। নাসিম শাহ আবারও হাওয়া ভাসিয়ে দিয়ে খেলা শেষ করে দিয়ে শুরু করেন নৃত্যানন্দ। শেষ হয় আসরে আরেকটি নাটকীয় ম্যাচের। মাত্র ৪ বলে সাড়ে তিনশ স্ট্রাইক রেটে ১৪ রা করে অপরাজিত থাকেন। মোহাম্মদ হাসনাইন কোনো বলই খেলার সুযোগ পাননি।
১৫ ওভার শেষে খেলার যে নাটকীয়তা, তার আগে কিন্তু ম্যাচের সহজ সমাপ্তির দিকে নিয়ে গিয়েছিলেন ইফতেখার আহমেদ ও সাদাব খান। দুর্দান্ত ফর্ম নিয়ে এশিয়া কাপ খেলতে আসা পাক দলপতি বাবর আজম ব্যর্থার ধারাবাহিকতা ধরে রেখে এই ম্যাচে কোনো রানই করতে না পেরে আউট হয়ে যান। তাকে অনুসরন করেন ফখর জামানও ৫ রানে রান আউট হয়ে। আগের ম্যাচগুলোতে এ রকম পরিস্থিতে মোহাম্মদ রিজওয়ান হাল ধরতেন। এই ম্যাচে তিনিও ফিরে যান ২০ রান করে রশিদ খানের বলে। পাকিস্তানের রান তখন ৮.৪ ওভারে ৩ উইকেটে ৪৫। এরপর ইফতেখার ও সাদাব খান হার ধরে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। জুটিতে ৪২ রান আসে ৬.৫ ওভারে। এ সময় ইফতেখার ৩৩ বলে ৩০ রান করে আউট হওয়ার পর শুরু হয় নাটকীয়তা। দলীয় ৯৭ রানে সাদাব খান ২৬ বলে ৩ ছক্কা ও ১ চারে ৩৬ রান করে ফিরে গেলে শুরু হয় চূড়ান্ত অ্যাকশন। যার সমাপ্তি আসে নাসিম শাহর হাত ধরে। ফজলহক ফারকী ও ফারক আহমেদ দুই জনেই ৩১ রান করে দিয়ে ৩টি করে উইকেট নেন। রশিদ খান ২৫ রানে নেন ২ উইকেট। ম্যাচ সেরা হন সাদাব খান।
এমপি/এএস