ভারতকে শঙ্কায় ফেলে ফাইনালের পথে শ্রীলঙ্কা
ঝুলে গেল ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল। শ্রীলঙ্কার কাছে ৬ উইকেটে হেরে ভারতের ফাইনালে খেলা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে পড়েছে। টানটান উত্তেজনার ম্যাচে ভারতের ৮ উইকেটে করা ১৭৩ রান শ্রীলঙ্কা পাড়ি দেয় ১ বল ও ৬ উইকেট হাতে রেখে আগমীকাল বুধবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে পাকিস্তান জয়ী হলে ভারতের আর কোনো সম্ভাবনাই থাকবে না। সুপার ফোরে শ্রীলঙ্কার এটি ছিল দ্বিতীয় জয়। প্রথম ম্যাচে তারা আফগানিস্তাননকে ৪ উইকেটে হারিয়েছিল। ভারত ৫ উইকেটে হেরেছিল পাকিস্তানের কাছে।
এশিয়া কাপের এবারের আসরে শ্রীলঙ্কা এই নিয়ে টানা তিনটি ম্যাটে জিতেছে টস জিতে রান তাড়া করে। বাংলাদেশর বিপক্ষে ১৮৩ রান, আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১৭৫ রান তাড়া করে জেতার পর আজ ভারতের ৮ উইকেটে করা ১৭৩ রান অতিক্রম করল।
খেলা শেষ ওভার পর্যন্ত গড়িয়েছে। এমন কি শেষ বল পর্যন্ত গড়াতে পারতো। এবারের আসরে অধিকাংশ ম্যাচই হয়েছে টানটান উত্তেজনার। কিন্তু কোনো ম্যাচই শেষ বল পর্যন্ত গড়ায়নি। আজকের ম্যাচে সেই সম্ভাবনা ছিল। শেষ দুই ওভারে শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন ছিল ২১ রানের।
ভুবনেশ্বর কুমারের করা ১৯ নম্বার ওভার থেকে ১৪ রান নিয়ে শ্রীলঙ্কা শেষ ওভারে টার্গেট নামিয়ে আনে ৭ রানে। মনে হয়িছল শ্রীলঙ্কা সহজেই জিতে যাবে। কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে সহজ ক্যাচ ছেড়ে ট্রলের শিকার হওয়া আর্শদীপ সিংয়ের আঁটোসাঁটো বোলিংয়ে দারুণভাবে জমে উঠে ম্যাচ। প্রথম ৪ বলে আসে ৫ রান। ফলে শেষ ২ বলে প্রয়োজনে পড়ে ২ রানের।
পঞ্চম বলে অধিনায়ক দাসুন শানাকা ব্যাটে-বলে লাগাতে পারেননি। বল চলে যায় সোজা উইকেট কিপার রিশভ পন্তের হাতে। ১ রানও হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তারপরও ঝুঁকি পূর্ণ রান নিতে ব্যাটসম্যানরা প্রান্ত বদলের জন্য দৌড় দেন। তিনটি স্ট্যাম্প সামনে থাকার পরও ভানুকা রাজাপাকসকে আউট করতে পারেননি রিশভ।
তখন অপর ব্যাটসম্যান দাসুনকে রানআউট করার জন্য আর্শদীপ নন স্ট্রাইক প্রান্তের বল ছুড়ে মারেন। কিন্তু তিনিও স্ট্যাম্পে লাগাতে পারেননি। রান আউট থেকে বাঁচতে দাসুনের হাত থেকে ব্যাট পড়ে যায়। দ্বিতীয় রানের জন্য তিনি ব্যাট ফেলেই উল্লাস করতে করতে প্রান্ত বদল করেন।
ম্যাচের শেষের দিকে যে ক্লাইমেক্স তৈরি হয়েছে, শ্রীলঙ্কার ইনিংসের শুরুতে কিন্তু তার আলামত ছিল না। দুই ওপেনার পাথুন নিশানাকা ও কুশাল মেন্ডিস উদ্বোধনী জুটিতেই ১১.১ ওভারে ৯৭ রান এনে দিয়ে বড় জয়ের রাস্তা তৈরি করে দিয়েছিলেন। ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে রান এসেছিল ৫৭। কিন্তু ৪ বলের ব্যবধানে দলয়ি ৯৭ রানে পাথুনের পর চারিথ আসালাঙ্কা (০) আউট হলে এবং পরে কুশাল মেন্ডিসও ফিরে গেলে লঙ্কানদের রান সংগ্রহে ভাটা পড়ে।
এ সময় দলের রান ছিল ১৪.১ ওভারে ১১০। মেন্ডিস আউট হওয়ার আগে ১ রানে ফিরে যান দানুশকা গুনাতিলকেও। এই চারটি উইকেটের তিনটিটি নেন যুভেন্দ্র চায়াল। পাথুন ও কুশাল দুই জনেই হাফ সেঞ্চুরি করে আউট হন। দুই জনেই ৩৭ বল করে খেলে পাথুন ৫২ ও কুশাল ৫৭ রানে আউট। কুশালের এটি ছিল আসরের দ্বিতীয় ও ক্যারিয়ারের অষ্টম এবং পাথুনের আসরের প্রথম ও ক্যারিয়ারের ষষ্ট হাফ সেঞ্চুরি।
বিনা উইকটে ৯৭ রান থেকে ৪ উইকটে ১১০ রান। শ্রীলঙ্কা বেশ চাপে পড়ে যায়। তখন তাদের জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে ৩৫ বলে ৬৪ রানের। কিন্তু এই চাপকে আর বাড়তে দেননি ভানুকা রাজাপাকসে ও দাসুন শানাকা। তারা ৩৪ বলে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ৬৪ রান সংগ্রহ করেন। রাজাপাকসে ১৭ বলে ১৭ বকলে ২ ছক্কায় ২৫ ও শানাকা ১৮ বলে ১ ছক্কা ও ৪ বাউন্ডারিতে ৩৩ রান করে অপরাজিত থাকেন।
৩৩ রানের অপরাজিত ইনিংসের সঙ্গে বল হাতে ২ ওভারে ২৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন দাসুন শানাকা। এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে ভারত। পাওয়ার প্লেতেই আসরের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান কোহলিসহ (০) লুকেশ রাহুলকে (৬) হারায়। তারপরও রোহিত শর্মার মারমুখি ব্যাটংয়ে ভারতের রান ছিল ৬ ওভার শেষে ২ উইকেটে ৪৪।
পরবর্তীতে এই রোহিত শর্মার ব্যাটে ভর করেই ভারত মজবুত সংগ্রহ করে। তৃতীয় উইকেট জুটিতে সূর্য কুমার যাদবকে নিয়ে তিনি ৯.৪ ওভারে ৯৭ রান যোগ করেন। জুটি ভাঙ্গে রোহিত ৭২ রান করে চামিকা করুনারতেœর বলে নিশাঙ্কার হাতে ধরা পড়লে। তার ৪১ বলের ইনিংসে ছিল ৪টি ছক্কা ও ৫টি চার।
বিপর্যয় কাটিয়ে রোহিত ভীত মজবুত করে দিলেও শেষ ৫ ওভারে বেশি রান সংগ্রহ করতে পারেনি ভারত। ৪ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে ৪৫ রান। শ্রীলঙ্কার হয়ে দিলশান মাদুশঙ্কা ২৪ রানে ৩ উইকেট। ২টি করে উইকেট নেন চামিকা করুনারতে ও দাসুন শানাকা।
এমপি/এএজেড