নো আর ওয়াইড বলেই শেষ বাংলাদেশের আশা
দুই দলের জন্যই মরণ লড়াই। মৃত্যুকূপে দাঁড়িয়ে। জয় মানেই টিকে থাকা। হার মানেই রিটার্ন টিকেট নিয়ে বিমানে চড়ে দেশে ফিরে যাওয়া। এমন সমীকরণের ম্যাচে বাংলাদেশ ৭ উইকেটে ১৮৩ রান করেও জিততে পারেনি। আসলে বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কা হারায়নি। নিজেরাই হেরেছে।
ওয়াইড আর নো বলের ছড়াছড়িতে ম্যাচ নিজেরাই হাতছাড়া করেছে। ৬টি ওয়াইড আর ৪টি নো বলে বাংলাদেশকে ১০টি বল বেশি করতে হয়েছে। ১০ বলে এমনিতেই ১০ রান বেশি এসেছে। ওয়াইড বল থেকে এসেছে বাড়তি ২ রান। আবার নো বল ও ফ্রি হিট থেকে এসেছে আরও ১০ রান। সর্বমোট ২২ রান। এর ফলে শেষ ওভারে আবার বাংলাদেশকে পেনাল্টি দিতে হয় ৩০ গজ বৃত্তের বাইরে ৫ জনের পরিবর্তে ৪ জন ফিল্ডার রেখে। দ্বিতীয় বলে তারা সহজেই বাউন্ডারি বের করে নিয়েছে। আর এখানেই শেষ হয়ে গেছে আফগানিস্তানের মতো হাতের মুঠোয় থাকা ম্যাচ। এমনকি জয়সূচক রানও এসেছে নো বল থেকে। ফলে শ্রীলঙ্কা ৪ বল হাতে রেখেই ২ উইকেটে ম্যাচ জিতে বাংলাদেশের বিদায় ঘণ্টা বাজিয়ে পৌঁছে গেছে সুপার ফোরে।
সময় খারাপ গেলে যা হয়। সবকিছুই প্রতিকূলে থাকে। বাংলাদেশেরও যেন অবস্থা হয়েছে অনেকটা সেরকমই। ব্যর্থতার পাল্লা ভারী করতে কোথাও না কোথাও একটা সমস্যা থেকেই যাবে। এবার যেমন ছিল ওয়াইড আর নো বল। শ্রীলঙ্কার ইনিংসে একটিও নো কিংবা ওয়াইড বল ছিল না। নতুবা ৭ উইকেটে ১৮৩ রানের পুঁজি নিয়ে লঙ্কানদের ৭৭ রানে ৪ উইকেট ফেলে দেওয়ার পরও সেই ম্যাচ হাতছাড়া হওয়াটা ছিল বেদনায়ক।
অভিষিক্ত এবাদতই বাংলাদেশকে আশা দেখিয়েছিলেন। আবার তিনিই ওয়াইড আর নো বলের ছড়াছড়িতে তরী ডুবিয়েছেন। তিনি একাই দিয়েছেন ৬টি ওয়াইড ও ২টি নো বল। প্রতি ওভারেই হয় ওয়াইড, না হয় নো বল করেছেন। কোনো কোনো ওভারে দুইটিরই মিলন ঘটিয়েছেন। প্রথম ওভারেই দুই উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন এবাদত। এসময় লঙ্কানদের দুই ওপেনার পাথুন নিশাঙ্কা ও কুশাল মেন্ডিস ছুটছিলেন ঊর্ধ্বগতিতে। তার শিকার ছিলেন পাথুন (২০) ও চারিথা আশালাঙ্কা (১)। পরের ওভারে আবার দানুশকা গুনারত্নেকে (১১) ফিরিয়ে দিয়ে ম্যাচে বাংলাদেশের সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব স্থাপন করেছিলেন এবাদত। ২ ওভারে ১৩ রানে ৩ উইকেট। স্বপ্নের মতো শুরু। সেই সঙ্গে বাংলাদেশেরও আসরে টিকে থাকার স্বপ্ন বাস্তবায়ন শুরু হয়। প্রথম ওভারে একটি ও দ্বিতীয় ওভারে দুইটি ওয়াইড বল দিয়েছিলেন তিনি। সেই এবাদত যখন ৪ ওভার পর আবার আক্রমণে ফিরে আসেন, তখন তার অগ্নি স্ফুলিঙ্গ আর থাকেনি। তার তৃতীয় ওভার শুরুই করেন ওয়াইড বল দিয়ে। সেই ওভারে তিনি দুইটি ওয়াইড ও একটি নো বল দেন। হজম করেন দুইটি ছক্কা। রান আসে ২২। আবার আসেন ১৯ নম্বর ওভারে। লঙ্কানদের প্রয়োজন ১২ বলে ২৫ রানের। কিন্তু তিনি ওয়াইড আর নো বল মিলিয়ে ১৭ রান দেন। সবচেয়ে ক্ষতিকর ছিল শেষ বলটি ওয়াইড করাটা। পরের বলে বাউন্ডারি মেরে শেষ ওভারে তারা রানকে ৮-এ নামিয়ে আনেন।
এত গেল এবাদত পর্ব। এবার আসা যাক শেখ মেহেদী হাসান পর্বে। তার তৃতীয় বলে ২ রান নিয়ে স্কোর সমান হয়ে যায়। যখন শেখ মেহেদী বল করার জন্য প্রস্ততি নিচ্ছেন। আশিতা প্রস্তুত হচ্ছেন স্ট্রাইক নেওয়ার জন্য, তখনই আম্পায়ার ঘোষণা দেন নো বল। সঙ্গে ফ্রি হিট। কিন্তু ফ্রি হিট আর করতে হয়নি। নো বল থেকেই চলে আসে জয়সূচক রান। তবে তার নো বলের চড়া মাশুল দিতে হয়েছে লঙ্কানদের ইনিংসকে প্রায় একাই টেনে নিয়ে যাওয়া ওপেনার কুশাল মেন্ডিস।
এবাদত উইকেট পাওয়ার পরই বাংলাদেশের পেসাররা জ্বলে উঠেন। এবাদত তিনটি উইকেটই নিয়েছিলেন শর্ট বল করে। তাসকিন-মোস্তাফিজও একই পথে সফল হন। তাসকিন দুইটি ও মোস্তাফিজ একটি উইকেট নেন। মোস্তাফিজের শিকার ছিলেন কুশাল মেন্ডিস। তিনি মাত্র ৩৭ বলে তিনটি ছক্কা ও চারটি চারে ৬০ রান করেন। কিন্তু ২৯ রানেই তিনি আউট হয়ে গিয়েছিলেন শেখ মেহেদীর বলে সুইপ করতে গিয়ে। ফিরেও যাচ্ছিলেন। নো বল হওয়ায় তিনি ফিরে আসেন। সেসময় তিনি ফিরে গেলে লঙ্কানদের ইনিংস অনেক আগেই গুটিয়ে যেতে পারত। মোট ৪ বার তিনি জীবন পান। ২৯ রান ছাড়াও ২, ৩১, ৪৪ রানে জীবন পেয়ে জয়ে রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। পরে হন ম্যাচ সেরা।
এদিন বাংলাদেশের ফিল্ডিং ছিল প্রশংসনীয়। পেসারদের শট বলে উঠা ক্যাচগুলোর অনেকটি ছিল বেশ কঠিন। কিন্তু সব কিছু ভেস্তে গেছে হেরে বিদায় নেওয়ার মাধ্যমে।
বাংলাদেশের হারে সাকিবের নেতৃত্বও আবার ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। আবারও তিনি ১২ ওভারের মাঝে নিজের কোটা শেষ করে ফেলেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে এভাবে শেষ করার পর শেষের দিকে গিয়ে পেসাররা বেধড়ক মার খেয়েছিলেন। কিন্তু সেসময় সাকিব নিজের এক ওভার রেখে দিলে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারতেন। আজও অনেকটা সেরকম পরিস্থিতি ছিল। যে কারণে ১৯তম ওভার এবাদতকে দিয়ে আর ১৮ ও শেষ ওভার শেখ মেহেদী হাসানকে দিয়ে করাতে হয়েছে। এসময় লঙ্কানদের প্রয়োজন ছিল ৪ উইকেটে ৩৪ রান। শেখ মেহেদীর ওভারে ৯ রান নেওয়ার পর এবাদতের ওভারে আসে ১৭ রান। শেষ ওভারে দরকারি ৮ রান তারা সংগ্রহ করে নেয় ৩ বলেই।
এমপি/এসজি