সিদ্ধান্ত কী ভুল ছিল বাংলাদেশের?
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যর্থতার জাল ছিন্ন করার জন্য এশিয়া কাপকে বেছে নেয়া হয়েছে বাংলাদেশের দিন বদলের গান হিসেবে। সেই গানে সুর দেয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু শেষ আর করা যায়নি। তাই গাওয়া হয়নি গান। ১২৭ রান করেও যে বাংলাদেশ ম্যাচকে নিজেদের গ্রিপে নিয়ে নেবে। ১৬ ওভার পর্যন্ত থাকবে জয়ের পথে। তা ছিল অকল্পনীয়। এরপর নজিবুল্লাহ জাদরানের তোপে পড়ে হারিয়ে ফেলে পথ। যে ম্যাচ জেতারই কথা নয় আফগানদের, সেই ম্যাচ তারা ৭ উইকেটে জিতে নেয় ৯ বল হাতে রেখে। শেষ ২৪ বলে যেখানে তাদের প্রয়োজন ছিল ৪৩ রানের, সেই রানা তারা করে ১৫ বলে। এমন ম্যাচও বাংলাদেশ হেরে গেল? কোথায় হারল? কেন হারল? চলছে তার চুল চেরা বিশ্লেষণ।
তাহলে কী বাংলাদেশ টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা ছিল ভুল? একাদশে দুই স্পিনার খেলানোও কী ছিল ভুল?
হাতে ৩ উইকেটে রেখে স্কোর বোর্ডে ১২৭ রান জমা হলে ভুলই মনে হওয়ারই কথা। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বিসিবির সাবেক পরিচালক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু সেভাবে দেখছেন না বিষয়টিকে। তিনি বলেন, ‘টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশ এমনিতেই ভালো দল নয়। আবার সেখানে জিম্বাবুয়ের কাছে হারের পর অবস্থা আরও বেশি নাজুক হয়ে গেছে। দলের মনোবল দূর্বল হয়ে পড়েছে। এ রকম অবস্থায় আফগানিস্তানের মতো দলের বিপক্ষে রান তাড়া করে জেতার মতো মানসিক জোরের অভাব ছিল। তাই টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়াটাকে আমি ভুল বলব না। তবে রান একটু কম হয়ে গেছে। ১৫০ রান হলে ভালো হতো।’ জাতীয় দলের সাবেক ব্যাটসম্যান তুষার ইমরান বলেন, ‘ব্যাটিং নেয়ার সিদ্ধান্ত ঠিকই ছিল। রানটা কম হয়ে গেছে। উইকেট স্লো ছিল। বল একটু ধীরে ব্যাটে এসেছে। ব্যাটিংয়ের অ্যাপ্রোচে ভুল ছিল। সোজা খেললে ভালো হতো।’
শারজাহে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সেরা একাদশ গঠনে ভুল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলতে নেমেছিল একাদশে দুই পেসার নিয়ে। যেখানে শ্রীলঙ্কা খেলেছিল চার পেসার নিয়ে। স্পিন সহায়ক মনে করে একাদশে তিন স্পিনার নিয়ে খেলার পরও ম্যাচ বাংলাদেশ মাহমুদউল্লাহ ও আফিফকে দিয়েও বোলিং করিয়েছিল। কিন্তু তারপরও নিজেদের করা ১৭১ রান রক্ষা করতে পারেনি। উইন্ডিজের বিপক্ষে করে আবার ভুল। এবার সেরা একাদশে রাখা হয় তিন পেসার। পিচ দেখে মনে করা হয়েছিল পেস বান্ধব হবে। কিন্তু তা ভুল প্রমাণ হয়। উইন্ডিজ সেরা একাদশে রাখে তিন স্পিনার। ফলে উইন্ডিজকে ১৪২ রানে আটকে রেখেও ম্যাচ জিততে পারেনি বাংলাদেশ।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ খেলতে নেমেছিল তিন পেসার ও দুই স্পিনার নিয়ে। আফগানরা খেলেছে তিন স্পিনার নিয়ে। তাদের দুই স্পিনার মুজিবুর রহমান ও রশিদ খানই ধ্বংস করে দেন বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন। দুই জনেই ৪ ওভার করে বোলিং করে যথাক্রমে ১৬ ও ২২ রানে নেন তিনটি করে উইকেট। আরেক স্পিনার অধিনায়ক মোহাম্মদ নবী ৩ ওভারে ২৩ রান দিয়ে অবশ্য কোন উইকেট পাননি। বাংলাদেশের সাকিব ছিলেন আরও বেশি কৃপন। তিনি ৪ ওভারে মাত্র ১৩ রান দিয়ে নেন এক উইকেট। শেখ মেহেদি ৪ ওভারে রান দেন ২৬। স্পিনারদের কৃপনতায় মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও হাত ঘুরিয়েছিলেন। আফগানাদের জয় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর শেষ ওভার করার আগে ২ ওভার রান দিয়েছিলেন মাত্র ৬। সেখানে পেসাররা ছিলেন অমিতব্যয়ী। মোস্তাফিজ ৩ ওভারে ৩০, তাসকিন ৩ ওভারে ২২ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ২ ওভারে ২৭ রান দেন। গাজী আশরাফ হোসেন লিপু মনে করেন একজন স্পিনার কম খেলানো হয়েছে। তবে তিন পেসার আবার ঠিক ছিল বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘বিজয়, নাইম, মুশফিক, রিয়াদ, সৈকত এদের যে কোনো একজন ব্যাটসম্যান কম খেলিয়ে একজন স্পিনার বেশি খেলানো যেত।’ পেসার তিনজন খেলানো বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দুবাইয়ে যে গরম, তাতে করে পেসারদের কোটা পূরণ করা কঠিনই। কারণ এ রকম গরমে যে কোন সময় যে কারও ক্রাম্প করতে পারতো।’ তুষার ইমরান বলেন, ‘তিন পেসার খেলানো ঠিকই আছে। ১৬ ওভার পর্যন্ত ম্যাচতো আমাদের হাতেই ছিল। ওদের হাতে উইকেট থাকাতে ওরা সুযোগ নিয়েছে। কাজে লেগে গেছে।’
এমপি/এএস