লড়াই করে হারল বাংলাদেশ!
টি-টোয়েন্টি রানের খেলা। ব্যাটসম্যানরা যদি মাত্র ১২৭ রানের পূঁজি তুলে দেন বোলারদের হাতে, সেখানে তাদের করার আর কী থাকে? তারপরও আফগানিস্তানকে ছেড়ে কথা বলেননি বাংলাদেশের বোলাররা। ১৮.৩ ওভার পর্যন্ত খেলাকে নিয়ে যান। অবশেষে আফগানরা ম্যাচ জিতে ৭ উইকেটে। তিন উইকেট হারিয়ে তারা করে ১৩১ রান। দুই ম্যাচে জিতে প্রথম দল হিসেবে আসরে সুপার ফোরে উঠে গেছে গোলা-বারুদের সঙ্গে বসবাস করা দেশটি। হারলেও বাংলাদেশের সুপার ফোরে যাওয়ার সম্ভাবনা বহাল তবিয়তেই আছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ১ সেপ্টেম্বরের ম্যাচ দুই দলের জন্য অলিখিত সেমি ফাইনাল। যে দল জিতবে তারাই 'বি' গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় দল হিসেবে যাবে সুপার ফোরে।
আফগানিস্তান ৯ বল হাতে রেখে ম্যাচ জিতলেও এভাবে যে তারা ম্যাচ জিততে পারবে তা কিন্তু ম্যাচের ১৫ ওভার পর্যন্ত আন্দাজ করা যায়নি। এ সময় ম্যাচ বাংলাদেশের দিকেই বেশি হেলে ছিল। আফগানিস্তানের রান ছিল ৩ উইকেটে ৭৬। শেষ ৫ ওভারে করতে হবে ৫২ রান। ১৬ ওভার শেষে টিভি স্ক্রিনে ভেসে উঠে ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা শতকরা ৭২ ভাগ। তখন আফগানিস্তানের প্রয়োজন ৪৩ রানের। কিন্তু এরপরই দ্রুত ম্যাচের গতিপথ পরিবর্তন হতে থাকে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে ভরসার জায়গা মোস্তাফিজ। তার হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন অধিনায়ক সাকিব। যদি উইকেট তুলে নিতে পারেন। আর না পারলেও রান চেক দিতেতো পারবেন! কিন্তু হয়ে যায় বুমেরাং। মোস্তাফিজের উপর চড়াও হন নজিবুল্লাহ জাদরান। দুইটি ওয়াইডসহ ৮ বলের ওভারে দুই ছক্কাতে ১৭ রান দেন মোস্তাফিজ। কিন্তু এখানেই শেষ নয়।
প্রথম ওভারেই উইকেট পাওয়া মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনকে তার দ্বিতীয় ওভার করার জন্য সাকিব নিয়ে আসেন ১৮ নম্বর ওভারে। এই ওভারে আরও ধ্বংস হয়ে যায় বাংলাদেশ। দুটি করে ছক্কা ও চারে তিনি দেন ২২ রান। কোথায় ২৪ বলে ৪৩ রানের প্রয়োজন ছিল। সেখানে আফগানদের টার্গেট নেমে আসে ১২ বলে ৪ রানে। হঠাৎ করে ছক্কায় নেশায় পেয়ে বসা নজিবুল্লাহ জয়সূচক রান করেন মোসাদ্দেকের ওভারে ছক্কায়।
মাত্র ১৭ বলে ছয় ছক্কা ও এক চারে তিনি ৪৩ রান করে অপরাজিত থাকেন। ইনিংসের সবকটি ছক্কাই এসেছে তার ব্যাট থেকে। অথচ ৬৯ রান যোগ করেন মাত্র ৫.৩ ওভারে। নজিবকুল্লাহ যখন বিধ্বংসী কামান চালাচ্ছিলেন,তখন ইব্রাহীম অনেকটা দর্শকে পরিণত হয়েছিলেন। নজিবুল্লাহ যখন ক্রিজে আসেন তখন ইব্রাহীমের রান ছিল ২৫ বলে ১৯। শেষ পর্যন্ত তিনি ৪১ বলে ৪২ রান করে অপরাজিত থাকেন।
নজিবুল্লাহ-ইব্রাহীম জুটি বাধার আগে সাকিব-শেখ মেহেদি-তাসকিন-মোসাদ্দেক-সাইফউদ্দিন মিলে আফগানদের বেশ চেপেই ধরেছিলেন। ১২৭ রান করেও বাংলাদেশের জয়ের পাল্লা ভারী করে তুলেছিলেন। ব্যাটিং পাওয়ার প্লেতে মাত্র ২৯ রান দেন তারা। বিনিময়ে তুলে নেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আগ্রাসী ব্যাটিং করা রহমতউল্লাহ গুরবাজকে। সাকিবের বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলতে গেলে মুশফিক তাকে স্টাম্পিং করেন। ১৮ বলে ১১ রান করেন তিনি। হযরতউল্লাহ জাজাইও রানের চাকা সচল করতে পারেননি।
মোসাদ্দেকের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন ২৬ বরে ২৩ রান করে। মোহাম্মদ নবীকেও সাইফউদ্দিন বল হাতে নিয়েই এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন ৮ রানে (৯ বল)। এই তিন জনেরই স্ট্রাইক রেট ছিল একশর নিচে। ১০ ওভার শেষে তাদের রান ছিল ২ উইকেট ৪৮। ১৫ ওভার শেষে ৩ উইকেটে ৭৬। সেখানে বাংলাদেশের রান ছিল ১০ ওভারে ৪ উইকেটে ৫০, ১৫ ওভারে ৫ উইকেটে ৮৭। কিন্তু সব কিছু এলোমেলো হয়ে যায় মোস্তাফিজের করা ১৭ নম্বর ওভার থেকে।
আফগানরা যেমন শুরুতে রান করতে ভুগেছে, তেমনি টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাও। মুজিবুর রহমান তার করা ২, ৪ ও ৬ নম্বারে ওভারে দুই ওপেনার নাঈম (৮ বলে ৬ রান), এনামুলসহ (১৪ বলে ৫ রান) সাকিবের (৯ বলে ১১ রান) উইকেট নিয়ে যেন বাংলাদেশের ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেওয়াটাকে ভুল প্রমাণ করে দিচ্ছিলেন। এ সময় দলের রান ছিল মাত্র ২৪।
পাওয়ার প্লে শেষে প্রথম ওভারেই রশিদ খান বল হাতে নিয়ে মুশফিকুর রহিমকেও (৪ বলে ১ রান) ফিরিয়ে দিলে ধ্রুব সত্য হয়ে যায় টস জিতে বাংলাদেশের ব্যাটিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল ভুল! ২৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে রীতিমতো ধুকছে বাংলাদেশ। এই ঝড়ের সামাল দেন অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ সহ-অধিনায়ক আফিফকে নিয়ে। কিন্তু খুব বেশি দূর তারা যেতে পারেননি। রশিদ খান বিরতি দিয়ে তার দ্বিতীয় ওভার করতে এসে আফিফকে (১৪ বলে ১২ রান) ফিরিয়ে দিলে বাংলাদেশের প্রতিরোধের দেয়ালে আবার আঘাত হানেন।
দলের রান তখন ১০.৩ ওভারে ৫ উইকেটে মাত্র ৫৩। সেখান থেকে দলের রান ৭ উইকেটে ১২৭ পর্যন্ত যাওয়ার মূল নায়ক মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তিনি ৩১ বলে এ ইনিংসের একমাত্র ছক্কা ও চার বাউন্ডারিতে অপরাজিত ৪৮ রানের ইনিংস খেলেন। এ সময় তাকে সহায়তা করেন মাহমুদউল্লাহ (২৭ বলে ২৫ রান), শেখ মেহেদি (১২ বলে ১৪ রান)। বাংলাদেশের ইনিংসে ডট বল ছিল ৪৪টি। মুজিবুর রহমান ১৬ রানে ৩ উইকেট নিয়ে হন ম্যাচ সেরা। রশিদ খান ৩ উইকেট নেন ২২ রানে।
এমপি/আরএ/এএজেড